সরকারের প্রতি চীনের জনগণ কেন এত সন্তুষ্ট?
2021-03-19 13:42:31

গত ১৬ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গায়ানার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইরফান আলির সাথে ফোনালাপ করেছেন।

সরকারের প্রতি চীনের জনগণ কেন এত সন্তুষ্ট?_fororder_bba1cd11728b4710fb1a32e252be39fbfc03235a

সি চিন পিং বলেন, চীন ও গায়ানা অনেক দূরে অবস্থিত হলেও দু’দেশের গভীর বন্ধুত্বের ইতিহাস রয়েছে। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন খাতের সহযোগিতা অনেক ফলপ্রসূ হয়েছে। গত বছরে কোভিড-১৯ মহামারীকালেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নত হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আগামি বছর হবে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে দু’পক্ষের উচিত পারস্পরিক মৌলিক স্বার্থকে সম্মান করা, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় সহযোগিতা জোরদার করা, জ্বালানি ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের সহযোগিতা শক্তিশালী করে দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।

 

তিনি বলেন, গায়ানার সাথে কোভিড-১৯ টিকার সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক চীন। গায়ানার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য চীন যথাযথ সাহায্য ও সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

 

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীন ও গায়ানা উভয়ই উন্নয়নশীল দেশ। অনেক বিষয়ে তাদের অবস্থানের অনেক মিল রয়েছে। দু’পক্ষের উচিত জাতিসংঘ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সমন্বয় জোরদার করা। যাতে একসাথে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তির পথে এগিয়ে নেওয়া যায়।

 

ওই দিনই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কীথ রৌলির সাথে ফোনালাপ করেছেন।

 

সি চিন পিং বলেন, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো হচ্ছে চীনের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক অংশীদার। কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দেয়ার পর দু’দেশ পরস্পরকে সাহায্য ও সমর্থন করে আসছে। সে অঞ্চল থেকে  ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সর্বপ্রথম চীনকে প্রতিরোধ সামগ্রী প্রদান করেছিল। চীনও ত্রিনিদাদ ও টোবাগোকে নানা পদ্ধতিতে প্রতিরোধ সামগ্রী ও প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করে আসছে। কোভিড-১৯ টিকার সহযোগিতা খাতে দেশটির সাথে সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক চীন।

 

তিনি বলেন, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সে অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে চীনের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় সহযোগিতা শুরু করে। তাই দেশটির সাথে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব উন্নয়ন করে নানা বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করতে আগ্রহী চীন।

 

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, এ বছর হচ্ছে জাতিসংঘে চীনের বৈধ আসন পূনরুদ্ধারের ৫০তম বার্ষিকী। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর দেওয়া অমূল্য সমর্থন চীন কখনো ভুলবে না। হংকং, সিনচিয়াং ও তাইওয়ান বিষয়ে দেশটির চীনকে দেওয়া সমর্থনের প্রসংশা করে বেইজিং। আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক বিষয়ে দেশটির সাথে সমন্বয় জোরদার করতে চায় চীন।

 

গত ১৭ মার্চ  বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক ‘ভিডিও অভিনন্দনবার্তা’ পাঠিয়েছেন। ভিডিওতে তিনি চীন সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

 

২. সরকারের প্রতি চীনের জনগণ কেন এত সন্তুষ্ট?

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থাসমূহের বেশ কয়েকটি  জরিপে চীন সরকারের প্রতি চীনা জনগণের সমর্থনের হার বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১১ মার্চ  চীনের দুই অধিবেশন সমাপ্তির পর প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে এর কারণ জানা গেছে।

 

“কর্মসংস্থান গণজীবিকার ভিত্তি এবং উন্নয়নের স্তম্ভ”। আগামি বছরের শেষ নাগাদ প্রতি জেলায় একটি নির্দিষ্ট চিকিত্সালয় থাকবে, যেন প্রবীণদের চিকিতসার কোন সমস্যা না থাকে। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে গণজীবিকার সাথে জড়িত বিষয়গুলো প্রাধান্য দেন। তাতে প্রতিফলিত হয়েছে যে, চীনের উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সুন্দর জীবন-যাত্রা নিশ্চিত করা।  

 

ওই দিন চীনের জাতীয় গণকংগ্রসের অধিবেশনে চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা এবং ২০৩৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তবলি গৃহিত হয়। এতে চীন সরকার আগামি ৫ বছরে ২০টি মূল সূচকের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেছে। তার মধ্যে ৭টি গণজীবিকার খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যা পরিকল্পনায় মোট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ। এ পরিমাণ অতীতের পাঁচসালা পরিকল্পনাসমূহের মধ্যেও শীর্ষে রয়েছে।

 

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যিক কমিটির বিশেষজ্ঞ আনা আশটন বলেছেন, চীন সরকার শিক্ষার মান, গড় আয়ু, দূষণমুক্তি, ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। সেগুলোর লক্ষ্য মানুষের জীবন-যাপনের মান উন্নত করা। 

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীনাদের জীবন-যাপনের মান অনেক উন্নত হয়েছে। গত ৫ বছরে চীনের জেলা-থানা পর্যায়ে কর্মসংস্থানের পরিমাণ ৬ কোটি ছাড়িয়েছে। চীন বিশ্বের সর্ববৃহত সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। চীনের দারিদ্র্যমুক্তির চূড়ান্ত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ফলে ৯ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে।

 

গণজীবিকা উন্নয়নের পথে চীন সরকার কাউকে উন্নয়ন থেকে বাদ দেবে না। তারা সামাজিক নিশ্চয়তা ও গণসেবার আওতা বাড়াচ্ছে। যাতে সকল চীনাদের স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিত হয়। এ নিশ্চয়তার কারণে প্রত্যেক চীনাকে সুন্দর জীবন বাস্তবায়নের জন্য চালিকাশক্তি যুগিয়েছে।

 

১৪০ কোটি জনগোষ্ঠীর বিশাল দেশ হিসেবে, চীনে গণজীবিকা উন্নয়নের কাজ সহজ নয়। বিশেষ করে, দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কীভাবে বৈচিত্রময় ও বহুস্তরের গণজীবিকার চাহিদা মেটানো যায়, তা চীনের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।

 

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং বলেছেন, চীনে বয়স্কদের সংখ্যা ২৬ কোটি। যা থেকে সৃষ্টি হয় বৈচিত্র্যময় চাহিদা। তাঁর এ কথায় সবাই লক্ষ্য করেছেন যে, চীন চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপ দিতে দক্ষ। বয়স্কদের সেবা প্রদান করার মধ্য দিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করা হয়েছে। আসলে শিক্ষা, চিকিত্সাসহ নানা ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়লে সংশ্লিষ্ট খাতে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়। এটা স্পষ্ট যে, গণজীবিকার উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থে কাজ করা অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন চালিকাশক্তি।

 

চীন গণস্বাস্থ্য সংকটে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সময় কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং পরবর্তী অর্থনৈতিক উন্নয়নে গণজীবিকাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। যেগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, সবার ওপর মানুষ সত্য--এ চেতনায় জনসাধারণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে সরকারের প্রতি জনগণের সন্তোষের কারণ।

 

(রুবি/এনাম)