অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল থেকে অবাধ বাণিজ্য বন্দর পর্যন্ত চীনের উন্মুক্তকরণের দরজা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে
2021-03-15 13:32:59

চলতি বছর চীনের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল পরীক্ষার ষষ্ঠ বছর। এ পর্যন্ত সারা দেশের ২১টি প্রদেশ পরীক্ষা অঞ্চলের নির্মাণে অংশ নিয়েছে। হাইনান প্রদেশ চীনের বৈশিষ্ট্যময় অবাধ বাণিজ্য বন্দরের নির্মাণের চেষ্টা করছে। অবাধ বাণিজ্য পরীক্ষামূলক অঞ্চল ও অবাধ বাণিজ্য বন্দর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চীনা উন্মুক্তকরণের দরজা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে।

 

“ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা” চলাকালে চীনের অবাধ বাণিজ্য পরীক্ষামূলক অঞ্চলের নির্মাণ একটি কাঙ্খিত “ফলাফল প্রতিবেদন” প্রদান করেছে। এতে আরও বেশি সংস্কারের স্বতন্ত্র অধিকার পেয়ে মোট ২হাজার ৮শতাধিক সংস্কারের পরীক্ষামূলক কর্তব্য গ্রহন করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। অব্যাহতভাবে উচ্চমানের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ ত্বরান্বিত করা, ও অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের বৈদেশিক ব্যবসায়ী বিনিয়োগের জন্য নেতিবাচক তালিকা শুরু দিকের ১২২টি থেকে ২০২০ সালের ৩০টি পর্যন্ত কমেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়। সব মিলিয়ে মোট ১হাজার ৩শতাধিক সৃজনশীল ব্যবস্থার ফলাফল স্থানীয় স্তরে তুলে ধরা হয়।

 

চীনের সার্বিক উন্মুক্তকরণের নতুন কাঠামোয় হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, একে মুক্তার সাথে তুলনা করা যায়। দুই অধিবেশন চলাকালে হাইনানের প্রতিনিধিগণ পৃথকভাবে বলেন, পরবর্তীতে নতুন হাইনান প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে।

 

চীনের জাতীয় গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধি, হাইনান এয়ারলাইনস গ্রুপের পার্টি কমিটির সদস্য লিয়াও হোংইয়ু বলেন, দুটো ‘শত বার্ষিক’ লক্ষ্যের ঐতিহাসিক সময়ে আমাদের সতর্কভাবে কর্তব্য পালন করতে হবে। পাশাপাশি, হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দরের নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ বছরে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব পালন করে বন্দরের নির্মাণের জন্য অবদান রাখতে হবে।

 

চীনের জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য, হাইখৌ শুল্ক বিভাগের প্রধান শি জোংওয়েই দেশের কেন্দ্রীয় কাজকে ঘিরে বিভিন্ন পক্ষের শক্তি ও বুদ্ধি মিলিয়ে সক্রিয়ভাবে দেশ পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য প্রস্তাব দেন। যাতে হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দরের নির্মাণের জন্য অবদান রাখা যায়।

 

এক বছরের কম সময়ের মধ্যে হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দর নির্মাণ পুরোদমে শুরু হয়ে দ্রুতগতিতে চলছে। গত বছরের ১ জুন “হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দর নির্মাণের সাধারণ পরিকল্পনা” প্রকাশিত হয়। জুলাই মাসের প্রথম দিকে বন্দরের প্রথ মালামাল “বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও ভারসাম্যের সুবিধাকরণ” পরীক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর অবাধ বাণিজ্য বন্দরে নতুন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের “এক গুচ্ছ” সমর্থন নীতি বাস্তবায়িত হয়। চলতি বছর “হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দর নির্মাণের সাধারণ পরিকল্পনা”র বিভিন্ন নীতি দ্রুততার সাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

২০২১ সালে “চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনা”র সূচনা বছর। হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দরের নিজের উন্নয়ন লক্ষ্য স্থাপন করা হয়। লক্ষ্যগুলিতে রয়েছেঃ বার্ষিক বিনিয়োগ ৭০ বিলিয়ন ইউয়ানের ৯০টিরও বেশি ১ বিলিয়ন ইউয়ানের বেশি প্রকল্প কার্যকর করা, এবং ঐতিহ্যবাহী অবকাঠামোর মান উন্নত করে ৫জি, বিগ ডাটা,  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চার্জ ও ট্র্যাক নির্ভর যানবাহনসহ নতুন অবকাঠামোর বন্টন ও নির্মাণ করা।

 

২০১৩ সাল থেকে কয়েকবার সম্প্রসারিত হবার পর চীনের অবাধ বাণিজ্য পরীক্ষামূলক অঞ্চল দেশের সব জায়গায় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সৃজনশীল নতুন কাঠামো গড়ে তোলা হয়। আগামিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য পরীক্ষামূলক অঞ্চলের জন্য আরও ভাল পরিবেশ ও শর্ত সৃষ্টি করবে।

 

খবরে প্রকাশ, চীনের আন্তর্জাতিক ভোগ্য পণ্য মেলা চলতি বছরের মে মাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিভাগ দ্রুততার সাথে জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে বিদেশি পণ্যের জন্য শুল্ক-মুক্ত নীতি প্রণয়ন করছে। বিদেশি পণ্য মেলা চলাকালে আমদানী ও বিক্রয় শুল্ক-মুক্ত সুবিধি পাবে। এছাড়া, শুল্ক-মুক্ত নীতির সফলতা চীন আন্তর্জাতিক আমদানি এক্সপো (সিআইআইই) এবং চীনের (বেইজিং) আন্তর্জাতিক সেবা বাণিজ্য মেলা (সিআইএফটিআইএস)’র চেয়ে কম হবে না।

 

প্রিয় বন্ধুরা, ফেব্রুয়ারি মাসে আর্থিক পরিসংখ্যান বাজারের অভিষ্ট লক্ষ্য ছাড়ায়। গত ১০ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে রেনমিনবি ঋণ ১.৩৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বেড়েছে। তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৫.২৯ বিলিয়ন ইউয়ান বেশি। প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সমাজে অর্থায়ন স্কেলের বৃদ্ধি ছিল ১.৭১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৩.৯২ বিলিয়ন ইউয়ান বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে বিস্তৃত অর্থ বা এম টুর স্থিতি ছিল ২২৩.৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০.১ শতাংশ বেশি। বৃদ্ধির গতি এর আগের মাসের শেষ নাগাদ ও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যথাক্রমে ০.৭ ও ১.৩ শতাংশ বেশি।

 

চীনের মিনশেং ব্যাংকের প্রধান গবেষক  ওয়েন বিন বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আর্থিক পরিসংখ্যান অভিষ্ট লক্ষ্যের চেয়ে ভাল ছিল। এক দিকে, বাস্তব অর্থনৈতিক চাহিদার সংকোচন প্রতিফলন হয়েছে, অন্য দিকে, বাস্তব অর্থনীতির জন্য অর্থের সমর্থন শক্তি বাড়ানো হয়—এটিও প্রমাণিত হয়েছে। এম টুর ১০.১ শতাংশ বৃদ্ধির গতি প্রমাণ করে যে, বৃদ্ধির পরিমাণ জানুয়ারি মাস ও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে। বর্তমানে বাজার তরলতার কোন অভাব নেই। এছাড়া, সামাজিক অর্থায়ন চলতি মাসে নতুন করে বাড়ানোর স্কেল ইতিহাসে একই সময়ের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। আর ঋণ চাহিদা ও যোগান উভয়ই সমৃদ্ধ রয়েছে। ফলে মধ্যমেয়াদ ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের হার বৃদ্ধি পায়, এবং ঋণের কাঠামো অধিকতরভাবে সুবিন্যস্ত হয়।

 

ওয়েন বিনের অনুমান অনুযায়ি, আগামি পর্যায়ে এম টু সামাজিক অর্থায়ন বৃদ্ধির গতি ক্রমেই নামমাত্র বৃদ্ধির সাথে মৌলিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যাবে। মুদ্রা নীতি আরও নমনীয় ও নির্ভুল হবে।

 

প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ শুনলেন আজকের ব্যবসা-বাণিজ্য অনুষ্ঠানটি। ‌এতক্ষণ আমার সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তাহলে আজ এ পর্যন্তই। আগামি সপ্তাহে আবারও কথা হবে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রেমা/এনাম