এপ্রিল ১: চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং সরকারি কার্যবিবরণীতে বলেছেন, নব্যতাপ্রবর্তনের মাধ্যমে অর্থনীতির উচ্চ গুণগত মান অর্জন করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় নতুন চালিকাশক্তির অনুসন্ধান জরুরি। ‘আজকের টপিক’ আসরে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে চীনের স্বনির্ভরতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘দেশের নিরাপত্তার’ অজুহাতে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্পের ওপর বহুবার না-হক চাপ প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির রফতানি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার তালিকায় আসে হুয়াওয়ে, হিকভিশন, এসএমআইসি এবং আইফ্লিটেকসহ চীনের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য হচ্ছে শিল্প চেইনের শৃঙ্খলা নষ্ট করা। অথচ চীনের জন্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে শিল্প চেইন এবং সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় বেশি জরুরি।
পয়লা মার্চ মার্কিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কমিটি কংগ্রেসের কাছে একটি চূড়ান্ত সুপারিশ-প্রতিবেদন পেশ করে। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) জানিয়েছে যে, ৭৫৬ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে কীভাবে ইউরোপ ও জাপানসহ মিত্রদের সঙ্গে কাজ করে চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে, সেই পরিকল্পনা আঁকা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতকে দুর্বল করা। হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেং ইয়ুং নিয়ান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত লক্ষ্য খুবই স্পষ্ট, আর তা হল: চীনের আধুনিকায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করা।
গত বছর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ‘জাতীয় উন্নয়নের কৌশলগত উপায় হিসাবে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা অর্জন’ প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। সম্মেলনে গৃহীত ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ ও ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়, দেশের অর্থনীতির নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, অবকাঠামো, কৌশলগত সম্পদ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে। বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ব্যতীত চীনের আধুনিকায়ন কেবল ফাঁকা বুলি হবে।
প্রযুক্তিগত নবত্যাপ্রবর্তন দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের একমাত্র উপায়। বিশ্ব বুদ্ধিজীবী সম্পত্তি সংস্থার প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ২০১২ সালে চীনে পেটেন্ট আবেদনের সংখ্যা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল উল্লেখ করেছে যে, ২০ বছর আগে আমেরিকান গবেষকরা বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে চীনাদের তুলনায় চারগুণ বেশি পেশাদার নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। তবে ২০১৮ সালের মধ্যে চীন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে লক্ষাধিক পেটেন্ট বেশি পেয়েছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ওয়াং চি কাং বলেন, চীনের গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ ২০১৫ সালের ১.৪২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২০ সালের আনুমানিক ২.৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে, যার মধ্যে মৌলিক গবেষণায় বিনিয়োগ ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে চীন আরও বেশি সমৃদ্ধ হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। মৌলিক খাতে গবেষণা জোরদার করা চীনের জন্য অপরিহার্য। সরকারি কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘মৌলিক গবেষণা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত নব্যতাপ্রবর্তনের উত্স। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’ আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রতি বছর চীনে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশি। এটি একটি শক্তিশালী অস্ত্র বলে মনে করা হয়। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)