এপ্রিল ৬: আজ (মঙ্গলবার) চীনের তথ্য কার্যালয় থেকে ‘মানবজাতির দারিদ্র্যমোচনে চীনের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়। এতে দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হয়। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চীন হতদারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। এ সাফল্য শুধু চীনের নয়, সারা বিশ্বেরও। দারিদ্র্যবিমোচন খাতে চীনের কাজ, চীনের পদ্ধতি এবং চীনের অভিজ্ঞতা বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্তও বটে।
গত ৭০ বছরে চীনে ৮৫ কোটি মানুষ হতদারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। এর মানে প্রতিবছরে এক কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনায় দারিদ্র্যমোচনের লক্ষ্য চীন ১০ বছর আগে পূরণ করতে পেরেছে। চীনের দারিদ্র্যবিমোচন বিশ্বের উন্নয়নে বৃহত্তম মানবাধিকার প্রকল্প বলা যায়।
“হতদারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে চীন ১০০ শতাংশ প্রচেষ্টা চালাবে; বিশ্বের দারিদ্র্যবিমোচন লক্ষ্য চীন ১০০ শতাংশ পূরণ করবে; ভবিষ্যতের ব্যাপারে চীন ১০০ শতাংশ আস্থাশীল।” চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জনগণকে দেওয়া এ প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে, যা বিশ্বের উন্নয়নে চীনের অবদানও বটে।
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত দারিদ্র্যবিমোচন ও উন্নয়নবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ফোরামে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নিজের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেছিলেন, “৪০ বছর ধরে আমি চীনের বিভিন্ন জেলা, শহর, প্রদেশ এবং কেন্দ্রীয় সরকারে কাজ করছি। দারিদ্র্যবিমোচন সবসময় আমার কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। এর ওপর আমি সবচেয়ে বেশি সময় ও গুরুত্ব দিয়েছি। চীনের সাধারণ মানুষের কষ্ট হলে আমার কষ্ট হয়। তারা সুখী হলে আমারও ভাল লাগে।” গত বছরের দুই অধিবেশনে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের এক প্রজন্মের মানুষের একটি অভিন্ন স্বপ্ন আছে, আর তা হলো: আমাদের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষকদের সমৃদ্ধ জীবন। সমাজতান্ত্রিক পথে একজন মানুষকেও বাদ দেওয়া যাবে না। আমাদের সবাই সমৃদ্ধ ও স্বচ্ছল জীবন বাস্তবায়নের পথে সামনে এগুবে। ”
চীনের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে, জনগণের কল্যাণ ও স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে, উন্নয়নকে কেন্দ্র করে জনগণের সুন্দর ও সুখী জীবন বাস্তবায়নকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে সামনে এগুলেই কেবল দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া সম্ভব।
চীনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে, দারিদ্র্যবিমোচন একটি স্বপ্ন, কিন্তু নিজ দেশের অবস্থা অনুযায়ী বাস্তবমুখী ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করলেই কেবল তা বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব। চীনের দারিদ্র্যবিমোচনে সরকার সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে একসাথে কাজ করার কাঠামো গঠনের চেষ্টা করেছে। চীনের উন্মুক্তকরণ ও সংস্কার গভীরতর হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব হয়েছে। উন্মুক্তকরণ ও সংস্কারের কারণে অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাড়তে পারছে এবং জনগণের জীবন উন্নয়নের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
দারিদ্র্যবিমোচনে সারা বিশ্বের সহযোগিতা দরকার। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন বলেছিলেন, মানবজাতির দারিদ্র্যবিমোচনে, মানুষের টেকসই উন্নয়নের পথে “চীনের ভূমিকা অতুলনীয়”। বহু বছর ধরে চীন সক্রিয়ভাবে বিশ্বের দারিদ্র্যবিমোচনে সহযোগিতা করে আসছে। চীনে বহুবার দারিদ্র্যবিমোচনসংক্রান্ত ওয়ার্কশপ ও ফোরাম আয়োজন করা হয়েছে। চীন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচন সহযোগিতা প্রকল্প চালু করেছে এবং যথাসাধ্য অন্যান্য দেশের জন্য আর্থিক, চিকিত্সা এবং ঋণ সহায়তা দিয়ে আসছে।
একপক্ষবাদ ও সংরক্ষণবাদ দারিদ্র্যমোচনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কেবল সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে এবং সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে। জাতিংসঘের হতদারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি দ্য শুটার বলেছিলেন, দারিদ্র্যবিমোচন শুধু অর্থনীতির উন্নয়ন নয়, একটি সহনশীল ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ে তোলাও বটে। এর জন্য বহুপক্ষবাদ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুব প্রয়োজন।
চীন হতদারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। কিন্তু তুলনামূলক দারিদ্র্য এখনও আছে। চীনকে স্বচ্ছল সমাজ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখনও অনেক দূরে সামনে আগাতে হবে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিশ্বাস ও আস্থা হলো এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের মৌলিক ভিত্তি। চীন অব্যাহতভাবে জাতিসংঘের সঙ্গে এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচন খাতহে সহযোগিতা করবে এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনে নিজের অবদান রাখবে। (স্বর্ণা/আলিম/ছাই)