মার্চ ২৯: সম্প্রতি বিশ্বের কয়েকটি বন্দরে গুরুতর কনটেইনার জটের সমস্যা দেখা গেছে। বাংলাদেশের বৃহত্তম বন্দর-চট্টগ্রামেও একই সমস্যা। চট্টগ্রামের পরিচালনা ব্যুরোর কথা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ রপ্তানি-আমদানির পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে-যায়। যদিও সারা বছর বন্দর সক্রিয়া থাকে, কিন্তু কনটেইনার জট কাটে না। এর কারণ কী?
চট্টগ্রামের পরিচালনা ব্যুরোর বক্তব্য অনুসারে, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ৪ হাজারের মতো কনটেইনার আসে এবং এর ৬০ শতাংশ চীন থেকে আসে। বন্দরে সেগুলো জমে থাকায় স্থানীয় চীনা কম্পানিগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশের চীনা প্রবাসী সমিতির উপ-পরিচালক ছাই ছুন লেই বলেন, “চীন থেকে রওনা দিয়ে বাংলাদেশের কারখানা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছাতে সাধারণত এক মাস লাগে। কিন্তু মাঝে মাঝে ২ মাসের বেশি সময় লেগে যায়। এতে আমাদের ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া, ক্যাশ-ফ্লো-এর জন্য এটা অনেক অসুবিধাজনক।’
২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৭১ লাখ ৩০ হাজার টন পণ্য। বন্দরে পৌঁছোনো জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৭২৮টি, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৭৯টি কম। চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা জানান, বন্দরে আসা কনটেইনারের সংখ্যা প্রতি বছর ১২ শতাংশ করে বেড়ে থাকে।
চট্টগ্রাম বাণিজ্য ও শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান মাহবুবুর আলম বলে, “আগে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিবছর ১০ লাখ কনটেইনার তো দূরের কথা, ৫ লাখ হ্যান্ডেল করাও খুব কঠিন ছিল। এখন এখানে প্রতিবছরে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেল করা হয়। আমি মনে করি, কনটেইনারের সমস্যার জন্য শুধু বন্দরকে দায়ী করলে হবে না, সংশ্লিষ্ট শুল্ক, পরিবহন ও অন্যান্য বিভাগেরও দায় আছে। সব কাজ ঠিকঠাকমতো হলে কনটেইনার জট লাগার কথা না।”
প্রতিবছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। বন্দরে জায়গার অভাব, খালাসের যন্ত্রপাতির অভাব, ল্যাব টেস্টের ক্ষমতার অভাব, শুল্ক আদায়ের অনুন্নত মান, ইত্যাদি সমস্যা বন্দরের খালাসের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। চট্টগ্রামের শুল্ক বিভাগের মহাপরিচালক ফাখরুল আলম বলেন, “বাংলাদেশে মোট ৬টি শুল্ক বিভাগ আছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামেরটা সবচেয়ে বড়। ৬৮ থেকে ৭০ শতাংশ শুল্ক ক্লিয়ারেন্স দলিলপত্র আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে দিতে পারি। বাকি ৩০ থেকে ৩২ শতাংশের দলিলপত্র দিতে দুই-তিন দিন, চার-পাঁচ বা এগারো-বারো দিনও লেগে যেতে পারে।”
বন্দরে পণ্য জমে থাকার কারণ নিয়ে চীনের কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কম্পানির কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রকল্পের চীন পক্ষের উপ-পরিচালক হুয়াং ইউয়ে ছুয়ান বলেন, “মহামারীর পর, বাংলাদেশের আমদানিপণ্যে অনেক বৈচিত্র্য এসেছে। আগে মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি হতো। এখন তো মহামারী-প্রতিরোধক পণ্যের আমদানিও বাড়ছে। এর কারণে বন্দরে আসা কনটেইনার বাড়ছে। তাই কনটেইনার জটও বাড়ছে।” (ইয়াং/আলিম/ছাই)