বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে চীনের বিভিন্ন কর্মসূচি
2021-03-19 17:49:18

গত ১৭ই মার্চ ছিল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের জাতীয় শিশু দিবস। এ মাসেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার দেশজুড়ে মুজিববর্ষ উদাযপনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। সেই সূত্র ধরে বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তবে বিশ্বব্যাপী মহামারির কারণে বিভিন্ন দেশে এ বছরের কর্মসূচি ভিন্নভাবে পালিত হয়। যেমন, চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে বাংলাদেশস্থ দূতাবাস এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এ দিবস উপলক্ষ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে উদ্দেশ্য করে এক ভিডিও ভাষণ দেন। বাংলাদেশস্থ চীনা দূতাবাস বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেছে।

 

প্রিয় শ্রোতা এ সম্পর্কে শুনুন বিস্তারিত প্রতিবেদন।

 

গত ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশেষ ওয়েবিনারের আয়োজন করে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন যথাক্রমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব মাহবুব উজ জামান এবং বাংলাদেশে সাবেক চীনা রাষ্ট্রদূত ছাই সি। এ ছাড়া, অতিথি বক্তা হিসেবে বাংলা ভাষা ও চীনা ভাষায় বক্তব্য রাখেন চায়না মিডিয়া গ্রুপ- সিএমজি ও বিএফএসইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দায়িত্বশীলরা। এ ছাড়াও ছিলেন শতাধিক অংশগ্রহণকারী।

 

ওয়েবিনারে বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনের নানাদিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির লক্ষ্য ছিলো শোষিত মানুষের মুক্তি। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় চীনকে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত।

 

সাবেক চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়েবিনারে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেন। তিনি বলেন, “অর্ধশত বছর আগে চীন ভ্রমণের সময়েই তিনি নির্মোহভাবে বুঝতে পেরেছিলেন চীনা সরকার জনগণের সঙ্গেই আছে।“

 

এই ওয়েবিনারে যোগ দেন চীনে অবস্থিত বাংলা কমিউনিটির প্রতিনিধি, চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেন্টারের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

 

উল্লেখ্য যে, তত্কালীন পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৫২ সালের ১ থেকে ১২ অক্টোবর শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। শান্তি সম্মেলনের ১১ দিনসহ মোট ২৫ দিন তিনি চীনে অবস্থান করেন। তাঁর সে ভ্রমণবৃত্তান্তের সংকলন হলো ‘আমার দেখা নয়া চীন’। এটি মূলত চীনে অবস্থানকালে তার নিজের চোখে দেখা চীনের গল্প। সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপ তাঁর এ বইটি বাংলা ভাষা থেকে চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছে।

 

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য উপহার দেয় চীন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ উপহার পাঠান চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। গত সোমবার গণভবনে এই উপহার হস্তান্তর করা হয়েছে। ভাস্কর্যটি হস্তান্তর করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি চ্রি মিং। চীনের বিশ্বখ্যাত ভাস্কর উ ওয়েই শান এই ভাস্কর্য নির্মাণ করে। তিনি চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য।

 

এরপর বুধবার বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এ দিবস উপলক্ষ্যে তিনি এক ‘ভিডিও-বার্তা’ পাঠিয়েছেন।

চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দু’দেশের উন্নয়নের কৌশলগত সংযোগ জোরদার করা, যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের কাজ এগিয়ে নেওয়া এবং দু’দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারি সম্পর্ককে আরো উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করতে আগ্রহী চীন। বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন প্রেসিডেন্ট সি। চীন ও বাংলাদেশের মৈত্রী বংশপরম্পরায় এগিয়ে যাবে ও  দীর্ঘমেয়াদি হবে- এ প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন চীনের প্রেসিডেন্ট।