আকাশ ছুঁতে চাই (১৩)
2021-03-18 18:45:47

এগিয়ে যাচ্ছেন সিনচিয়াংয়ের নারী

 

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।

কেমন আছে সিনচিয়াংয়ের নারী

আকাশ ছুঁতে চাই (১৩)_fororder_tu1

চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের নারীরা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় উন্নত জীবন যাপন করছেন। তারা স্বনির্ভর হচ্ছেন এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারছেন। এমন কথাই উঠে এসেছে দুই অধিবেশন নামে পরিচিত চীনের সদ্যসমাপ্ত বার্ষিক জাতীয় কংগ্রেসে। চীনের ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের চতুর্থ অধিবেশনে সিনচিয়াং থেকে উইগুর জনপ্রতিনিধিরা যোগ দেন।

তারা বলেন, বর্তমানে সিনচিয়াংয়ে যে তরুণী নারীরা আছেন তারা জীবনকে গড়ে তোলার প্রচুর সুযোগ পাচ্ছেন।

একজন জনপ্রতিনিধি রুকাইয়াম মাতিসাদ। তিনি এসেছেন দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের হোথান প্রিফেকচারের ইউথিয়ান থেকে। 

তিনি বলেন, ‘আমার গ্রামের ৮০ ভাগ তরুণী গত কয়েক বছরে নতুন চাকরি পেয়েছে। নিজের পরিবারে অবদান রাখতে পেরে তারা গৌরব বোধ করছে। তারা তাদের জীবন গঠনের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারছে।’

ইউথিয়ান উইমেনস ফেডারেশন জানায় এই জেলায় নারীদের কর্মসংস্থানের হার ২০১৬ সালের ৩১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে ৯৫ শতাংশে পরিণত হয়েছে।

উইমেনস ফেডারেশন আরও জানায়,সিনচিয়াংয়ের নারীরা একসময় সনাতন সমাজের বিভিন্ন গোঁড়ামির কারণে শিক্ষাগ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারতো না। কিন্তু বর্তমানে তারা এসব রক্ষণশীলতাকে অতিক্রম করতে পারছেন সরকারি সহায়তায়।

উইগুর মুসলিম রুকাইয়াম বলেন, ‘আগে উইগুর মেয়েরা জুনিয়র স্কুল শেষ করলেই মনে করা হতো যথেষ্ট লেখাপড়া হয়েছে। কারণ নারীর জন্য শিক্ষা দরকার নেই। কিন্তু এখন তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। দিনে দিনে আরও বেশি নারী নিজেদের প্রজনন অধিকার সম্পর্কে জানছে। তারা সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারছে যা আগে ছিল সম্পূর্ণ পুরুষদের নিয়ন্ত্রণে।’

সিনচিয়াংয়ের তরুণী উইগুর নারীরা এখন বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে পারছেন, স্বাধীনভাবে উপার্জন করতে পারছেন যা আগে সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে সম্ভব ছিল না।

সিনচিয়াংয়ের কাশগড় প্রিফেকচার থেকে আসা জনপ্রতিনিধি সুই চিউসিউ বলেন,‘সামাজিক উন্নয়নে ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলে সিনচিয়াংয়ের তরুণীরা ধর্মীয় মৌলবাদের কঠোর চাপ থেকে মুক্ত হয়েছেন। তাদের সামনে নিজেদের জীবন গঠনের নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে।’

তাজিক এথনিক গ্রুপের একজন জনপ্রতিনিধি ফাতিমা। তিনি বলেন, ‘সিনচিয়াংয়ের নারীরা সুযোগকে হারাতে চায় না। আইনগত ভাবে তাদের অধিকার তারা প্রয়োগ করতে সক্ষম হচ্ছে।’

সিনচিয়াংয়ের নারীরা স্থানীয় তুলা, টমেটো, গোলাপ চা কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করে স্বাধীন উপার্জনের আনন্দ অনুভব করতে পারছেন, অর্জন করছেন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা।

সাক্ষাত্কারশিল্পচর্চায় এগিয়ে আসতে হবে নারীকে

আকাশ ছুঁতে চাই (১৩)_fororder_tu2

সিআরআই বাংলার ঢাকা স্টুডিওতে শিল্পী রোকেয়া সুলতানা

বাংলাদেশে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। শিল্পচর্চার বিভিন্ন মাধ্যমে নারীর রয়েছে সক্রিয় অংশগ্রহণ। নারীরা শিল্পী হিসেবে প্রমাণ করেছেন নিজেদের যোগ্যতা, দেশে বিদেশে পেয়েছেন খ্যাতি।  

আমাদের আজকের অতিথি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা।

রোকেয়া সুলতানা শিল্পচর্চায় আছেন গত তিন দশক ধরে। তিনি ভিস্যুয়াল আর্ট, টেমপোরা, লাইভ আর্ট, উডকাট,. ছাপচিত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেয়েছেন ফুলব্রাইট রিসার্চ গ্র্যান্ট, ফ্রান্সের স্কলারশিপ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেরা ছাপচিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার। তার ম্যাডোনা সিরিজ বিশেষভাবে খ্যাতি পেয়েছে। এই সিরিজে তিনি বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী নারী ও তার শিশুকন্যাকে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে।  তিনি বলেন, ‘ আমার একটি ছবিতে আমি দেখিয়েছি একজন মা তার দুই কন্যাকে নিয়ে হাতির ঝিলে বেড়াতে এসেছে। এই যে মা ও কন্যাদের বেড়াতে আসা এটা একদিনে ঘটে না। এইটুকু স্বাধীনতা, সাহস সঞ্চয় করতে নারীকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।’

তিনি মনে করেন, ‘শিল্পচর্চায় নারীর আরও সময় এবং সাধনার প্রয়োজন। অনেকসময় সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় নারীরা তাদের শিল্পচর্চায় সময় দিতে পারে না।’

তিনি ছবি আকেঁন ছোটবেলা থেকেই। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন কারণ তার মনে হয়েছে শিল্পের মাধ্যমেই তিনি নিজের অস্তিত্বকে প্রকাশ করতে পারেন।

চীনের শিল্পকলার বিষয়ে তিনি খুব আগ্রহী। বললেন, ‘সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে চীনা শিল্পকলার। বিশেষ করে তাদের ছাপচিত্র খুবই সমৃদ্ধ।’

 

চীনের বিখ্যাত নারী: লৌহমানবী

আকাশ ছুঁতে চাই (১৩)_fororder_tu3

উ ই

উ ই হলেন চীনের একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং একুশ শতকে সবচেয়ে আলোচিত নেতাদের একজন। তিনি চীনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে খ্যাতি পান। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ছিলেন। আন্তর্জাতিকভাবে চীনের পক্ষে সবসময় শক্ত অবস্থান নেয়ায় লৌহমানবী হিসেবে খ্যাতি পান।

উ ইর জন্ম ১৯৩৮ সালে উহান শহরে এক বুদ্ধিজীবী পরিবারে। পরিবারে দুই সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ উ ই শৈশবে বাবা-মাকে হারান। তার আট বছরের বড় ভাই তাকে প্রতিপালন করেন। ১৯৬২ সালে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। সে বছরই পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি বিভাগ থেকে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে  গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন  করে  যোগ দেন বেইজিং পেট্রোলিয়াম ইন্সটিটিউটে। ১৯৮৮ সালে নির্বাচিত হন বেইজিং এর ডেপুটি মেয়র হিসেবে।  বৈদেশিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও পরে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সাফল্যের সঙ্গে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির  ১৪ ও ১৫তম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৭ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী নারী বলে অভিহিত করে।

উ ই বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। তিনি অবিবাহিত। বিয়ে প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এমন নয় যে আমার একা থাকাটা খুব পছন্দের। কিন্তু আমার জীবনে ব্যস্ততা এত বেশি যে রোমান্সের সময় ছিল না।’

উ ই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার প্রতীক। 

 

অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় নারী উদ্যোক্তা

বাংলাদেশে বর্তমানে অনলাইনে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তারা ব্যবসায়ে সাফল্য অর্জন করছেন। এরা বেশিরভাগই তরুণী উদ্যোক্তা।

আকাশ ছুঁতে চাই (১৩)_fororder_tu4

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে স্বল্প পুঁজিতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন নারীরা। বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অনলাইনই পণ্য বিক্রির সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কর্ণধারই এখন নারী। করোনাকালীন সংকটে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে শিক্ষিত নারীরা এ পথে বেশ এগিয়ে এসেছেন। অনেকে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার কাজ করছেন। কেউ শৌখিন পণ্য নিয়ে ব্যবসায় নেমেছেন। তারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভাইবারে পণ্যের প্রচার-প্রসার করছেন। তরুণরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন। ধৈর্য্য, সামান্য পুঁজি আর পরিশ্রম থাকলেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তরুণী উদ্যোক্তা অনন্যা সরকার দিপালী।

কিছু অভিযোগ থাকলেও ই-কমার্সে নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে মনে করেন ই–কমার্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

 

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাত্কারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

 

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অনলাইনে নারীউদ্যোক্তা বিষয়ক রিপোর্ট: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

ছবি ও অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ