চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের বিবৃতি হাস্যকর: সিআরআই সম্পাদকীয়
2021-03-18 14:23:13

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয় ২+২ উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা। তাদের আলোচনায় মূল বিষয় ছিল চীন। আলোচনার পর প্রকাশিত বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র যে তার মিত্রদের নিয়ে চীনকে দমন করতে চায়, তা একেবারে স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।

পূর্ব সাগর থেকে দক্ষিণ চীন সাগর, তিয়াও ইউয়ু দ্বীপ থেকে তাইওয়ান প্রণালী, এবং সিনচিয়াং থেকে হংকং, জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় আলোচনার মূল বিষয় ছিল কথিত ‘চীনা হুমকি’। দ্বিপক্ষীয় বিবৃতিতে সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ করা হয়। চীন যা করেছে, তা আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করা হয়। এ বিবৃতিটি সত্যকে অবহেলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার প্রমাণ।

যদিও চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র  ও জাপান অভিযোগ করছে,  তবে কোন বাস্তব ব্যাবস্থা নেয় নি দুপক্ষ। এ আলোচনা একেবারেই রাজনৈতিক প্রহসন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান নিজের জন্য কিছু একটা লাভ করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রথম বিদেশ সফরে জাপান এসেছেন। তার মাধ্যমে দেশটি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। পাশাপাশি, টোকিওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চায় ওয়াশিংটন। মার্কিন জাতীয় সম্প্রচার কর্পোরেশন এনপিসি মনে করে, ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্য মিত্র দেশের সম্পর্ক ব্যবসার মতো এবং অস্থিতিশীল ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন সরকার তাদের পূর্ববর্তী সরকারের একতরফাবাদের নীতি পরিবর্তন করেছে এবং মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে আসন্ন চীন-যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার এজেন্ডা তৈরি করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভূল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

অন্যদিকে, জাপানের জাতীয় প্রতিরক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের উপর গভীরভাবে নির্ভর করে এবং চীনের সাথে রয়েছে ভূখণ্ডের বিতর্ক। জাপান যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি ব্যবহার করে আঞ্চলিক বড় দেশের অবস্থান বজায় রাখছে। পাশাপাশি, চীনের প্রতি শক্তিশালি মনোভাব প্রদর্শন করা জাপান সরকারের অভ্যন্তরীণ সমর্থন অর্জনের জন্য প্রয়োজন।

নিজ নিজ স্বার্থের জন্য তৈরি এমন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের জোট কী বিশ্বাসযোগ্য ও শক্তিশালি হতে পারবে? এবারের বিবৃতিতে যদিও বার বার চীনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের উদ্বেগ আলাদা এবং তাদের মধ্যে মতভেদও আছে। যেমন: যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান প্রণালী ও মানবাধিকার ইস্যুর ওপর গুরুত্ব দেয়। কিন্তু জাপানের দৃষ্টি তিয়াও ইউয়ু দ্বীপের ওপর। হংকংয়ের একটি পত্রিকা মনে করে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান কোন কোন বিষয়ে একমত, তবে তার মানে এই নয় যে, দুদেশের জোট নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

আসলে চীনের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে জাপান আঞ্চলিক অর্থনীতি একীকরণ এবং চীনের সাথে আর্থ-বাণিজ্য সহযোগিতা থেকে বেশ উপকৃত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাকলে জাপানকে বড় অর্থনৈতিক মূল্য দিতে হবে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল মার্কিন নতুন সরকার মিত্রদের গুরুত্বের কথা বার বার উল্লেখ করলেও, তারা নিজের স্বার্থ প্রথমে নিশ্চিত করে। টোকিও নিউজ বলেছে, জাপানের সতর্ক থাকা উচিত। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষা বিনামূল্যে হবে না এবং জাপানকে ‘ব্যয়বহুল বিল’ পরিশোধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র-জাপান জোট কত ঘনিষ্ঠ হতে পারবে, তা দুপক্ষও নিশ্চিত হতে পারছে না।

উল্লেখ্য, এবার যুক্তরাষ্ট্র-জাপান যৌথ বিবৃতিতে বলা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা চুক্তিতে তিয়াও ইউয়ু দ্বীপকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সামরিক জোট আরও স্পষ্ট। সবাই জানে তিয়াও ইউয়ু দ্বীপ ও তার অধিভুক্ত দ্বীপ চীনের ভূখণ্ড। যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা চুক্তি স্নায়ু যুদ্ধের সময়ে স্বাক্ষরিত হয়। এটি তৃতীয় পক্ষের স্বার্থ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলাকে নষ্ট করুক, তা কারোরই কাম্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকাতায় জোট করে চীনকে দমন করতে চাইলে তা  সফল হবে না। চীনের উন্নয়ন বিশ্বের চ্যালেঞ্জ নয় বরং সুযোগ। যদি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান এ সত্য স্বীকার না করে, তাহলে ঘনিষ্ঠ জোটও নিজের উন্নয়নের বাধা হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে বিশৃঙ্খলা বয়ে আনবে। সম্প্রতি সিআরআইয়ের এক সম্পাদকীয়তে এসব বলা হয়। (শিশির/এনাম/লিলি)