সংবাদ পর্যালোচনা ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়ানো প্রায় অসম্ভব; বিশ্বের অন্যান্য দেশেও উত্স খোঁজা উচিত: প্রতিবেদন
2021-04-01 16:03:00

সংবাদ পর্যালোচনা ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়ানো প্রায় অসম্ভব; বিশ্বের অন্যান্য দেশেও উত্স খোঁজা উচিত: প্রতিবেদন_fororder_0401yang

এপ্রিল ১: বিশেষজ্ঞদের মতে ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ‘প্রায় অসম্ভব’ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কোভিড ভাইরাসের উত্স খোঁজা উচিত। চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত যৌথ উত্স অনুসন্ধানদলের চীনা বিশেষজ্ঞরা গতকাল (বুধবার) বেইজিংয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছে।

হু’র বিশেষজ্ঞদলটি গত ১৪ জানুয়ারি উহানে পৌঁছায়। পৌঁছার পর তারা চীনা বিশেষজ্ঞদলের সঙ্গে মিলে সংক্রামক রোগী, আণবিক ট্রেসেবিলিটি এবং পশু ও পরিবেশ—এই তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেন। তারা হুয়ানান সিফুড বাজারসহ ৯টি জায়গা পরিদর্শন করেন এবং চিকিত্সক, ল্যাবের কর্মী ও সুস্থ হওয়া রোগীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে চীনা বিশেষজ্ঞদলের নেতা লিয়াং ওয়ান নিয়ান বলেন, যৌথ বিশেষজ্ঞদল প্রাকৃতিক হোস্ট থেকে কোল্ড চেইনের মাধ্যমে, সরাসরি, ইন্টারমিডিয়েট হোস্ট এবং ল্যাবের মাধ্যমে—এই চার পদ্ধতিতে ভাইরাসের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চালায়। এর মধ্যে ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ‘প্রায় অসম্ভব’ বলে তারা একমত হন। লিয়াং ওয়ান নিয়ান বলেন,

“সরাসরি আক্রান্ত হওয়াকে ‘সম্ভব’ থেকে ‘বেশ সম্ভব’ মনে করা হচ্ছে; ইন্টারমিডিয়েট হোস্টের মাধ্যমকে ‘বেশ সম্ভব’ থেকে ‘খুব সম্ভব’ বলে মনে করা হচ্ছে; কোল্ড চেইনের মাধ্যমে ছড়ানোকে ‘সম্ভব’ মনে করা হচ্ছে, এবং ল্যাব (দুর্ঘটনা) থেকে ছড়িয়ে পড়াকে ‘প্রায় অসম্ভব’ মনে করা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, হুয়ানান সিফুড বাজার থেকে কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার কথা বলা হচ্ছে। এ বাজারের পশুজাত পণ্যে ব্যাপক পরীক্ষা চালিয়ে ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন,

“হুয়ানান সিফুড বাজার বন্ধ হওয়ার পর পরিবেশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর দেখা গেছে, পরিবেশে ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে আছে, বিশেষ করে সিফুড বিক্রির জায়গায়। বাজারের পশুজাত পণ্যের ওপর ব্যাপক পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ পাওয়া গেছে। কোল্ড চেইন পণ্যের ওপরে আমাদের পরীক্ষা করা হয়নি। হুপেই প্রদেশের বাদুড় এবং চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু এবং বন্য পশুপাখির মধ্যে চালানো পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এসেছে। মহামারীর পূর্বে ও পরে ভাইরাসটি হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল ও বন্য পশুপাখির মাধ্যমে ছড়িয়েছে বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”

তিনি আরও জানান, চীনা বিশেষজ্ঞদলের কাছে যে তথ্য আছে, বিদেশি বিশেষজ্ঞদলের কাছেও একই তথ্য আছে। আরও বহু জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। তিনি বলেন,

“ভাইরাসের বিস্তৃতি—পশু থেকে মানুষে এবং মানুষ থেকে মানুষে—সম্ভবত অনেক সময় ধরেই ঘটেছে। তাই আরও বড় পরিসরে, বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। শুধু একটি জায়গা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ ভাইরাস সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য জানা সম্ভব।”

বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উহানের ঘটনার আগেই কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। সংক্রামক রোগ বিষয়ে চীনা বিশেষজ্ঞ ফেং চি চিয়ান মনে করেন, মহামারী যেখানে প্রথমে দেখা দিয়েছে, সে জায়গাটাই ভাইরাসের উত্সস্থল হতে নাও পারে। তিনি বলেন,

“যে-সব জায়গায় উহানের আগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে, সে-সব জায়গায় যৌথ গবেষণা চালানো উচিত।”

লিয়াং ওয়ান নিয়ান আরও বলেন, ভাইরাসের উত্স সন্ধানের কাজ চীন থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু তা শেষ হয়নি। ভবিষ্যতে হু’র নেতৃত্বে বিশ্বের বিজ্ঞানীরা উত্স অনুসন্ধানের কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা চালাবে বলে আশা করা যায়। এ ক্ষেত্রে হু ও চীনের বিশেষজ্ঞরা কয়েক বার আলোচনা করে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন,

“প্রথমত, বৈশ্বিক ডেটাবেস সম্প্রসারণ করা উচিত। এতে আণবিক, জিন ক্রম, ক্লিনিকল, মহামারীবিজ্ঞান, পশু তত্ত্বাবধান এবং পরিবেশ তত্ত্বাবধানের তথ্য থাকা উচিত। দ্বিতীয়ত, সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও আগে আক্রান্ত রোগী খুঁজে বের করা উচিত। চীনে এ কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।  তৃতীয়ত, পশু হোস্ট খুঁজে বের করার লক্ষ্যে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রচেষ্টা দরকার। চতুর্থত, কোল্ড চেইন এবং ফ্রোজেন খাবারের ভূমিকা নিয়ে আরো বেশি গবেষণা করা উচিত।”

তিনি বলেন, উত্সসন্ধান একটি খুব জটিল বিষয়। এটা রাতারাতি শেষ হওয়া সম্ভব না। চীনা বিজ্ঞানীরা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। হু না-করলেও চীনা বিজ্ঞানীরা এ কাজ অব্যাহত রাখবে।

(ইয়াং/আলিম/ছাই)