‘টিকার জাতীয়তাবাদ’ বয়ে আনবে ‘নৈতিকতা ও অর্থনীতির দ্বৈত সংকট’
2021-04-07 15:08:17

 

এপ্রিল ৮: ১৩ মার্চ বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভেনিয়া, লাতভিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীরা যৌথভাবে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন ডের লেইন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মিশেলের কাছে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে তারা বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকার ন্যায়সঙ্গত বিতরণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা। এর আগে অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর কুর্জ ইইউর কোভিড-১৯ টিকার অনুপযুক্ত বিতরণ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি ‘ইইউর চেতনার’ সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

 

কোভিড-১৯ মহামারী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, কোভিড-১৯ টিকার বিতরণ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এমনকি বাইডেন প্রশাসন, যে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিল যে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিরে এসেছে’ ইউরোপীয় মিত্রদের জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দিচ্ছে না। ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (এনবিসি) রিপোর্ট অনুসারে, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি ১২ মার্চ বলেছিলেন যে, আমেরিকা কাউকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে না। ইউরোপের সাথে এর কোনো যোগসূত্র নেই। বিবৃতিটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। অনেকে বলেন, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি আবার যেন ফিরে এসেছে।

 

একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক যৌথভাবে প্রতিষ্ঠিত ‘পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স’-এর হিসেব অনুসারে, ৩০টি স্বল্প আয়ের দেশ এবং ৩৭টি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে ‘কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা (সিওএএক্সএক্স)’-এর মাধ্যমে টিকা পেতে পারে। তবে এ কাজের অগ্রগতি ধীর হওয়ার কারণে, ওসব দেশের ৯০ শতাংশ  জনগণ ২০২১ সালে টিকা পাবে না। এখন পর্যন্ত যেসব ভ্যাকসিন উত্পাদিত হয়েছে বিশ্বে, সেগুলোর অর্ধেকেরও বেশি ধনী দেশগুলো কিনেছে, যেগুলোর জনসংখ্যা বিশ্বের মাত্র ১৪ শতাংশ। এর মধ্যে কানাডা যে পরিমাণ টিকার অর্ডার করেছে, তা দিয়ে সেদেশের প্রতিজন ব্যক্তিকে পাঁচ বার টিকা দেওয়া যাবে। হংকংয়ের ‘দক্ষিণ চীন মর্নিং পোস্ট’ ১৪ মার্চ একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। যাতে বলা হয়েছে যে, জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ৭৫ শতাংশ কোভিড-১৯ টিকা ১০টি দেশে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৩০টি দেশ ভ্যাকসিনের একটি ডোজও পায়নি। জি সেভেন গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রতিটি নাগরিককে তিনবার করে টিকা দিতে সক্ষম। এটি ‘কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন পরিকল্পনার’ চেষ্টাকে দুর্বল করেছে। ওইসিডি আরও হতাশাজনকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, কিছু দরিদ্র দেশকে টিকার জন্য ২০২৪ সাল অবধি অপেক্ষা করতে হতে পারে।

 

এ বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে ডাব্লুএইচওর প্রধান তেদ্রোস আদহানম হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, ‘টিকার জাতীয়তাবাদ’ কাটিয়ে উঠতে না-পারলে বিশ্ব নৈতিকতা ও অর্থনীতির সংকটে পড়বে। প্রকৃতপক্ষে, ভ্যাকসিন বিতরণের ইস্যুতে কিছু পশ্চিমা দেশ স্বার্থপরতা ও স্বল্পদৃষ্টির পরিচয় দিচ্ছে, যা বিভিন্ন দেশ এবং গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে দিচ্ছে।

 

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৬তম সভায় জাতিসংঘের মহাপরিচালক আন্তোনিও গুতেরহিস জোর দিয়ে বলেছেন যে, কোভিড-১৯ টিকা অবশ্যই একটি বিশ্বব্যাপী গণপণ্য হিসাবে পরিণত হতে হবে; সবাইকে সাশ্রয়ী মূল্যে এই ভ্যাকসিন দিতে হবে।

চীন ‘টিকার জাতীয়তাবাদ’ ধারণার দৃঢ় বিরোধিতা করে। বিশ্বের সকল দেশের জনগণ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের জনগণের জন্য টিকা সহজলভ্য করার আহ্বান জানায় বেইজিং। চীন যৌথভাবে মহামারী প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে টিকা খাতে সহযোগিতাও করছে। এটি মহামারী প্রতিরোধে বিশ্বের ঐক্য ও সহযোগিতায় আস্থা যুগিয়েছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)