‘হপ্তানামা’: চীন-মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের কৌশলগত সংলাপ
2021-03-24 16:29:58

গত ২০ মার্চ কলম্বিয়ায় চীনের তৃতীয় দফার টিকার চালান দেশটির রাজধানীতে পৌঁছায়। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে সেদেশের জনগণের উদ্দেশে এসময় একটি ভিডিও-ভাষণ দেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

প্রেসিডেন্ট সি ভাষণে বলেন, বিশাল প্রশান্ত মহাসাগর চীন ও কলম্বিয়ার জনগণের গভীর মৈত্রীর পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৪১ বছরে চীন ও কলম্বিয়ার সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীন ইতোমধ্যেই কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত  হয়েছে। কলম্বিয়ার বিভিন্ন খাতের নির্মাণকাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। দু’পক্ষের সাংস্কৃতিক বিনিময়ও দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ মৈত্রীকে মজবুত করেছে।

প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, আকস্মিক কোভিড-১৯ মহামারীর আঘাতের পর, চীন ও কলম্বিয়া পরস্পরকে সমর্থন করেছে এবং মহামারী প্রতিরোধে সহযোগিতা চালিয়েছে। এর আগে চীন থেকে দুই দফায় চীনা টিকা কলম্বিয়ায় পৌঁছেছে। এতে কলম্বিয়ার টিকা-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চালিকাশক্তি যোগাবে।

তিনি আরও বলেন, মহামারী মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও মৈত্রী জোরদার করতে হবে এবং দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতাকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।

 

গত ২২ মার্চ চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও কুয়েতের আমির নওয়াফ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহ দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে পরস্পরকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান।

বার্তায় সি চিন পিং বলেন, বিগত অর্ধ শতাব্দীতে দু’দেশের ঐতিহ্যগত মৈত্রী গভীরতর হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থাও জোরদার হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতাও ফলপ্রসূ।

 

 

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে দু’দেশের সহযোগিতা ও যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ। কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় চীন। তাঁর দেশ কুয়েতের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক বলেও জানান তিনি।

 

কুয়েতের আমির তার শুভেচ্ছাবার্তায় বলেন, দু’দেশের সম্পর্ক দৃঢ়, যা অব্যাহতভাবে উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। দু’দেশ যৌথভাবে বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা রয়েছে। কুয়েত চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা আরও উন্নত করতে ইচ্ছুক।

 

গত ২৩ মার্চ চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং ফুচিয়েন প্রদেশ পরিদর্শন করেছেন। এদিন বিকেলে তিনি যথাক্রমে নানপিং শহরের উচিশান জাতীয় উদ্যানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন পরিচালনা কেন্দ্র, শিংছুন জেলা ইয়েনচিখ্য পরিবেশগত চা উদ্যান ও উশি উদ্যান পরিদর্শন করেন।

 

প্রেসিডেন্ট সি সেখানে পরিবেশগত সভ্যতার নির্মাণ কাজ, চা শিল্পের উন্নয়ন এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ের খোঁজ-খবর নেন।

 

২. চীন-মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের কৌশলগত সংলাপ

 

সম্প্রতি চীন-মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের কৌশলগত সংলাপ আলাস্কার অ্যাঙ্কারেজে আয়োজিত হয়। এটি হলো জো বাইডেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চীনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রথম মুখোমুখি সংলাপ। সংলাপের পর চীন জানিয়েছে, দু’দেশ নিজেদের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি এবং দু’দেশের সম্পর্ক ও অভিন্ন স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আন্তরিক, গভীর, দীর্ঘ ও গঠনমূলক আলোচনা করেছে। চীন মনে করে, এবারের সংলাপের মাধ্যমে  দু’দেশের পারস্পরিক সমঝোতা বাড়িয়েছে। তবে দু’দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মতভেদ রয়েই গেছে।

 

 কোনো কোনো গণমাধ্যম আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, এবারের আলোচনার কোনো অগ্রগতি হবে না।

আসলে দু’দেশের সম্পর্ক এ পর্যায়ে নিয়ে আসার দায় যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্বের সামনে এই সত্যটি আলাস্কায় আবারও যেন ফুটিয়ে তুলেছে খোদ যুক্তরাষ্ট্র।

 

স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বড় রাষ্ট্রের আত্মবিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের নেই। দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অতি সাবধানে ‘চার দেশের নিরাপত্তা সংলাপ’, জাপানের সঙ্গে ২+২ বৈঠক, ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরের পর চীনের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। নিজের মিত্রদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তা। অথচ এ ধরনের তত্পরতা কোনো কাজে আসবে না।

 

চীন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এবারের সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপে মার্কিন কর্মকর্তাদের ভিত্তিহীন অভিযোগ ও আধিপত্যবাদী আচরণকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় পলিট ব্যুরোর সদস্য ও বৈদেশিক কর্ম-কমিশন কার্যালয়ের পরিচালক ইয়াং চিয়ে চি প্রমাণ দিয়ে খণ্ডন করেছেন।  পাশাপাশি তিনি বলেন, তাইওয়ান, হংকং ও সিনচিয়াং হলো চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীন দৃঢ়ভাবে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে।

যদিও সংলাপে দু’দেশের অনেক মতভেদ দূর হয়নি, তবুও চীন দু’দেশের সম্পর্ক ও গোটা বিশ্বের স্বার্থ সুরক্ষার চেষ্টা করতে থাকবে বলে সংলাপে স্পষ্ট জানিয়েছে।

তা ছাড়া, সংলাপে চীন অব্যাহতভাবে বহুপক্ষবাদের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

বস্তুত, চীনের দরজা সংলাপের জন্য সবসময়ই খোলা ছিল ও ভবিষ্যতেও থাকবে। চীন বিশ্বাস করে, শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা ও অভিন্ন স্বার্থের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সমাজের মতৈক্য রয়েছে।

(রুবি/এনাম/শিশির)