সমুদ্র বাণিজ্যে আশা দেখাচ্ছে নির্মাণাধীন বন্দরগুলো
2021-04-01 20:38:53

সমুদ্র বাণিজ্যের নানা সংকটের মধ্য দিয়েই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাতারবাড়ি কিংবা পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হলে আন্তর্জাতিক যোগাযোগে পাবে নতুন মাত্রা। এদিকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি গভীর সমুদ্রবন্দরও আশা দেখাচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।

সমুদ্র বাণিজ্যে আশা দেখাচ্ছে নির্মাণাধীন বন্দরগুলো_fororder_caijing1

মোংলা সমুদ্র বন্দর, সংগৃহিত

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর বাগেরহাটের মোংলা বন্দর। প্রায় ৭০ বছর আগের এই বন্দর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমানো। খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলো ঘিরে এক সময় এ বন্দরও ছিলো জমজমাট। কিন্তু স্থানীয় পাটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে এ বন্দর। তারপরও প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪০০টি আন্তর্জাতিক জাহাজ নোঙর করে এ বন্দরটিতে।

এই বন্দরে একইসঙ্গে ৩৩টি জাহাজে পণ্য খালাস ও বোঝাই করা যায়। কিন্তু বন্দর চ্যানেলের গভীরতা কমে যাওয়ায় ৭ দশমিক ৫ মিটারের বেশি ড্রাফটের কোন জাহাজ এ বন্দরে ভীড়তে পারে না। ফলে এ বন্দরটিও মাদার ভেসেলের জন্য উপযোগী নয়। পুরনো এই বন্দরটির আধুনিকায়নে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ভবিষতে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ এই বন্দর পর্যন্ত পৌছলে মোংলা আবার গুরুত্ব ফিরে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দর। নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে সমুদ্র বন্দরটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। তবে বন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে রয়েছে অপ্রতুলতা।

সমুদ্র বাণিজ্যে আশা দেখাচ্ছে নির্মাণাধীন বন্দরগুলো_fororder_caijing2

পায়রা সমুদ্র বন্দর, গুগুল ম্যাপ

পটুয়াখালির রাবনাবাদ চ্যানেলে মূল ভূখন্ডের প্রায় ৭ হাজার একর জমির ওপর পরিকল্পিত এ বন্দরের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে হবে এটি হবে দেশের একটি গভীর সমুদ্র বন্দর। পরিকল্পনামতে বন্দর থেকে সমুদ্রের দিকে টানা ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ টার্মিনাল করা হবে।

একসঙ্গে রাখা যাবে ৭৫ হাজার কন্টেইনার। গভীরতার বিচারে এ বন্দরে ১৪ মিটার ড্রাফট পর্যন্ত জাহাজ ভীড়তে পারবে। আর ১২ মিটারের বেশি ড্রাফট থাকলে সেটাকে গভীর সমুদ্র বন্দর বলা হয়। প্রকল্পকের কাজগুলোকে ১৯ টি ভাগে ভাগ করে এগিয়ে চলছে এ প্রকল্পের কাজ।

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত সমুদ্রবন্দরের অন্যতম মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। ভাটার সময়ও সমুদ্র থেকে বন্দরের মাতারবাড়ি চ্যানেলের গভীরতা থাকে ১৪ মিটার।

সমুদ্র বাণিজ্যে আশা দেখাচ্ছে নির্মাণাধীন বন্দরগুলো_fororder_caijing3

মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর, গুগল ম্যাপ

জোয়ারের সময় প্রাকৃতিকভাবেই বাড়ে ১৮ মিটারের বেশি। সম্ভাবনাময় এ বিদ্যুত্ কেন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের কাজ। বলা হচ্ছে ২০২৬ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে বহুমুখি টার্মিনাল কন্টেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হবে। এর আগে ২০২২ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হবে একটি কয়লা টার্মিনাল।

চট্টগ্রামের মিরসরাইতে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম বেসরকারি সমুদ্রবন্দর। মিরসরাই ইকোনমিক জোন সংলগ্ন এই সমুদ্রবন্দর উপকূল লাগোয়া, বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খুবই কাছে। ৪০ হাজার টনের মাদার ভেসেল নোঙরের সুবিধা রেখে নির্মাণ করা হচ্ছে এই সমুদ্রবন্দর। আকারে ছোট হলেও বেসরকারি এই সমুদ্রবন্দর নতুন আশা সঞ্চার করছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে।

এর বাইরে নোয়াখালি ও কুতুবদিয়াতেও সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আলোচনা আছে সরকারের ভেতর বাইরে।