গত ১৬ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটলান্টা অঞ্চলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ৬জন এশিয়ান নারীসহ ৮জন নিহত হয়েছেন। এ দুঃখজনক ঘটনা সারা যুক্তরাষ্ট্রকে হতবাক করে দেয়। এশিয়ানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধ আবার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়ানদের বিরুদ্ধে অপরাধ বাড়ছে। এসব বৈষম্যের ঘটনায় সবার মাঝে ভয় ও ক্ষোভের জন্ম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নানা শহরে ‘এশিয়ানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বন্ধ কর’ শিরোনামে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়ানদের বিরুদ্ধে হামলা দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র বৈষম্য-বিরোধী এক সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৯ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত সংস্থাটি এশিয়ানদের বিরুদ্ধে হামলার মোট ৩,৭৯৫টি রিপোর্ট পেয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এশিয়ানদের উপর হামলার ঘটনা ৫০০টিরও বেশি। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরে এশিয়ানদের বিরুদ্ধে ঘৃনাজনিত হামলা ২০২০ সালে আগের তুলনায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে মানবাধিকারের বাতিঘর হিসেবে মনে করে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রে বার বার দেখা যায় বৈষম্যবাদের দুঃখজনক ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের বৈষম্যবাদ, চরমপন্থা ও বিদেশিদের প্রতি ভয় কখনও শেষ হয় নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতিতে সাদারা ছাড়া অন্য জাতির সাথে বৈষম্য মজ্জাগত। শান্তির সময়ে এশিয়ান-আমেরিকানরা ‘ভাল ছেলে ও মেয়ে’। এবং সংকটকালে তাঁরা সাদাদের রক্ষার ঢাল। আসলে অ্যাটলান্টায় গুলিবর্ষণের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়ানদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ ও বৈষম্যের ফলাফল। দীর্ঘসময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যমাধ্যম এশিয়ানদের উচ্চারণ, ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে অশ্লীল রসিকতা প্রচার করে আসছে। অপরাধ বাড়ার এটিও একটি কারণ।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হবার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার মোকাবিলায় সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নেয় নি। নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত পরিস্থিতিতে শুরু হয় নানা সামাজিক সমস্যা। নিজের ভুল ধামাচাপা দিতে কোন কোন মার্কিন রাজনীতিবিদ একে তথাকথিত ‘চায়না ভাইরাস’ নাম দিয়ে প্রতারণা করেন। এ রাজনৈতিক অপবাদ এশিয়ানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বৈষম্য গুরুতর করে তুলে
সম্প্রতি ‘অর্থনীতিবিদ’ নামে এক থিংক ট্যাঙ্ক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ১.৬ লাখ এশিয়ান শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক। তাঁদের বার্ষিক আয় ২৪ হাজার কোটি ডলার এবং তাঁরা ১৩ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে এশিয়ানদের অনুপাত ৩০ হাজার কোটি ডলার। যদিও অধিকাংশ মার্কিনী বৈষম্যবাদকে স্বীকার করে নি, তবে তাঁরা জানেন না ২০০ বছরে নানা ক্ষেত্রে এশিয়ানরা সেদেশে কত অবদান রেখেছেন।
বর্তমানে এশিয়ান-আমেরিকানরা যে বৈষম্য ও বাধার সম্মুখীণ, তা মার্কিন ব্যবস্থার সমস্যা ও মানবাধিকারের শঠতার প্রতিফলন। বৈষম্যবাদ সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক সমস্য এবং ক্যান্সার।
গত ১৯ মার্চের অ্যাটলান্টার ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সেখানে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রে বৈষম্য আছে এবং বিদেশিদের প্রতি ভয়ও আছে এবং দীর্ঘসময়ে এ অবস্থা পরিবর্তন হয়নি।
সমতা মানবাধিকারের মৌলিক নীতি। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ইস্যুর অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে আসছে। তাই বিশ্ববাসী মনে করে, তারা নিজেদের মানবাধিকার পরিস্থিতি আগে ঠিক করুক। শিশির/এনাম/রুবি