বড় শহর থেকে শক্তিশালি শহরে পরিণত হচ্ছে উহান
2021-04-09 14:40:40

গত ৪ এপ্রিল ছিল উহানের লকডাউন থেকে মুক্তির প্রথম বার্ষিকী। গত বছর কোভিড-১৯ মহামারি প্রথমে আঘাত হানে উহান শহরে। উহান চীনের গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবহন সংযোগস্থল। উহান ৯টি প্রদেশের সাথে সংযুক্ত একটি অধুনিক মহানগরী। মহামারির প্রভাব ঠেকাতে উহানে চালু হয় লকডাউন। তখন থেকে এক বছর চলে গেছে, আরেকটি বসন্তকাল এসেছে। ছাং চিয়াং নদীর পাশে  উহান শহর। এ নদীর পানির মতোই শহরটি প্রদর্শন করেছে স্থিতিস্থাপকতা এবং জোরালো প্রাণশক্তি।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৩.৫৪বিলিয়ান ইউয়ান বিনিয়োগের ২১৫টি প্রকল্প উহানে শুরু হয়। এটি চীনের বিনিয়োগ খাতে নতুন এক রেকর্ড সৃষ্টি করে। গত মাসে ১১২টি প্রকল্পে মোট ৩৪৬.২০বিলিয়ান ইউয়ান বিনিয়োগ করা হয়।  উহানে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

উহান শহরের চিয়াং সিয়া অঞ্চলে নির্মিত হচ্ছে ইউন চিং শান নামে একটি হাসপাতাল। এ হাসপাতালের বৈশিষ্ট্য হল: সাধারণ দিনে একটা সাধারণ হাসপাতাল হিসেবে চলে এবং মহামারি হলে এ হাসপাতাল মহামারি প্রতিরোধক বিশেষ হাসপাতালে পরিণত হতে পারে। দ্রুত হাসপাতালের ফাংশন পরিবর্তন করতে চাইলে নির্মাণের সময় হাসপাতালকে বিশেষভাবে নকশা করতে হয়। উহানে এখন  এ হাসপাতালের মতো অনেক মহামারি-পরবর্তী নির্মাণ প্রকল্প চলছে। সবাই এ শহরের পুনরুদ্ধারে ব্যস্ত।

উহানের অবস্থান কতোটা গুরুত্বপূর্ণ? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে,  মধ্য-চীনের এ শহর থেকে হাইস্পিড ট্রেনে করে ৪ঘন্টার মধ্যে তার চারপাশের ১,০০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করা যায়। তার মানে  উহান থেকে ৪ ঘন্টার মধ্যে চীনের ১০০ কোটি মানুষ ও ৯০ শতাংশ অর্থনীতির এলাকাসমূহে পৌঁছানো যায়।

 

মহামারি ঠেকাতে কোটি লোকসংখ্যার এ শহর লকডাউন ঘোষণা করেছিল। ভাইরাস কেবল মানুষের জীবনের ওপর হুমুকি সৃষ্টি করে তা নয়, মহামারিতে সামাজিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বড় রকমের আঘাত পায়। উহানের লকডাউনের সময় শহরের উন্নয়ন স্থগিত হয়। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে উহানের বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার ছিল -৮১.৬ শতাংশ। এর ভোগ বৃদ্ধি -৪৫.৭ শতাংশ, এবং  আর্থিক আয় ছিল -৪৪ শতাংশ। সারা শহরে মাত্র ২০০টি বড় আকারের কোম্পানি আগের মতো চলে। মহামারিতে এ শহর হঠাত্ করে শান্ত  ও ধীর হয়ে যায়। বিশ্বের নানা দেশের মহামারি প্রতিরোধের জন্য সময় সাশ্রয় করে উহান এবং এতে বড় মূল্য গুনে শহরটি।

উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের চেরি ফুল দেশবিখ্যাত এবং প্রতি বসন্তকাল দেশের নানা জায়গা থেকে মানুষ উহানে এসে চেরি ফুল দেখতে। ২০২০ সালের ফুল আমরা মিস করেছি, তবে ২০২১ সালের উহান আগের মতো সুন্দর এবং দেশের অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করছে। উহানে এখন মহামারির কোন নেতিবাচক প্রভাব নেই। মানুষ আগের মতো জীবনযাপন করছে।  সুস্বাদু খাবার খাচ্ছে। রাতের লাইট শো শহরকে আরও সুন্দর করে তুলছে। উহান প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে।

২০২০ সালে উহানের জিডিপি দেড় ট্রিলিয়ান ছাড়িয়েছিল এবং চীনের ১০টা ১ ট্রিলিয়ান জিডিপির শহরের অন্যতম ছিল এ শহর। ২০২০ সালে উহানে নতুন করে ১লাখ ৮হাজার ৫০০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী তৈরি হয়। প্রতিদিন গড়ে ৯০০টি ব্যবসা শুরু হয়েছে।

বিশ্বের টপ-৫০০ কোম্পানির অন্যতম হানিওয়েল। এটি ২০২০ সালে উহানে তাদের চীনা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করে এবং ৬ মাসের মধ্যে সকল কর্মী নিয়োগ শেষ করা হয়। কোম্পানির এশিয়া প্যাসিফিকের প্রেসিডেন্ট বলেন, উহানের অর্থনীতি পুরুদ্ধার হয়েছে এবং সমৃদ্ধ হচ্ছে। 

মহামারি বিশ্বের বিমান শিল্পের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তবে উহানের এয়ারকার্গোশিল্প ২০২০ সালে বড় সফলতা অর্জন করে। ২০২০ সালে উহানের থিয়ান হ্য বিমানবন্দরে মোট ৯৩লাখ ৬০হাজার বার কার্গো বিমান চলাচলের মাধ্যমে  পণ্য  রপ্তানি ও আমদানি  করে। আর ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে এ সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়েছে। যা ২০২০ সালের সারা বছরের পরিমাণের চেয়েও বেশি।

উহানে জাতীয় অর্থনৈতিক কেন্দ্র, জাতীয় বৈজ্ঞানিক নবায়ন কেন্দ্র,  জাতীয় বাণিজ্যিক ও লজিস্টিক কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক বিনিময় কেন্দ্র, ও আঞ্চলিক আর্থিক কেন্দ্র নির্মাণ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। ২০২১ সালে শহরের জিডিপি ১০ শতাংশ, ও বিনিয়োগ ১০ শতাংশ বৃদ্ধি, এবং নতুন করে ২.১ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাসহ নানা নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে উহান।

 

প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সংকটে সমাজ এগিয়ে যায়। মহামারির পর সমাজ, প্রশাসন, গণস্বাস্থ্য, অর্থনীতি, উন্নয়ন, ও শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রে উহান আরও অগ্রগতি অর্জন করতে পারছে। ভবিষ্যতে  উহান এক বৈশ্বিক নগরে পরিণত হবে বলে মনে করা হয়। তাই বিশ্লেষকদের মতে, বড় শহর থেকে ক্রমেই এক শক্তিশালি শহরে পরিণত হচ্ছে উহান।(শিশির/এনাম/রুবি)