“ইউরোপকে অবশ্যই তার নিজের স্বার্থ অনুসরণ করতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে”
2021-03-26 15:21:04

মার্চ ২৬: মার্চের শুরুতে বিশেষ এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘চীন-ইইউ বিনিয়োগ চুক্তির’ উপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়। একটি চীনবিরোধী জার্মান পত্রিকা ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ভালদিস ডম্ব্রভস্কিসের সহকারী মাইকেল হাগারকে জিজ্ঞাসা করেছিল, চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য ইইউ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণ এবং তার সাথে সমন্বয়ের জন্য অপেক্ষা করছে না কেন। তার উত্তর ছিল- ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গ নয়।’

বন্ধুরা, এ সম্পর্কে বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

এই সপ্তাহের শুরুতে, ‘উইকলি ইকোনমিক’-এর প্রাক্তন সম্পাদক-ইন-চিফ এবং ডয়চে ব্যাংকের জনসংযোগ প্রধান, স্টিফেন ব্যারন দ্য বিজনেস ডেইলি-তে এক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের স্বার্থ একই পথে চলে না। যুক্তরাষ্ট্রকে নয়, চীন ইউরোপীয় মহাদেশের জন্য অনেক বেশি সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্র তার বৈশ্বিক আধিপত্য ছাড়তে চাচ্ছে না এবং চীনের উত্থান ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে ইউরোপকে অবশ্যই তার নিজস্ব স্বার্থ অনুসরণ করতে হবে, তার নিজস্ব পথে চলতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। তবে এই সপ্তাহের শুরুতে ইইউ সদস্য দেশগুলির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করেন। যারা চীনের সাথে ইতিমধ্যে ফলপ্রসূ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন বা রাখতে চান তাদের জন্য এটি একটি চপেটাঘাত।

একটি স্বাধীন জার্মান তথ্য-পরিষেবা সংস্থা ‘টেলিপোলিস’ বলেছে, ‘চীনের বিরুদ্ধে ইইউ দেশগুলির গৃহীত পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রও চীনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’

 

এই নিষেধাজ্ঞার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যে কারণ উল্লেখ করেছেন, তা হলো- সিনচিয়াংয়ের উইঘুরদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ‘বন্দি শিবিরে’ প্রচুর পরিমাণ মানুষ আটক করে রাখা। চীন উল্লেখ করেছে যে সন্ত্রাস ও চরমপন্থা রোধে এটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। এই তথাকথিত ‘বন্দি শিবিরগুলো’ হলো বৃত্তিমূলক দক্ষতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলি সন্ত্রাসের ঝুঁকি কমানোর জন্য মানুষজনকে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।

 

ফরাসি স্বতন্ত্র লেখক ম্যাক্সিম ভিভাস সাম্প্রতিক এক সাক্ষাত্কারে বলেন, এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করেছিল। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির নির্দেশনায় একটি ভুয়া এনজিও মার্কিন ডলার ব্যয় করে সিনচিয়াং সম্বন্ধে অসংখ্য জাল খবর তৈরি করেছে। তার মূল বক্তব্য হলো, চীনের অগ্রগতি বিলম্বিত করা এবং নতুন রেশমপথ বা ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রকল্পে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্দার পিছনে থেকে কলকাঠি নেড়েছে। চীন সরকার ইইউ’র নিষেধাজ্ঞার জবাবে দ্রুত ও শক্তিশালী সাড়া দিয়েছে। চীন সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষায় অটল রয়েছে।

তিনি বলেন, চীনের গৃহীত পাল্টা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমি কিছু ইউরোপীয় নেটিজেনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। একটি মন্তব্যে বলা হয়েছে, ইউরোপের বেদনার কারণ হলো- চীনের পাল্টা আক্রমণ। তবে সাবধান হওয়া উচিত। কারণ চীনের সঙ্গে ইউরোপের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে বিরাট ক্ষতি হবে।

 

মহামারী সংক্রমণের এ সময় চীন হলো ইউরোপ ও জার্মান বৈদেশিক অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞাগুলো অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। ইইউ-এর আচরণ একটি বড় গাছের ডালপালা কেটে ফেলার মতো। ইইউকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে- ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের অংশ নয়। (জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)