দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অবদান নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশিত
2021-04-09 16:49:44

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয় মঙ্গলবার ‘মানবজাতির দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের উদ্যোগ’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। এতে দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের কার্যক্রম, চীনের অভিজ্ঞতা ও ব্যবস্থাপনাসহ নানা পরিসংখ্যানগত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এসব পরিসংখ্যানে দেশজুড়ে শহর ও গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্যবিমোচনের অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় শ্বেতপত্রের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো তুলে ধরব।

 

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বের জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ চীনের জনগোষ্ঠী। চীন থেকে চরম দারিদ্র্য দূর করার মাধ্যমে বিশ্বের দারিদ্র্যবিমোচন ও মানবজাতির উন্নয়নে এক মাইলফলক স্থাপিত হলো। শ্বেতপত্রে দেখা যায়, চীনের দরিদ্র জনগণের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা অব্যাহত আছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সালে নিবন্ধিত দরিদ্র অঞ্চলগুলোর অধিবাসীদের মাথাপিছু আয় ছিল ৬০৭৯ ইউয়ান; যা ২০২০ সালে এসে ১২,৫৮৮ ইউয়ানে উন্নীত হয়। এসব অঞ্চলে বার্ষিক গড়পড়তা আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ১১.৬ শতাংশ।

পাশাপাশি, চীনের সংখ্যালঘু জাতি এবং সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট দারিদ্র্যবিমোচনে সুস্পষ্ট সাফল্য দেখা গেছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইনারমঙ্গোলিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, কুয়াংসি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, নিংসিয়া হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং কুইচৌ, ইউননান ও ছিংহাই প্রদেশে সবমিলিয়ে দারিদ্র লোকের সংখ্যা মোট ১ কোটি ৫৬ লাখ কমেছে। ২৮টি কম লোকসংখ্যার সংখ্যালঘু জাতির দারিদ্র্য সম্পূর্ণ দূর হয়েছে।

 

শ্বেতপত্রে বলা হয়, দেশে বিগত চার দশক আগে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়া পর থেকে সর্বমোট ৭৭ কোটি গ্রামীণ মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। আর বিগত কয়েক বছরে ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ চরম দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে এসেছে। দেশের বিভিন্ন জেলার ৮৩২টি দরিদ্র গ্রাম দরিদ্রতা থেকে মুক্ত হয়েছে। চীনে দারিদ্র্যমুক্ত জনসংখ্যা বিশ্বের দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া মানুষের ৭০ শতাংশেরও বেশি। চীন নির্ধারিত সময়ের দশ বছর আগে ‘জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী’র দারিদ্র্যমোচনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। এটি গোটা বিশ্বের জন্যই অনুসরণীয় সাফল্য।

 

চিকিত্সা খাতে উন্নয়নের বিষয়েও শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়। সর্বস্তরের মানুষের কাছে চিকিত্সা সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চিকিত্সা বীমার আওতা বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত ৯৯.৯ শতাংশেরও বেশি দরিদ্র মানুষ মৌলিক চিকিত্সা বীমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের নাজুক বাড়িঘর মেরামত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দরিদ্র্য জনগণের বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এসবের পাশাপাশি দুর্গম গ্রামীণ অঞ্চলে পানীয় জলের সংকট রোধে পদক্ষেপ নেয় স্থানীয় সরকারগুলো। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার দরিদ্র মানুষের পানীয় জলের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে ও এর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।

স্থানান্তরের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের কার্যক্রমও ছিল উল্লেখযোগ্য। শ্বেতপত্র বলা হয়, চীনে দরিদ্র মানুষদের কঠিন ও দুর্গম স্থান থেকে স্থানান্তর করার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৯৬ লাখ দরিদ্র মানুষ এতে লাভবান হয়েছে।

চীন বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতে সুনির্দিষ্টভাবে দারিদ্র্যবিমোচন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। চীন বিভিন্ন অঞ্চলের উপযোগী শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে ৯৮.৯ শতাংশ দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দিয়েছে। কাজ করতে আগ্রহী ও সক্ষম দরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া, দরিদ্র এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ কাজ জোরদার করা হয়েছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি অসংখ্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

 

চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, দারিদ্র্যমুক্তিই চীনের চূড়ান্ত গন্তব্য নয়। বরং এটি নতুন জীবন ও নতুন সংগ্রামের সূচনা মাত্র। চীন এখনও বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ভারসাম্যহীনতা সমাধান করা, শহর ও গ্রামের উন্নয়নের ব্যবধান কমানো, মানুষের জীবনযাত্রার সার্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে সবার সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে আরও সময় প্রয়োজন।