৪৫তম হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব
2021-03-31 16:54:57

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব বা এইচকেআইএফএফ-র ওপর দৃষ্টি দেবো।

বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সব সবেমাত্র শেষ হয়েছে। এবার হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব শুরু হচ্ছে। প্রতি বছরের মার্চ বা এপ্রিল মাসে চীনা ভাষার চলচ্চিত্রাঙ্গন তথা এশীয় অঞ্চলের সবচে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম এই হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব। এতে বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবের পুরস্কার পাওয়া অনেক নতুন চলচ্চিত্র প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করা হচ্ছে। তাই বলা যায়, হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব চীনের সঙ্গে বিদেশি চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ সেতুর ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

চমত্কার চলচ্চিত্র ও বৈচিত্র্যময় কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতি বছর হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব অসংখ্য দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র অনুরাগী ও পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তা ছাড়া, চলচ্চিত্র উত্সবের একটি অংশ হলো ‘ফায়ারবার্ড ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস’। এর আওতায় বিশ্বের নতুন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ও শিল্পকর্ম নির্বাচিত হয়।

 

গত বছর নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব অফলাইনে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী বাতিল করতে বাধ্য হয়। চলতি বছর ভালোভাবে মহামারী নিয়ন্ত্রণের প্রেক্ষাপটে ৪৫তম হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব ১ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উত্সবটি প্রথমবারের মতো অনলাইন ও অফলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

 

এখনও সারা বিশ্বে মহামারীর ক্ষয়ক্ষতি চলছে। এর মধ্যেও ৪৫তম হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের উত্সবে অনেক আকর্ষণীয় বিষয় রয়েছে। এবারের উত্সবে মোট ১৯৪টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব চলচ্চিত্র বিশ্বের ৫৮টি দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছে। যার সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়ে কিছুটা কম। ২০১৯ সালে ৪৩তম চলচ্চিত্র উত্সবের সময় মোট ২১৬টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিলো।
 

আরোন কওয়াক নামে হংকংয়ের বিখ্যাত অভিনেতা ও গায়ক এবারের উত্সবের চলচ্চিত্র-দূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্র ‘Theory of Ambitions’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। ২০১৭ সালে এ চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হয়। এরপর থেকে এ বিষয়ে খুব কম খবর পাওয়া যাচ্ছিল। এবারের ৪৫তম হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে এ চলচ্চিত্রটির প্রদর্শন খুব প্রত্যাশিত ছিল। ‘Septet : The Story of Hong Kong’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। এতে বহু বছর ধরে হংকংয়ের পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এ চলচ্চিত্রটি মুলভূভাগের বড় স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

‘Wheel Of Fortune And Fantasy’ নামে জাপানি এক চলচ্চিত্রের পরিচালক Ryûsuke Hamaguchi রিউসুকে হামাগুছি’র চলচ্চিত্র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হবে। এ চলচ্চিত্র চলতি বছর বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে ‘জুরি পুরষ্কার’ জয় করে। এ চলচ্চিত্রটি বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে প্রদর্শনের পর দর্শক সমাদর পায়। আশা করা যায়, হংকংয়ে এ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের পর খুব শিগগিরি চীনের মুলভূভাগের দর্শকরা তা দেখতে পাবে।

 

স্ট্যানলি কুয়ান কাম-পাং নামে হংকংয়ের পরিচালক এবারের চলচ্চিত্র উত্সবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ৪০ বছরেরও বেশি সময়ে তিনি চীনা চলচ্চিত্র ইতিহাসের অসংখ্য ক্ল্যাসিকাল শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন এবং বহুবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনে পুরস্কার লাভ করেন। এবারের চলচ্চিত্র উত্সবে তার ১৩টি চলচ্চিত্র প্রদর্শন কর হয়।

 

এবারের হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে প্রদর্শিত মুভিগুলো দেখার পর এবার সবাই মিলে চলচ্চিত্র উত্সবের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্টের মূলধন বিনিয়োগের ওপর নজর দেবো।

চলচ্চিত্র খাতে এশীয় অঞ্চলে সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ প্লাটফর্ম হিসেবে হংকংয়ের এশীয় চলচ্চিত্র ফাউন্ডেশন বা এইচএএফ। এটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে গোটা চীনা ভাষার অঞ্চলে অব্যাহতভাবে বিপুল পরিমাণ প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে কিছু শিল্পকর্ম বিশ্ব চলচ্চিত্রাঙ্গনে লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে, আর কিছু চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর বক্স অফিসে খুব আয় অর্জন করে।

 

বলা যায়, এইচএএফ গোটা এশীয় অঞ্চলে সবচে প্রভাবশালী ও সৃজনশীল চলচ্চিত্রের বিনিয়োগ প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে।

এইচএএফের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, চলতি বছর মোট ৪৮টি প্রকল্প ছিল। এর মধ্যে ৮টি হলো তথ্যচিত্র এবং অন্য ২০টি হলো ফিচার ফিল্ম। তথ্যচিত্রগুলোর মধ্যে মোট তিনটি হলো চীনা পরিচালকের শিল্পকর্ম। সেগুলোর মধ্যে সবচে আকর্ষণী একটি হলো পরিচালক ওয়াং বিং-এর পরিচালিত ‘I come from ikotun’। ikotun হলো নাইজেরিয়ার লেগোসের একটি ব্লকের নাম। এ তথ্যচিত্রে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সময় নাইজেরিয়ার লেগোস এবং চীনের কুয়াংচৌ শহরের প্রধান চরিত্রগুলোর নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়।

 

২০টি ফিচার ফিল্মের মধ্যে চীনা ভাষায় তৈরি ফিল্মের সংখ্যা ১২টি। দেখা যায়, মহামারী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃষ্টির উত্সাহ থামিয়ে দিতে পারে নি। আমরা আশা করি, মহামারী খুব দ্রুত শেষ হবে এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র উত্সব যথাসময় প্রদর্শিত হবে।

 

(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)