বিশেষ প্রতিবেদন: অত্যাধুনিক মেশিনে যেভাবে তৈরি হয় উন্নতমানের জুতা
2021-04-01 18:26:59

পায়ের যত্ন ও সুরক্ষায় জুতার বিকল্প নেই। হাল আমলে নানা রং ও ডিজাইনের জুতার মাধ্যমে শুধু প্রয়োজন নয়, মেটে ফ্যাশনের চাহিদাও। চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাই দেশেই গড়ে উঠেছে আধুনিক প্রযুক্তির জুতার কারখানা। কিন্তু কিভাবে তৈরি হয় জুতা? সাজিদ রাজু’র প্রতিবেদন।

বিশেষ প্রতিবেদন: অত্যাধুনিক মেশিনে যেভাবে তৈরি হয় উন্নতমানের জুতা_fororder_A

শপিংমলগুলোতে ঢুকলেই চোখে পড়বে ঝকঝকে জুতার শো-রুম। নানা ডিজাইন ও রঙের আকর্ষণীয় সব জুতা সাজিয়ে রাখা হয়েছে গ্রাহকদের জন্য। আছে নানা দামের জুতা। আধুনিক স্টাইল ও ফ্যাশনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রুচিশীল জুতা যেন ব্যক্তিত্যের বহিপ্রকাশ। তাই পছন্দের জুতার প্রতি বাড়তি আকর্ষণ কার না থাকে? 
থরে থরে সাজানো এমন জুতা থেকে বেছে নিতে বললে, আপনিও হয়তো খেই হারাবেন। কোনটা রেখে কোনটা নেব? এমন দোটানাভাব কাজ করবে নিশ্চয়ই। তবে যদি প্রশ্ন করি, আপনার পছন্দের জুতাজোড়া কিভাবে তৈরি হয়, তার কোন ধারণা কি আপনার আছে? কি এবার নড়ে চড়ে বসছেন তো? দেশের জুতা শিল্পে শুরুতে জাপানি উদ্যোক্তাদের বেশ আনাগোনা থাকলেও বর্তমানে চীনের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। 

বিশেষ প্রতিবেদন: অত্যাধুনিক মেশিনে যেভাবে তৈরি হয় উন্নতমানের জুতা_fororder_B

বসন্তের এক সকালে টিম সিএমজি বাংলার যাত্রা গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। গন্তব্য পান্ডা সু ইন্ডাস্ট্রিজ এ। উপজেলার মাঝুখান গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক জুতার কারখানা।
ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে কর্মীদের তৎপরতা। সারিবদ্ধ যন্ত্র বসানো কারখানায় কর্মরত কর্মীদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। এরই মাঝে কথা হয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, জুতা তৈরির কাজ করা হয় বেশ কয়েকটি অংশে ভাগ করে। 

বিশেষ প্রতিবেদন: অত্যাধুনিক মেশিনে যেভাবে তৈরি হয় উন্নতমানের জুতা_fororder_C

শুরুতেই কাটিং বিভাগে বিভাগে জুতার কাপড় বা চামড়ার অংশটি কাটা হয়। এরপর জুতার ওপর প্রয়োজনীয় নকশা করা হয়, রং এর কাজ করা হয়। 
এরপর সুইং বিভাগের কর্মীরা সেলাই এর কাজ করেন। একে একে জমা হতে থাকে জুতার প্রস্তুতকৃত এ অংশটুকু। কর্মীরা জানান, শ্রমবিভাজনের নীতি অনুযায়ী, ভাগ ভাগ করে একেক অংশের কাজ করেন একেকজন। 

বিশেষ প্রতিবেদন: অত্যাধুনিক মেশিনে যেভাবে তৈরি হয় উন্নতমানের জুতা_fororder_D

দেশে স্থানীয় উদ্যোগে জুতা উত্পাদন অনেকটা কুটির শিল্পের মতো করে শুরু হলেও এখন এসেছে আধুনিক ও উন্নত মানের যন্ত্র। ইনজেকশন মোল্ডিং মেশিন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আউটসোল ফ্লেক্সিং, ল্যামিনেশন ও আধুনিক অ্যাম্ব্রয়ডারি মেশিনসহ নানা প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানো হয়েছে কারখানাটিতে। 
পান্ডা সু’জ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (পরিচালন) মেহেদুল হাসান মানিক জানান, বেশিরভাগ কাজ যেহেতু স্বয়ংক্রিয় মেশিনেই সম্পন্ন হয় তাই যন্ত্র চালনার মতো কাজ খুব সহজেই করে ফেলতে পারেন শ্রমিকরা। নেই কঠোর পরিশ্রম, তবে আছে কড়া নজরদারি, যত্ন আর সুক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ। 

বিশেষ প্রতিবেদন: অত্যাধুনিক মেশিনে যেভাবে তৈরি হয় উন্নতমানের জুতা_fororder_E

মেহেদুল হাসান মানিক, ব্যবস্থাপক (পরিচালন), পান্ডা সু’জ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড

তিনি বলছিলেন, পুরো প্রক্রিয়ার মান নিয়ন্ত্রণে তত্পর থাকেন কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগের কর্মীরা। জুতার স্যোল বন্ডিং এর কাজ পর্যবেক্ষণ করা হয়, জুতা কতোটা টেকসই হয়েছে তার জন্য করা হয় পুল ফোর্স পরীক্ষা। 
লেস বাঁধা, বিশেষ পেপার দিয়ে পেচানো, এর পর প্যাক করে সম্পন্ন করা হয়  হয়। এ জন্য আছে আকর্ষণীয় ডিজাইনের কার্টন, ইনার বক্স। এরপর সাইজ অনুযায়ী সাজানো হয়। এরপরই মার্কেটে পাঠানো হয়। 
এ কারখানার শ্রমিকদের ৭০ শতাংশই নারী। বাকি ৩০ শতাংশ পুরুষ। শ্রমিকদের বেশিরভাগই স্থানীয়। শ্রমিকদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। মৌচাক ইউনিয়নের নারী-পুরুষের তাই সুযোগ তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের। 

বিশেষ প্রতিবেদন: অত্যাধুনিক মেশিনে যেভাবে তৈরি হয় উন্নতমানের জুতা_fororder_F

বাংলাদেশে তৈরি জুতার কাঁচামালও আসে এশিয়ার নানা দেশ থেকে। তবে বিশেষ করে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ও ভারতসহ বেশিরভাগ কাঁচামালের চালান আসে চীন থেকে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, জুতার গঠন ও গুণগত মান ধরে রাখতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও কাচামালের প্রায় পুরোটাই আনা হয়েছে চীন থেকে। 
তবে ভাবনা থেকে বাদ যায়নি ক্রয় ক্ষমতার বিষয়টিও। প্রান্তিক পর্যায়ে পৌছে দেয়াই তাদের প্রধান লক্ষ্য। খুচরা বাজারে গড়ে ১২শ’ টাকায় এ ব্র্যান্ডের জুতা পাওয়া যায়। এখানে তৈরি হয় ছেলে-মেয়েদের জুতা ও স্যান্ডেল, কনভার্স, ওয়াকিং কেডস ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার জুতা।  
এরই মধ্যে উন্নত মানের জুতার চাহিদা বেড়েছে ইউরোপে। বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি জুতা যাচ্ছে জার্মানি, স্পেন, বেলজিয়াম, পোলেন্ড ও ফ্রান্সে। কর্তৃপক্ষ বলছে, সামনের দিনগুলোতে রফতানির ব্যাপারেও পরিকল্পনা আছে তাদের।