বাংলাদেশ ফের করোনা-প্রাদুর্ভাবে : পরিস্থিতি হতে পারে আগের চেয়েও মারাত্মক
2021-03-28 20:55:21

করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিচ্ছে বাংলাদেশে। জানুয়ারি থেকে টানা ৭ সপ্তাহ করোনা সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে ছিল। আশা করা হয়েছিল করোনা পরিস্থিতি হয়তো বা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু মার্চের শুরু থেকেই সংক্রমণ ফের উর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। এরই মধ্যে সংক্রমণ ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে সবশেষ সপ্তাহে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২৭ মার্চ চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৩৯ জন। টানা ষষ্ঠ দিনে সংক্রমণ রয়েছে সাড়ে তিন হাজারের ওপরে।
গত তিন সপ্তাহে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের একটা তুলনামূক চিত্র বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে গত তিন সপ্তাহে তা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ৭ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ ৫৩তম সপ্তাহে মারা গেছেন ৭৬ জন আর আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫১২ জন। ৫৪তম সপ্তাহে মৃত্যু প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ১৪১ জনে। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয় প্রায় দ্বিগুণ ১২ হাজার ৪৭০ জন। ২৭ মার্চ পর্যন্ত সবশেষ সপ্তাহে মারা গেছেন ১৪১ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ১০০ জন। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে মারাত্মক আকার নিতে চলেছে করোনা সংক্রমণ। 
চলতি মার্চ মাসে করোনা ভয়বহতা বৃদ্ধি বুঝতে আমরা আরো কিছু তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করতে পারি। ২২ মার্চ গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় তিন হাজার মানুষ আক্রান্ত হন করোনা ভাইরাসে। একই দিন মারা যান ৩০ জন যা আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ঠিক পরদিন ২৩ মার্চে ৮ মাস পর আবারও করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়ে যায় সাড়ে তিন হাজার। এবং গত প্রায় এক সপ্তাহ এ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। 
কিন্তু শীতের মধ্যে করোনা প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসে গরমের মধ্যে আবার মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে- এ নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের কেউ কেউ বলছেন, শীতে নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য ভাইরাস কার্যকর থাকায় করোনা খুব সুবিধে করতে পারেনি। এখন গরমে ওইসব ভাইরাসের প্রকোপ কমায় করোনা ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তবে, বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন স্বাস্থ্যবিধি মানতে চরম উদাসিনতাই করোনা সংক্রমণ বাড়ার প্রধান কারণ। 
গত নভেম্বরে যখন করোনা সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয় তখন সরকার শক্ত অবস্থানে যায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে। তখন ভালোভাবেই করোনা সংক্রমণ আটকানো গিয়েছিল। জানুয়ারিতে পরিস্থিতি খুব ভালো ছিল। এ সময় মৃত্যু এক অঙ্কে নেমে আসে এবং সংক্রমণ নামে ২ শতাংশে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানায় চরম উদসীন্যই পরিস্থিতিকে ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিলো।
এর মধ্যে আরেকটি আশঙ্কার কথা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ৪ হাজার ৬০৪ রকম পরিবর্তিত রূপের সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৩৪টি একেবারেই আলাদা- যা বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে সংক্রমিত ভাইরাসের জিনোমের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ভাইরাসের মিল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সার্স কোভ-টু এর যে ধরনটিকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংক্রমণশীল মনে করা হয় সেটির ৯৮ শতাশং বাংলাদেশি সিকোয়েন্সে মিলেছে। 
সবকিছু মিলে এ দফায় একটা কঠিন পরিস্থির আভাষ মিলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিস্থিতি এবার কোন দিকে যাবে বোঝা যাচ্ছে না। এর মোকাবেলিয় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে স্কুল খোলার সময় ৩০ মার্চ থেকে পিঁছিয়ে ২৩ মে করা হয়েছে। তবে, এখনো লকডাউন বা এ জাতীয় কিছুর কথা সরকার ভাবছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। 
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। আর সংক্রমণ রোধে দেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে বলে অভিমত তার। কিন্তু চলমান টিকা কর্মসূচিতেও একটা ধীরভাব এসেছে। টিকা গ্রহণেও মানুষের আগ্রহ নেই। এ পর্যন্ত দেশের মাত্র ৩ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেছে। মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ বাড়ার অর্থ হচ্ছে মৃত্যু বাড়া। কাজেই এ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশকে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে।

মাহমুদ হাশিম