মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: বাংলাদেশের গৌরবের উদযাপন
2021-03-21 19:42:42

এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ অতিক্রম করছে বাংলাদেশের মানুষ। ১০ দিনের

বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে দেশের মানুষ। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।  

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা শুরু হয় রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ১০ দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। সম্মাননীয় অতিথি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ। সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ধারণ করা বিশেষ ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। কানাডা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক স্যার মার্ক টালির ভিডিও বার্তাও প্রচার করা হয় অনুষ্ঠানে। দ্বিতীয় পর্বে গীতআলেখ্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির মুক্তিগাঁথা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে দিনটিকে প্রতিটি বাঙালির জন্য স্মরণীয় দিন হিসেবে অভিহিত করেন। বলেন, এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে জানার সুযোগ পাচ্ছে বিশ্ববাসী। ভাষণে রাষ্ট্রপতি রাজনীতি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রাজনীতিকে জনসেবার বদলে একধরনের পেশায় পরিণত করা হয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ গ্রহণ করে দেশসেবার ব্রত নিয়ে রাজনীতি করতে রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বলেন, জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। তবে দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি লাভ করেছে সেখান থেকে কেউ আর নামাতে পারবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বিশেষ ভিডিও বার্তা ছিল গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। বার্তায় চীনের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধুকে পূর্বাপর চীনের ভালো বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, চীন ও বাংলাদেশ প্রাচীনকাল থেকে সুপ্রতিবেশি রাষ্ট্র। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪৬ বছরে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দু’দেশ একসঙ্গে অগ্রগতি লাভ করেছে।

চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন আর ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নের মিল রয়েছে বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট সি। দু’দেশ হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও দু’দেশ ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’সহ সার্বিক সহযোগিতা চালিয়ে গেছে।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, তিনি চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। দু’দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অটুট থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট সি।

চীনের প্রেসিডেন্টের বিশেষ এ ভিডিও বার্তায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, চীন বাংলাদেশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুরাষ্ট্র বলে মনে করে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ দুদেশের সার্বিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে- এর স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে প্রেসিডেন্ট সির ভাষণে। তাই তার এ ভাষণ অর্থপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে চীনের উপহারস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য প্রদানের ভিডিও প্রচার করা হয়- যা অনুষ্ঠানের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়েছে। মুজিব ভাস্কর্য উপহার ও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোয় বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

আগামী ২৬ তারিখ পর্যন্ত চলবে মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এ অনুষ্ঠানমালা। দেশের নতুন প্রজন্মের পাশাপাশি বিশ্ববাসী নতুন করে জানবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে। এ জানা গৌরবের ও মর্যাদার। তাই জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষ গৌরব করতেই পারে।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।