২০২১ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের ভাল সূচনা
2021-03-24 10:08:07

২০২০ সালে চীনের পণ্য বাণিজ্যের রপ্তানি ও আমদানির পরিমাণ ছিল ৩২.১৬ ট্রিলিয়ান ইউয়ান। তা ২০১৯ সালের তুলনায় ১.৯ শতাংশ বেশি এবং সর্বোচ্চ রেকর্ড। চীন বিশ্বের একমাত্র অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে পণ্য বাণিজ্যের বৃদ্ধি বাস্তবায়ন করে।

চলতি বছরের প্রথম দুমাসে চীনের পণ্য বাণিজ্যের রপ্তানি ও আমদানির পরিমাণ ৫.৪৪ ট্রিলিয়ান  ইউয়ানে পৌঁছায়। তা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩২.২ শতাংশ বেশি। বিশেষ করে,  চীনের রপ্তানি ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ৫০.১ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত চীনের রপ্তানি প্রথম বারের মতো ইতিচাবক বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ ও সংস্কার চালু হবার সাথে সাথে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য কি উন্নত হবে? আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রাধান্যগুলো কী?  আমরা কয়েকটি চীনা কোম্পানিতে গিয়ে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাই।

সু চৌ শহরের সাইউ নামে একটি কোম্পানি উত্পাদনে ব্যস্ত । বসন্ত উত্সবের ছুটির সময়েও কারখানার ৮০ শতাংশ মেশিন সাধারণ দিনের মতো চালু ছিল। কোম্পানির সিইও উ সিয়াও পিং বলেছেন, অর্ডার অনেক বেশি পেয়েছি এবং সবাই খুব পরিশ্রম করছে। এটি ফোটোভোলটাইক ব্যাকপ্লেন নির্মাতা কোম্পানি। ২০২০ সালের শুরু দিকে কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে কোম্পানির ব্যবসা বেশ আঘাত পেয়েছে। বিশেষ করে বিদেশে রপ্তানির চাহিদ সঙ্কুচিত হয় বলে রপ্তানি বেশ হ্রাস পেয়েছে।‌ এমন প্রেক্ষাপটে কোম্পানিটি মোকাবিলা ব্যবস্থা জোরদার করে। যেমন: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও জাপানে নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া, বিদেশি ক্লায়েন্টদের প্রতিরোধ সামগ্রী পাঠানো, এবং ভিডিওর মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সেবা প্রদান করা ইত্যাদি। এসব ধারাবাহিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজারকে স্থিতিশীল করেছে। কোম্পানির সিইও মনে করেন, প্রযুক্তির নবায়ন একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার মাধ্যম। তাঁরা বাজারে ব্যাপক জরিপ চালু করেন। যেমন: ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় বাড়িঘরের বেশিরভাগ ছাদ লোহার থালা দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এর ওপর ফটোভোলটাইক পণ্য ব্যবহার করতে চাইলে এ পণ্য হালকা হতে হবে। তাই কোম্পানি শক্তিশালি, বলিষ্ঠ ও হালকা এক ধরনের ফোটোভোলটাইক ব্যাকপ্লেন তৈরি করেছে এবং এ পণ্য দ্রুত বাজারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

২০২০ সালে কোম্পানির গবেষণা কর্মী ৭০ জন থেকে বেড়ে ১০০জনে এবং চলতি বছরে ১৫০ জনে দাঁড়াবে। কিছু দিন আগে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে কারিগরি স্কুল এবং সেখানে নিয়মিতভাবে কারিগরদের পরিচর্যা করা হয়। ফোটোভোলটাইক ছাড়া অন্য ক্ষেত্রেও কোম্পানি ব্যবসা প্রসারিত করছে।  নতুন ধরনের জ্বালানি চালিত গাড়ি, হাই স্পিড ট্রেন, ৫জি টেলিযোগাযোগসহ নানা ক্ষেত্রে তাদের পণ্য ব্যবহার করা হবে। বিদেশেও তারা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে এবং প্রযুক্তি নবায়নের মাধ্যমে রপ্তানি এগিয়ে নিয়ে যাবে।

চীনা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিনিময় কেন্দ্রের তথ্য বিভাগের উপপ্রধান ওয়াং সিয়াও হং বলেছেন, গুণগতমান ও কাঠামোগত সমস্যা এখনও চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নের  প্রধান বাধা। নবায়ন যেমন বাণিজ্যের উচ্চ গুণগতমান উন্নয়নের চালিকাশক্তি, তেমনি পণ্যের মূল্য উন্নয়নের চাবিকাঠি।

কোম্পানির নাবায়ন ছাড়া, পরিবহন ব্যবস্থাও চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়নে নিশ্চয়তা যোগায়। ছেংতু আন্তর্জাতিক রেল স্টেশন থেকে ৫০টি মালগাড়ি জার্মানির  উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এসবে রয়েছে গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। এ পণ্যগুলো জার্মানির বোশ কোম্পানিতে পৌঁছানো হবে। চলতি বছরে ছেংতু থেকে বোশ কোম্পানিকে ৩৮০০টি কন্টেইনার পাঠানো হবে এবং মার্সিডিজ-বেঞ্জ ও হোন্ডাসহ নানা কোম্পানিকে সরঞ্জাম পাঠানো হবে। লাইওয়ানথ নামে এ সরঞ্জাম কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, ২০২১ সালে কোম্পানির  বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৪০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে। তা ২০২০ সালের তুলনায় ১ গুণ বেশি। তার মনে চীন-ইউরোপ পণ্য রেলপথের সাহায্যে তারা এমন সাফলতা অর্জন করছে। এ ট্রেনের মাধ্যমে তাদের সরঞ্জাম সারা ইউরোপে পাঠানো হয়। পাশাপাশি, ছেংতু-ছুং ছিং দুশহরের অর্থনৈতিক যৌথ পরিকল্পনার সাহায্যে ছেংতুতে অবস্থিত এ কোম্পানি ছুংছিং শহরে ব্যবসার সুযোগ খুঁজে পেয়েছে। দু শহরে চালু হয়েছে চীন-ইউরোপ রেল, তবে রুট ভিন্ন বলে তারা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাঠানোর রুট বাছাই করতে পারে।

২০২০ সালে মহামারির কারণে ফ্লাইট, ও বন্দর বন্ধ হয়ে গেছে। নৌ পরিবহনে দক্ষতার অভাব এবং পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়েছে। চীন-ইউরোপ রেল পরিবহনের সুবিধা তুলনামূলক বেশি। এটির রুট বেশি, সারা দিন চালু থাকে,  এবং ব্যয় কম। ফলে এ পরিবহন পদ্ধতি এশিয়া ও ইউরোপকে সংযুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ এক সেতুতে পরিণত হয়। ২০২০ সালে চীন-ইউরোপ রেল আসা-যাওয়া ট্রেনের সংখ্যা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। সারা বছরে ১২,৪০৬ ট্রেনের মাধ্যমে ১১ লাখ ৩৫ হাজারটি  কন্টেইনার পাঠানো হয়।

নিং পো চিয়া চ্য কোম্পানি গত বছরের মে মাস পর্যন্ত মহামারির কারণে বিদেশের কোন অর্ডার পায়নি। মাঝারি ও ছোট বৈদেশিক ব্যবসায়িরা  মহামারিতে সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছেন। কোম্পানির ম্যানেজার মা ছুয়ান জুন আন্ত-সীমান্ত  ই-বাণিজ্য ব্যবসা করতে চান। তবে প্ল্যাটফর্ম, বিক্রয়, গুদাম ও বিক্রির পর সেবাসহ অনেক কিছুই তিনি জানেন না। গত জুন মাসে নিং পো শহরে ২২টি কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে একটি আন্ত-সীমান্ত  ই-বাণিজ্য ইউনিয়ান প্রতিষ্ঠা করে এবং ছোট কোম্পানিকে সাহায্য দেয়। মা ছুয়ান জুন এতে যোগ দিয়েছেন এবং প্ল্যাটফর্মে সব তথ্য পেয়ে যান। যেমন: পণ্য কোথায় বিক্রি হবে, বিভিন্ন জায়গায় কি ধরনের পণ্য দরকার ইত্যাদি। মা ছুয়ান জুন বলেন, বিদেশে ভোক্তার চাহিদা জানতে পেরে এখন প্রতি দুই তিন মাসে পণ্যকে আপগ্রেড করতে হয়। তারা এখন বিদেশের বিক্রেতাদের সাথে সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ ই-বাণিজ্য ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার ৬ মাসে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ২৪০০ কোটি ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে।

২০২০ সালে চীনের আন্ত-সীমান্ত  ই-বাণিজ্য রপ্তানি ও আমাদির পরিমাণ ছিল ১.৬৯ ট্রিলিয়ান ইউয়ান। তা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩১.১ শতাংশ বেশি। এটি বৈদেশিক বাণিজ্য স্থিতিশীল করার গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়।(শিশির/এনাম/রুবি)