ছিং মিং উত্সবে চীনের রীতিনীতি
2021-04-09 15:37:40

প্রথমে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গত এক সপ্তাহের কর্ম তত্পরতা তুলে ধরছি...

 

গত ১ এপ্রিল সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটি প্রকাশিত সাময়িকী ‘ছিউ সি’ চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। সিপিসির ইতিহাস শিক্ষা বিষয়ক সংহতি সম্মেলনে দেওয়া প্রেসিডেন্ট সির ব্যক্তব্যকে সাময়িকীটি প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করে। প্রবন্ধে সিপিসির সদস্যদের পার্টির ইতিহাস শিখার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের কৌশল অনুধাবনে এটি খুবই প্রয়োজনীয়। সব কমরেডদের সুষ্ঠুভাবে পার্টির ইতিহাস শিখতে হবে। ইতিবাচকভাবে আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়ার নতুন যাত্রায় এগিয়ে নিতে এর বিকল্প নেই। প্রবন্ধে বলা হয়, সিপিসির ইতিহাস শিখা অনেক তাত্পর্যপূর্ণ। আমরা সিপিসির ইতিহাস শিখার বিষয়ে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছি। আমাদের পার্টির ১০০তম প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী উদযাপনের গুরুত্বপূর্ন এ সময়ে পার্টির সব সদস্যের ইতিহাস শিখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, পার্টির ইতিহাস শিখার সময় এর কার্যকরিতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। সিপিসির সদস্যদের নিজের চিন্তাধারা উন্নত করে উদ্ভাবন এগিয়ে নিতে হবে। উচ্চ গুনগত মান বজায় রেখে পার্টির ইতিহাস শিখার বিভিন্ন মিশন সম্পন্ন করতে হবে।

 

 

একই দিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কোভিড-১৯ আক্রান্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং তার আশু সুস্থতা কামনা করেছেন।

 

সমবেদনা বার্তায় সি চিন পিং বলেন, চীন ও পাকিস্তান সার্বক্ষণিক কৌশলগত অংশীদার। চীন সরকার ও জনগণ বরাবরই পাক সরকার ও জনগণের পাশে আছে।

 

তিনি চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেন। প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির সঙ্গে চীন-পাকিস্তান অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গড়ে তোলা এবং দু’দেশ ও দু’দেশের জনগণের কল্যাণ বয়ে আনতে ইচ্ছুক বলে জানান তিনি।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাইওয়ানে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনায় হতাহতদের সমবেদনা জানিয়েছেন।  প্রেসিডেন্ট সি নিহত চীনাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও আহতদের সমবেদনা জানান এবং তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

 

ইন্দোনেশিয়ায় সাইক্লোনের আঘাতে পাহাড়ধসে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোকে সমবেদনা জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, “ইন্দোনেশিয়ায় এ দুর্ঘটনায় অনেক হতাহতের খবর খুব দুঃখজনক। আমি চীন সরকার, চীনা জনগণ এবং ব্যক্তিগতভাবে নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করি এবং নিহতদের আত্মীয়স্বজন ও আহতদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই।

 

গত ৪ এপ্রিল ছিল চীনের ঐতিহ্যবাহী ছিং মিং উত্সব। এ উপলক্ষে চীনের সাধারণ মানুষ দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে চীনা শহীদদের স্মরণ করছেন ও শ্রদ্ধা জানায়েছেন। ২০১৬ সালে সিপিসি প্রতিষ্ঠার ৯৫তম বার্ষিকীতে সি চিন পিং বলেন, ‘শত্রুরা আমাদের মাথা কাটতে পারবে, তবে আমাদের বিশ্বাসকে নোয়াতে পারবে না”। তাঁর সে কথায় সিপিসির সদস্যদের বীরত্বগাথার বঃহিপ্রকাশ হয়েছে। তাই সবাইকে শহীদদের ত্যাগ মনে রেখে তাঁদের মহান আদর্শ তুলে ধরতে হবে।

 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অষ্টাদর্শ কংগ্রেসের পর থেকে সি চিন পিং  বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের সময় বিপ্লবের স্মৃতিবিজড়িত ও পবিত্র স্থানে তাঁর শ্রদ্মা নিবেদন করেছেন।

ছিং মিং উত্সবে চীনের রীতিনীতি_fororder_u=557521097,2106429586&fm=173&app=25&f=JPEG

তিনি বলেন, “আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, নয়া চীন কীভাবে আসলো, এবং বর্তমান সুখী জীবন কীভাবে আসলো?  চীনের কমিউনিস্ট পার্টির উচিত লাল পতাকা উচ্চ করে তুলে ধরে চীনের সমাজান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাওয়া এবং শহীদদের অর্জিত কর্তব্য বাস্তবায়নকে বেগবান করা”।

 

২০১৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী পালিত হয়। সে বছর শহীদদের স্মরণ করে সি চিন পিং নানা এলাকা পরিবদর্শনে যান। ২০১৯ সালের ২০ মে চিয়াং সি প্রদেশ পরিদর্শনের সময় তিনি চীনের কেন্দ্রীয় লাল বাহিনীর লংমার্চের আঁতুড়ঘর ইয়ু তু পরিদর্শন করেন।

 

তিনি বলেন,  লংমার্চ খুব কঠিন ছিল এবং অবশেষে বিষ্ময় সৃষ্টি করেছে। সিপিসির উচিত একে ভুলে না গিয়ে বিপ্লবের আদর্শ মনে রাখা এবং পূর্বের বিপ্লবী ও শহীদদের কথা ভুলে না যাওয়া।

মৃতদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানো হল চীনের ঐতিহ্যবাহী ছিংমিং দিবসের ঐতিহ্যগত রীতি। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছরের ছিংমিং দিবসের সময় চীনের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় বীর, শহীদ ও মৃত আত্মীয়স্বজনের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ। এ ছাড়া, চীনা জনগণ বিপ্লবে বীরদের মহান চেতনা মনে রাখার জন্য তাঁদের বাসস্থান ও বিপ্লবের জায়গায় যান। যাতে দেশপ্রেমের চেতনা জনপ্রিয় করা যায় এবং উন্নয়নের শক্তি লালন করা যায়।

 

ছিংমিং দিবসের প্রথম দিনে, চীনের সশস্ত্র বিপ্লব উন্মোচনের জায়গা, চীনের গণ-মুক্তিফৌজের জন্মস্থান চীনের চিয়াং সি প্রদেশের নান ছাং শহরে ‘লাল সংস্কৃতি’ এলাকায় পর্যটনের হিড়িক পড়ে যায়। লোকজন বিপ্লবের ইতিহাস অনুসরণ করে এখানে এসে দেশপ্রেমের শিক্ষা গ্রহণ করে। ছিং হাই প্রদেশ থেকে আসা বৃদ্ধ ওয়াং এই প্রথমবার নান ছাং শহরে আসেন। তাঁর প্রথম গন্তব্য ছিল ‘১ অগাস্ট’ বিদ্রোহের স্মৃতি হল। তিনি বলেন,

“এই স্থান পরিদর্শন করে আমার খুব ভালো লাগছে এবং আমি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। প্রবীণ বিপ্লবীদের রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে বর্তমানে আমাদের সবার জীবন সুন্দর হয়েছে।”

 

চিয়াং সি প্রদেশে অনলাইনে ‘বীর ও শহীদের’ শ্রদ্ধা জানানোর প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। লোকজন ‘বীর ও শহীদের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা’, ‘বীর ও শহীদের প্রতি মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানানো’, তাদের ‘অনুভূতির কথা মনে রাখা’- এরকম নানা পদ্ধতিতে বীর ও শহীদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে। লোকজন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বীর ও শহীদের কাহিনী এবং ‘লাল চেতনার গল্প’ জানতে পারে।

 

নান ছাং শহরের নতুন স্কুল শিক্ষা গ্রুপের প্রাথমিক স্কুল বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শুয়াং লি চিয়া বলেন, “অনলাইনে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার মাধ্যমে আমি বীর ও শহীদের প্রাণ উত্সর্গ করে দেশের জন্য অবদান রাখার কাহিনী জানতে পেরেছি। আমাদের উচিত তাদের কাছ থেকে শেখা, তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা, দেশের জন্য অবদান রাখা।”

 

চীনের বিভিন্ন জায়গায় আরও বেশি শিক্ষার্থী বীর ও শহীদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশপ্রেমের শিক্ষা নিয়েছে। হু নান প্রদেশের ই ইয়াং শহরের লুং চৌ মাধ্যমিক স্কুল সীমান্তরক্ষী বীরদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বীরদের কাহিনী শেখার মাধ্যমে দেশপ্রেমের শিক্ষা পেয়েছে। এই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছেং সিয়াং ছিন বলেন,

“একজন মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রী হিসেবে, আমাদের প্রধান কর্তব্য হল- ভালোভাবে লেখাপড়া করা। সেই সঙ্গে বীর ও শহীদের জীবন থেকে শিখতে হবে। ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ গঠনের জন্য নিজের শক্তি কাজে লাগাতে হবে।”

 

ই ইয়াং শহরের থাও হুয়া লুন প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ২৭৪ ক্লাসে, শিশুরা ‘আমি সিপিসি’র গল্প বলি’ নামে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তারা চীনের বিপ্লবের সময় বিভিন্ন বীর ও শহীদের গল্প নিজের ভাষায় বর্ণনা করে। এই ক্লাসের একজন শিশু শিক্ষার্থী ইউয়ান ছেন সি বলে,

“আমি অনেক সহপাঠীর গল্প পড়া শুনেছি, খুব গভীর অনুভূতি তৈরি হয়েছে। এসব গল্পের মাধ্যমে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি। নতুন যুগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের উচিত ভালোভাবে ইতিহাস জানা, বীর ও শহীদের শ্রেষ্ঠ গুণগুলো অর্জন করা এবং নতুন অগ্রগতি অর্জন করা।”

 

১৯২৭ সালের ১১ ডিসেম্বর কুয়াংচৌ শহরে কুয়াংচৌ বিদ্রোহ হয়। এটি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মী ও কৃষকদের সশস্ত্র বিপ্লবী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ছিং মিং দিবসের সময় কুয়াংচৌ বিদ্রোহী বীর ও শহীদদের কবরস্থানে কুয়াংচৌ শহরের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন কার্যক্রম আয়োজন করা হয়। শহরের ১৭ লাখেরও বেশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তারা দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের মুক্তির জন্য শহীদদের উল্লেখযোগ্য অবদান সম্পর্কে জানতে পেরেছে। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের পর শিক্ষার্থীরা কুয়াংচৌ বিদ্রোহের ইতিহাসও জানতে পেরেছে।

 

শ্রোতাবন্ধুরা,আজকের ‘হপ্তনামা’ অনুষ্ঠান এ-পর্যন্তই। অনুষ্ঠানটি আপনাদের কেমন লাগলো? যদি ভালো লেগে থাকে এবং এ অনুষ্ঠান নিয়ে আপনাদের কোনো মতামত থাকে, তাহলে আমাদের চিঠি বা ই-মেইল পাঠাতে ভুলবেন না। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা হলো ben@cri.com.cn এবং wangdanhong@cri.com.cn। অর্থবা আমাদের ফেসবুকের আকান্টে সরাসরই মন্তব্য করতে পারেন। আমাদের ফেসবুকের আইডি CRIbangla। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিন, একই সময়ে আবাররো আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন এবং সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান।

 

রুবি/এনাম