শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের খবরাখবর, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভাবান-সৃষ্টিশীল তরুণদের জীবন ও কর্ম নিয়ে সাজানো আমাদের এ অনুষ্ঠান। খ্যাতিমানদের কৃতি মানুষ হয়ে ওঠার অনুপ্রেররণা, সৃষ্টিশীল তরুণদের স্বপ্ন, তাদের জীবনের আনন্দ-বেদনার গল্প নিয়েই ‘আপন আলোয়’।
এ পর্বে থাকছে:
১. প্রতিবেদন: ছিং মিং ফেস্টিভ্যাল: পূর্ব প্রজন্মের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উৎসব
২. চীনের চলচ্চিত্র: থার্টিন ফ্লাওয়ার্স অব নানচিং
৫. অন্তরঙ্গ আলাপন: ফরিদ আহমেদ, সভাপতি, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি।
- - - - - - - - - - - - -
ছিং মিং ফেস্টিভ্যাল: পূর্ব প্রজন্মের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উৎসব
চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হলো ছিং মিং ফেস্টিভ্যাল। একে সমাধি পরিস্কার করার উৎসবও বলা হয়। এদিন পূর্ব প্রজন্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। এটি সাধারণত এপ্রিলের ৪, ৫ বা ৬ তারিখে হয়ে থাকে। চলতি বছর এই উৎসব ৪ এপ্রিলে পালন করা হয়েছে। এই দিনে অনেকে মৃত আত্মীয় স্বজনের সমাধিতে যান। সমাধির আগাছা ও ধুলাবালি পরিস্কার করেন। অনেকে সমাধিতে কাগজের তৈরি টাকার মতো ছবিযুক্ত কাগজ, খাদ্য সামগ্রী ইত্যাদিও উৎসর্গ করেন। শিশু ও তরুণদের মনে পরিবারের গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি করার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ফেস্টিভ্যাল। এ সময় পরিবারের সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়। এটি মূলত চীনের লোকজ ধর্মের একটি উৎসব।
এই উৎসবের রয়েছে ২৫০০ বছরের ঐতিহ্য। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি করুণ গল্প। খ্রিস্ট পূর্ব ৬৫৫ সালের দিকে চিন রাজ্যে(আধুনিক শানসি প্রদেশ) চিয়ে জিথুই নামে একজন ভালো মানুষ ছিলেন। রাজ্যে অস্থিরতা হলে তিনি যুবরাজ চোংয়ারের সঙ্গে নির্বাসনে যান। তিনি রাজকুমারকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেন ও তার সেবা করেন। খাদ্যের অভাব হলে একবার তিনি নিজের উরু থেকে মাংস কেটে স্যুপ রান্না করে রাজকুমারকে খেতে দেন। পরে চোংয়ার রাজা হন। তিনি তার বিপদের দিনে যারা উপকার করেছেন তাদের পুরস্কৃত করেন কিন্তু ভুলে যান বিশ্বস্ত পুরনো সেবক চিয়ে জিথুইয়ের কথা।
ছবি: ছিং মিং উৎসবে ফুল দিয়ে পূর্ব প্রজন্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন কয়েকজন
চিয়ে জিথুই তার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে মিয়ান পর্বতে চলে যান। রাজার যখন তার কথা মনে পড়ে তখন তাকে খুঁজে পান না। এমনকি মিয়ান পাহাড়ের অরণ্যেও তিনি খোঁজ করেন। অসহিষ্ণু হয়ে রাজা হুকুম দেন পাহাড়ের বনে আগুন লাগিয়ে দেয়ার। তাহলে চিয়ে বন থেকে বের হতে বাধ্য হবে। কিন্তু ফল হয় উল্টো। চিয়ে এবং তার বৃদ্ধা মা আগুনে পুড়ে মারা যান। অনুতপ্ত ও শোকার্ত রাজা চিয়ের স্মরণে একটি মন্দির তৈরি করেন।
এরপর থেকে মধ্য বসন্তে ছিংমিং সৌর পর্যায়ে এই উৎসব শুরু হয়। পরিবারের মৃত সদস্যদের স্মরণ ও জীবিত বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। থাং রাজবংশের সময় থেকে এই উৎসব নির্দিষ্ট দিনে পালন করা শুরু হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে চীনা সংস্কৃতির একটি বিশেষ দিক ফুটে ওঠে। সেটি হলো গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং শিশুদেরকে পারিবারিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এতে বিগত প্রজন্মের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সেতুবন্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়।