২০২০ সালের শেষের দিকে চীন সম্পূর্ণভাবে হতদারিদ্র্য থেকে মুক্তি লাভ করে। এটি চীনা জনগণের অর্জিত অন্যতম বৃহত্তম সাফল্য। এর প্রভাব কেবল যে চীনাদের ওপরই পড়বে, তা নয়, বাইরের দুনিয়ার ওপরও এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। ‘আজকের টপিক’ আসরে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
‘বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অবদান ৭০ শতাংশেরও বেশি। চীনের সাফল্য প্রচুর সম্পদ সৃষ্টি করেছে। এসব সম্পদ আফ্রিকা ও বিশ্বের অন্যান্য উপযুক্ত কমিউনিটিতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।’ কেনিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কেভিনস কেনিয়া ফ্ল্যাগ মিডিয়া গ্রুপের ওয়েবসাইটে ‘চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য আফ্রিকার জন্য তাত্পর্যপূর্ণ’ শীর্ষক প্রবন্ধে সম্প্রতি এ মন্তব্য করেন। প্রবন্ধে বলা হয়, চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা থেকে আফ্রিকান দেশগুলো শিখতে পারে।
নাইজেরিয়ার সেন্টার ফর চায়নিজ স্টাডিজের পরিচালক ওনু নাইজু নাইজেরিয়ার মূলধারার গণমাধ্যম ‘দ্য ভ্যানগার্ড’-এ লিখেছেন, আফ্রিকার ওপর চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের মূল প্রভাব এটা যে, মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে, দারিদ্র্য কোনো নিয়তি নয়। যতক্ষণ প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি এবং একটি টেকসই নীতিগত কাঠামো থাকবে, ততক্ষণ দারিদ্র্য দূর করা কঠিন কাজ না।
১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, সাহারানের দক্ষিণ আফ্রিকাতে চরম দরিদ্র মানুষের অনুপাত ৬১.৩ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪০.২ শতাংশে। আজ, চীনের সফল অভিজ্ঞতা আফ্রিকার জন্য রেফারেন্স ও অনুপ্রেরণা নিয়ে এসেছে। এ ছাড়া, চীন ও আফ্রিকা গত শতাব্দীর ৫০-এর দশক থেকে দারিদ্র্যবিমোচন খাতে সহযোগিতা শুরু করে। অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষিপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় উত্পাদন খাতে সহযোগিতা, এবং মানবসম্পদ প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে আফ্রিকার দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবদান রাখতে ইচ্ছুক চীন। নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আফ্রিকার জনগণ চরম দারিদ্র্য নির্মূল করতে পারবে এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও উন্নত জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে বলে অনেকের বিশ্বাস।
হতদারিদ্র্য থেকে মুক্তির লড়াইয়ে জয়লাভের পরে চীন পরবর্তী লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে চলেছে। এ লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ৩০ বছরে চীনকে সম্পূর্ণ আধুনিক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা। জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে চীনা জনগণের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণকে সমৃদ্ধ করার এবং দেশকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলির জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফরাসি ‘রাজধানী’ পত্রিকা বলেছে, ১৯৯৭ সালে লরিয়াল যখন চীনে প্রবেশ করে, তখন চীনা মহিলারা খুব কমই লিপস্টিক ব্যবহার করতেন। ‘এখন তারা দিনে পাঁচ থেকে ছয় ধরণের প্রসাধনী ব্যবহার করেন, অন্যদিকে ফরাসি মহিলারা কেবল দিনে তিন ধরণের প্রসাধনী ব্যবহার করেন। লরিয়েল সাফল্যের সাথে প্রথমে চীনাদের বিউটি মার্কেট দখল করেছে।
চীন ও ইউরোপ হচ্ছে বিশ্বের দুটো বড় বাজার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র পরিসংখ্যান অনুসারে, গেল বছর চীন থেকে ইইউ’র ২৭টি দেশের আমদানিকৃত পণ্যের মূল ৩৮৩.৫ বিলিয়ন ইউরো ছিল, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৫.৬ শতাংশ বেশি। ইইউ চীনে রফতানি করেছে ২০২.৫ বিলিয়ন ইউরো, যা আগের বছরের চেয়ে ২.২ শতাংশ বেশি। চীন ইইউ’র বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। ‘চীন-ইইউ ভৌগোলিক সূচক চুক্তি’ এই বছরের শুরুতে কার্যকর হয়েছে এবং চীন-ইইউ বিনিয়োগ আলোচনা গেল বছরের শেষ দিকে সম্পন্ন হয়েছে। স্প্যানিশ ‘অর্থনীতিবিদ’ পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে চীনে বিনিয়োগ করা হবে কি হবে না, সেটা প্রশ্ন নয়; প্রশ্ন হচ্ছে চীনে কতো বিনিয়োগ করা হবে।’ (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)