বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সার্বিক ব্যবস্থাপনা
2021-04-11 19:35:28

 

নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো দেশের করোনা পরিস্থিতি। মার্চ মাস থেকে দেশে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সবশেষ ৪ থেকে ১০ এপ্রিল ৫৭তম সপ্তাহে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। এ সময়ে মারা গেছেন ৪৪৮ জন। ১০ এপ্রিল একদিনে মারা যান ৭৭ জন। এর ঠিক একমাস আগে ১০ মার্চ মারা গিয়েছিলেন মাত্র ৭ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে করোনায় দৈনিক মৃত্যু বেড়েছে ১১ গুণ।

একই সময়ে সংক্রমণ হারও বেড়েছে মারাত্মকভাবে। গত জানুয়ারির দিকে একটানা কয়েক সপ্তাহ সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল। এ হার ২ শতাংশেও নেমে এসেছিল। কিন্তু মার্চ থেকে তা আবার বাড়তে বাড়তে এখন সংক্রমণ হার দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশের ওপরে। রাজধানী ঢাকার ১৯টি এলাকার সংক্রমণ হার ৩১ শতাংশের ওপরে। শুধু রাজধানী নয়,সারাদেশেরই পরিস্থিতি ভয়াবহ।

করোনা প্রায় নিয়ন্ত্রণে আসার পরও এর দ্বিতীয় ধাক্কা এত তীব্র আর ভয়াবহ হবে কেউ হয়তো আশা করেননি। যদিও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বরাবরই সতর্ক করে গেছেন। কিন্তু জনগণ গা করেনি এ সব সতর্কবার্তায়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের এক জরিপে দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি না মানাই কাল হয়েছে আমাদের জন্য। সংস্থাটি ৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাড়ে ৮ হাজার করোনা রোগীর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে,করোনা আক্রান্তদের ৬১ শতাংশ গণপরিবহন ব্যবহার করেছেন এবং হাট-বাজার বা শপিংমলে গেছেন। ৩০ শতাংশ আক্রা্ন্ত মানুষ জনসমাগম হয় এমন স্থানে এবং উপাসনালয়ে গেছেন। এ ছাড়া, সভাসেমিনার, সামাজিক অনুষ্ঠান,পর্যটন এমনকি স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়েও আক্রান্ত হয়েছেন একটা উল্লেখযোগ্য অংশ।

এত এত নতুন রোগী সামলাতে সঙ্গতকারণেই হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলো। আইসিইউ’র সঙ্কট তো রয়েছেই। সাধারণ বেডও মিলছে না। আইইডিসিআরের হিসাব মতে দেশে বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে ৬ হাজারের কম রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অর্থাৎ এর বাইরে ৯০ হাজারের বেশি রোগী বাসায় থেকে নিজস্ব উদ্যোগে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালে সব করোনা রোগীর যাবার দরকার হয় না-এ কথা ঠিক। তাছাড়া হাসপাতাল ভর্তি দরকার এমন রোগীও তো সিট পাচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে অনেককে বাসায়ই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বাসায় যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে কি না-এ বিষয়টা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকি আরও জোরদার করা দরকার। কোনো রোগীর জরুরি পরিস্থিতি দেখা দিলে তখন অ্যাম্বুলেন্স এবং হাসপাতালে ভর্তির মতো বিষয়ে বন্ধোবস্ত রাখতে হবে স্বাস্থ্যবিভাগকে।

এদিকে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা- হয়েছে লকডাউন। যদিও চলমান লকডাউন নিয়ে কর্তৃপক্ষের নানা সিদ্ধান্তহীনতায় তা প্রায় অকার্যর হয়েছে। করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন আসছে। করোনার ভায়বহ বিস্তার ঠেকাতে এ মুহূর্তে হয়তো এর বিকল্প নেই।

কিন্তু লকডাউনে শুধু তো অর্থনীতির ক্ষতি হয় তা নয়। দেশের লাখ লাখ পরিবার দিনে এনে দিনে খায়। লকডাউনে তাদের খাবারে ব্যবস্থা যদি না করা যায় তবে যত কঠোর লকডাউনই দেয়া হোক ক্ষুধার্ত মানুষগুলো বেরিয়ে আসবে ঘর থেকে। পত্রিকান্তরে খবর এসেছে ৬ মাস তাদের ভাতা পাচ্ছেন না ৭৬ লাখ দরিদ্র মানুষ। কারণ ডিজিটাইজেশন সময় লাগছে। এদিকে করোনা দুর্গতদের সহায়তার জন্য সরকারে বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে। ৫০ লাখ পরিবারকে গত বছর সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হলেও একটা বড় অংশের কাছ পৌঁছানো যায়নি অর্থ। শ্রমিকদে জন্য বরাদ্দ দেড় হাজার কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে দরিদ্রদের জন্য তহবিল বরাদ্দ রয়েছে এখন শুধু যথাযথভাবে দ্রুততার সঙ্গে অর্থ গরীব মানুষের হাতে পৌঁছাতে হবে। এ জন্য আগামী ঈদ পর্যন্ত বসে থাকলে চলবে না। লকডাউন কার্যকর করতে এবং হতদরিদ্র মানুষকে একটু বাঁচার বন্দোবস্ত করতেই খুব দ্রুত এ কাজটি করতে হবে।

আশার কথা সরকার এরই মধ্যে ৬৪ জেলার দায়িত্ব দিয়েছে ৬৪ জনসচিবকে। তারা করোনার সার্বিক ব্যবস্থাপনা করবেন স্থানীয় জরপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এ কাজে কোনো গাফিলতি কাম্য নয়। দক্ষতার সঙ্গে তারা এ কাজটি করলে করোনা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গোটা জাতির জন্য তা কল্যাণ বয়ে আনবে।

মাহমুদ হাশিম