চীনের জাতীয় উত্তরাধিকার ব্যুরো গত শনিবার জানায়, চীনের সানশিংদুই সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ কেন্দ্রে নতুন ৬টি সমাধি থেকে ৫ শতাধিক ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। জাতীয় উত্তরাধিকার ব্যুরোর উপমহাপরিচালক সুং শিন ছাও সানশিংদুই ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারকাজে বিদেশি প্রত্নতাত্ত্বিকদলের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানান।
১৯৮৬ সালে চীনের সিছুয়ান প্রদেশের কুয়াংহান অঞ্চলের সানশিংদুই ধ্বংসাবশেষের দুটি সমাধির আবিষ্কার তিন হাজার বছরের প্রাচীন সিছুয়ান অঞ্চলের সভ্যতাকে উন্মোচিত করে। ৩০ বছর পর এ নতুন আবিষ্কার আরও অনেক নতুন তথ্য উন্মোচন করেছে।
বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সুন হুয়া বলেন, এবারের আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রাচীনকালে এতদঞ্চলের মানুষের ধর্মচিন্তা বা বিশ্বাস সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
সানশিংদুই ধ্বংসাবশেষের আয়তন প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার। এর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৩.৬ বর্গকিলোমিটার। এটি হলো এ পর্যন্ত সিছুয়ান অঞ্চলে আবিষ্কৃত বৃহত্তম ও সবচেয়ে সুরক্ষিত শিয়া ও শাং রাজবংশের আমলের ধ্বংসাবশেষ।
শনিবার ‘প্রত্নতাত্ত্বিক চায়না’ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প দল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, সানশিংদুই ধ্বংসাবশেষ কেন্দ্রের ৬টি বলিদান হলে সোনার মাস্ক, রূপার মাস্ক,রূপার গাছ এবং হাতির দাঁতসহ ৫শতাধিক ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে আবিষ্কারটিকে ৩০০০ বছর ধরে ঘুমানোর পর জেগে উঠে বিশ্বকে অবাক করে দেওয়ার সাথে তুলনা করা হয়।
জানা গেছে, আবিষ্কৃত সোনার মাস্কের পরিমাণ অনেক বেশি, যা সম্ভবত চীনে সমকালে উদ্ধারকৃত সর্ববৃহত মাস্ক ও সোনার পণ্য। ৩৫ বছর আগে সানশিংদুই ধ্বংসাবশেষের প্রথম ও দ্বিতীয় বলিদান হলের উদ্ধারকাজ করা হয়। সে সময় এ ধ্বংসাবশেষ বিশ্বকে অবাক করে দেয়। অনেকে এটাকে বিশ্বের নবম বিষ্ময় হিসেবে চিহ্নিত করেন। এবারে বাকি ৬টি হলে খনন চালিয়ে যা আবিষ্কার করা হল, তা আরও বিষ্ময়কর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের উদ্ধার কাজ আরও ফলপ্রসূ হবে। হল থেকে পাওয়া পণ্যের পরিমাণ আগের তুলনায় নিঃসন্দেহ অনেক বেশি। অনেকে বলেন, ‘এটি আমাদের দেখা সবচেয়ে বড়, উত্তেজনাপূর্ণ ও দামি আবিষ্কার’।
সানশিংদুই ধ্বংসাবেশষ উদ্ধারকাজের মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ চীনা ইতিহাস সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। গভীর সংস্কৃতি ও ইতাহাস জেনে চীনারা গৌরব বোধ করছেন। এটিই প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজের তাত্পর্য।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বরাবরই ধ্বংসাবশেষ ও পুরাকীর্তি রক্ষায় গুরুত্বারোপ করে আসছেন। এ ব্যাপারে তিনি বেশ কয়েকবার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
--ধ্বংসাবশেষ ও পুরাকীর্তি ইতাহাসের সাক্ষি। সেগুলোকে ভালোভাবে সংরক্ষণ ও উদ্ধার করা প্রয়োজন।
--ধ্বাংসাবশেষ উদ্ধারকাজের ওপর গুরুত্বারোপ করা উচিত এবং চীনের বৈশিষ্ট্যময় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্ভার গড়ে তোলা হবে।
--প্রত্নতত্ত্ববিদদের টানা পরিশ্রমের ফলে চীনের প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। যা ইতিহাসের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়েছে, এবং ইতিহাসকে প্রাণচাঞ্চল্য করে তুলেছে।
--প্রত্নতাত্ত্বিক কাজ চীনা জাতির ইতাহাস ও সভ্যতা সম্পর্কে জানতে ও প্রদর্শনী গড়ে তুলতে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
--প্রত্নতাত্ত্বিক কাজ চীনের সভ্যতার চমত্কার অগ্রগতির প্রতিফলন।
--বর্তমান প্রজন্ম ধ্বংসাবশেষ রক্ষার সাফল্য অর্জন করছে, তবে, তাতে উপকৃত হবেন তাঁদের পরবর্তী বংশধরগণ।
--সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ সভ্যতার প্রমাণ বয়ে বেড়ায়। তা ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্প্রসারিত করে, এবং জাতিগত চেতনা সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে। এটি পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া মূল্যবান উত্তরাধিকার। চীনের সমাজতান্ত্রিক আধ্যাত্মিক সভ্যতা নির্মাণের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
--সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারকাজে চীনা সাফল্য বিশ্ব সভ্যতাকেও করছে আরও সমৃদ্ধ।
(রুবি/এনাম)