শিক্ষা মেয়েদের ভাগ্য পরিবর্তন করে
2021-03-17 11:03:39

শিক্ষা মেয়েদের ভাগ্য পরিবর্তন করে_fororder_src=http___nimg.ws.126.net__url=http%3A%2F%2Fdingyue.ws.126.net%2F2021%2F0218%2Fb20313adj00qoq5u1000ic000bf005rc&thumbnail=650x2147483647&quality=80&type=jpg&refer=http___nimg.ws.126

ছাং কুই মেই চীনের জাতীয় দারিদ্র্যবিমোচনের একজন মডেল। তিনি পাহাড়ি অঞ্চলে মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে অনেক দরিদ্র মেয়ের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষা মেয়েদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে এবং একজন মেয়ে তিন প্রজন্মের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর সাহায্যে ১,৮০৪জন মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছে। চীনে অনেক মানুষ ছাং কুই মেইর মতো মেয়েদের শিক্ষার সম্পরসারণে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এখন আমরা কিছু উপাত্তের মাধ্যমে চীনা মেয়েদের শিক্ষার অবস্থান তুলে ধরব।

 

যখন গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের নিরক্ষরতার হার ছিল বেশি। বিংশ শতাব্দির ৫০ এর দশকে চীনে চালু হয় তিন দফার নিরক্ষরতা দূরীকরণ কার্যক্রম। ফলে ১.৬ কোটি চীনা নারী নিরক্ষরতা থেকে বেরিয়ে আসে। ১৯৯৫ সাল থেকে চীন সরকার নারী উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেই। এতে সবসময় মেয়েদের  নিরক্ষরতা মুক্তি এবং নারীদের স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধিকে প্রধান লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। চীনে নারী লোকসংখ্যার মধ্যে ১৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সি নারী নিরক্ষরতার অনুপাত ৯০ শতাংশ থেকে কমে ২০১৯ সালে ৭.০১ শতাংশে দাঁড়ায়। মেয়েদের জন্য শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ ও ইচ্ছা লক্ষ্যণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বেশিরভাগ মেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। চীনা মেয়েদের শিক্ষায় যে সফলতা, তা সারা বিশ্বে অসামান্য। বিশ্ব অর্থনীতি ফোরাম প্রকাশিত ২০২০ বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে চীনে শিক্ষিত নারীর হার উন্নীত হয় ০.৯৭৩ শতাংশ। (০ মানে বৈষম্য এবং ১ মানে সমান), তার মানে শিক্ষা ক্ষেত্রে চীনে ছেলে ও মেয়ের পার্থক্য খুবই কম। উচ্চ শিক্ষার ভর্তির হারের দিক থেকে দেখলে চীন ১ পয়েন্ট পেয়েছে, তার মানে ছেলে ও মেয়ের হার পুরোপুরি সমান এবং এ ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করে চীন।

 

২০১৯ সালে প্রকাশিত চীনা নারী উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০১১-২০২০ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০-২০১৯ সালে নানা পর্যায়ের স্কুলে মেয়েদের ভর্তির হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উচ্চ শিক্ষার বেলায় ছেলে ও মেয়েদের পার্থক্য হ্রাস পেয়েছে। যেমন: হাইস্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৫, ২০১০ ও ২০১৯ সালে ছাত্রেরর তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি ছিল। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬.২ লাখ থেকে উন্নীত হয়ে ৯.৪ লাখে পৌঁছায়।

 

নারীরা বেশি শিক্ষা গ্রহণ করলে সমাজে তাদের মর্যাদা উন্নত হবে।

সিপিসির অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীন সর্বস্তরে লিঙ্গ সমতা, নারীর অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়। বিশেষ করে, সমান কাজের জন্য সমান বেতন নীতি বাস্তবায়ন করে। অর্থনীতি ও সমাজ নির্মাণে নারীদের অংশগ্রহণ জোরদার হয়।

 

 

১৯৭৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনে কর্মরত নারীর সংখ্যা ১৭ কোটি থেকে বেড়ে ৩৪ কোটিতে পৌঁছে। ২০১৯ সালে চীনে কর্মরত লোকসংখ্যার মধ্যে নারীর অনুপাত ৪৩.২ শতাংশ।

 

চীনের একটি নিয়োগ ওয়েবসাইট প্রকাশিত ২০২০ চীনা বেতন লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী এক বছর বেশি শিক্ষা গ্রহণ করলে তাদের গড় বেতন ৫.১ শতাংশ বেশি হয়, তা পুরুষের তুলনায় ০.৫ শতাংশ বেশি। বেশি শিক্ষা গ্রহণ করলে, নারী বেশি চাকরির বাছাই করতে পারে এবং আয়ও বেশি হয়। পাশাপাশি, প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বল্প শিক্ষিত পুরুষ নির্মাণ এবং খনি খননসহ উচ্চ আয়ের কাজ করতে পারে। তবে যদি নারী কম শিক্ষিত হয় তাহলে তাদের চাকরি করার সুযোগ কম। তার মানে নারীর জন্য কর্ম ক্ষেত্রে শিক্ষা আরও গুরুত্বপূর্ণ।

 

২০২০ চীনা নারী কাজের অবস্থা জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩১ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৬.৩ শতাংশ নারী সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করে। তার মানে প্রায় অর্ধেক নারী মৌলিক কর্মে নিয়োজিত।

 

বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারী কম। বিশেষ করে, উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক পদে মাত্র ৫ শতাংশ নারী। উপাত্তে আমরা দেখছি নারীর কর্মক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতা।

 

মানুষের উন্নয়ন ইতিহাস দেখলে বুঝা যায়, নারীর স্বাধীনতা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার উপর নির্ভর করে। বিজ্ঞান অর্থনীতির সময়ে কায়িক শ্রমের চেয়ে মানসিক কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে নারী বেশি কর্মের সুযোগ পায়। আরও বেশি নারী শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করে এবং আরও বড় মঞ্চে তারা নিজের শক্তি প্রদর্শন করতে পারবে।

 

শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে চীনে যদিও লিঙ্গ সমতা রয়েছে, তবে বৈষম্য পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। আর এ ক্ষেত্রে আরও কাজ করতে হবে, আরও এগিয়ে যেতে হবে। (শিশির/এনাম/রুবি)