আসিয়ানদের ওপর আক্রমণ বেড়েছে, এটা কি যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত মানবাধিকার?
2021-04-09 17:00:35

গত ৮ এপ্রিল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের সমন্বয় ও নির্দিষ্ট স্থানে পারস্পরিক সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের সমন্বয় এবং নির্দিষ্ট স্থানে পারস্পরিক সহযোগিতা হল আঞ্চলিক সমন্বিত উন্নয়ন, ও অভিন্নভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে সিপিসি’র গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সবার উচিত পরিস্থিতি ও কর্তব্যের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো, দারিদ্র্যবিমোচনের ফলাফল সুসংঘবদ্ধ করা, সার্বিকভাবে গ্রাম পুনরুদ্ধার জোরদার করা, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের সমন্বয় ও নির্দিষ্ট জায়গার পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো।

 

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের অংশীদার হয়ে পরস্পরকে সাহায্য করার বিষয়টি সুসংহত করতে হবে। সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে হবে। সহযোগিতা-ব্যবস্থা সুসংঘবদ্ধ করতে হবে, এবং সাহায্যের পদ্ধতি উন্নতি করতে হবে। যাতে শিল্প খাতে সহযোগিতা, সম্পদের ব্যবহার, মানবসম্পদের বিনিময়, গোটা সমাজের অংশগ্রহণ, আঞ্চলিক সমন্বিত উন্নয়ন এবং অভিন্ন উন্নয়নের সুষ্ঠু পরিস্থিতি গড়ে তোলা যায়। সিপিসি’র উচিত দারিদ্র্যবিমোচনের চেতনা অনুসরণ করে, অব্যাহতভাবে সংগ্রাম করা, কৃষি ও গ্রামের আধুনিকায়ন জোরদার করা এবং সার্বিকভাবে গ্রামীণ পুনরুদ্ধার জোরদার করা।

图片默认标题_fororder_download

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস ‘এশিয়ানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা’ শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। এর আগে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও দেখা গেছে যে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়ান আমেরিকানদের বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধের পরিমাণ ১৪৯ শতাংশ বেড়েছে।

দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন সরকার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ করে আসছে। এশিয়ানদের বিরুদ্ধে এত বেশি সহিংসতা মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিকতার প্রশ্ন তুলেছে।

এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চাও লি চিয়ান বলেন, বর্ণবাদ যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিস্তৃত, পদ্ধতিগত ও অবিচ্ছিন্ন বিষয়।

মুখপাত্র বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রে এশীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ণ-বৈষম্য ও নৃগোষ্ঠীর প্রতি সহিংস অপরাধ তীব্রতর হয়েছে।

মুখপাত্র বলেন, শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদ, নব্য-নাজি এবং কু-ক্লাক্স-ক্ল্যানের সদস্যরা বর্ণ বৈষম্য ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেড-ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত জাতিগত নির্মূলকরণ ও গণহত্যা হয়েছিল এবং মানবতাবিরোধী অসংখ্য অপরাধ হয়েছিল। জাতিগত বৈষম্য যুক্তরাষ্ট্রের গভীরে প্রোথিত। চীন আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি পালন করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবৈষম্য পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায় যে, ২০২০ সালের ১৭ জুন জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৪৩তম অধিবেশনে বৈষম্যবাদ নিয়ে একটি বিশেষ বিতর্কের আয়োজন করা হয়। এটি ছিল মার্কিন মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত একটি জরুরি বিতর্ক। অনেকের হয়তো মনে আছে, মার্কিন পুলিশ অ্যাফ্রো আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছিল। এসব আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিনীরা বর্ণবৈষম্য, বৈষম্যবাদ ও পুলিশি সহিংসতার শিকার। সারা বিশ্ব এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণার দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল, প্রত্যেকের নির্ধারিত অধিকার ও স্বাধীনতা রয়েছে। বর্ণ বা ত্বকের রঙের কারণে কোনো মানুষের সঙ্গে বৈষম্য করা যায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এই সমস্যা দীর্ঘকাল ধরেই রয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের মহামারির ভয়াবহ অবস্থা থেকেও দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়।

২০২০ সালে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের মহামারি দেখা দেয়। যা মানব জীবনের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে। এই মহামারি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রণ করা যায় নি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ গুরুতর উদাহরণ।

গত মাসের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র ছিল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ চিকিত্সা সম্পদ ও শক্তিশালী চিকিত্সা-গবেষণার দেশ। অথচ দেশটিতে করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা তিন কোটি ছাড়িয়েছে, ৫ লাখেরও বেশি মার্কিনী তাদের মূল্যবান প্রাণ হারিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র হল বিশ্বে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি রোগী ও সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণকারী মানুষের দেশ।

আসলে মানুষের জীবনই হল মানবাধিকারের প্রধান বিষয়। বেঁচে থাকার অধিকার ও স্বাস্থ্য রক্ষার অধিকার হল মৌলিক মানবাধিকার। হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা কমিশন গত বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুতে এই ভাইরাসের তথ্য পায়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চিকিত্সা বিশেষজ্ঞগণও বার বার যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি বিষয়ে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন। তবে মার্কিন সরকার বিভিন্ন হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেছে। ফলে মহামারি প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ সময় ও সুযোগ নষ্ট হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে গণতন্ত্র ব্যবস্থার ‘দৃষ্টান্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। আসলে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে বৈরিতা ধীরে ধীরে নীতির ক্ষেত্রে বিতর্ক থেকে ক্ষমতার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

২০২০ সালের নির্বাচন এমন রাজনৈতিক বৈরিতাকে সবার সামনে নিয়ে আসে। রিপাবলিকান পার্টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল অগ্রাহ্য করেছে। ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের ওয়াশিংটনে এই ফলাফলের প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান। ফলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি দশ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী ক্যাপিটল হিলে বিক্ষোভ মিছিল করে। পুলিশের সঙ্গে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। নির্বাচনের বিতর্ক সহিংস হাঙ্গামায় পরিণত হয়। সারা বিশ্ব এতে অবাক হয়।

আন্তর্জাতিক সমাজ আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব সমস্যা সমাধানে সঠিক মনোভাব পোষণ করবে ও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। বর্তমানে মানবজাতির উন্নয়নের নতুন সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মানবজাতির সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের লক্ষ্যে অভিন্ন পথে এগিয়ে যাওয়া।