দুই অধিবেশনের অর্জন; সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা
2021-03-13 18:43:56

গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় গণ-কংগ্রেসের চতুর্থ অধিবেশন শেষ হয়েছে। চীনের দুই অধিবেশন চীন ও বিশ্বের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অধিবেশনে চীনের জিডিপি’র লক্ষ্যমাত্রা, উন্নয়ন ও গবেষণা খাত, টেকসই উন্নয়ন,  শিক্ষা ও কর্মসংস্থান-সহ নানা বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। সদস্যদের প্রস্তাবনার আলোকে নানা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত দেশ-বিদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অধিবেশনে চীনের প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মপ্রতিবেদন পেশ করেন এবং ২০২১ সালের বিভিন্ন কার্যক্রমের নীতি তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চতুর্দশ পাঁসচালা পরিকল্পনা ও বিশ্বায়ন-সংক্রান্ত বিষয়াদি।

আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় চলতি বছর চীনের গৃহীত উন্নয়নমুখী পরিকল্পনার ওপর আলোকপাত করা হবে।

 

বস্তুত, এ বছর চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে চীন আশা করছে, এতে করে দেশের প্রবৃদ্ধির প্রবণতা পরিবর্তন হবে না। এজন্য, ২০২১ সালে চীনের ডিজিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশের ওপরে। গত বছর মহামারীর কারণে, চীনে জিডিপি ১০১.৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে সীমিত ছিল; যা ছিল আগের বছরের তুলনায় ২.৩ শতাংশ বেশি।

 

আমরা দেখেছি, ২০২০ সালে মহামারীর মধ্যেও চীন ১ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আর বছর শেষে সারা দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৫.২ শতাংশ। এ অবস্থায় ২০২১ সালে দেশে নতুন কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ। বলা হয়েছে- এ সময় বেকারত্বের হার সীমিত রাখা হবে ৫.৫ শতাংশের মধ্যে। পাশাপাশি, প্রতি ইউনিট জিডিপি উত্পাদনে জ্বালানিসম্পদের ব্যবহার ৩ শতাংশ কমানো হবে এবং খাদ্য উত্পাদন ৬৫০ বিলিয়ন কিলোগ্রামে উন্নীত করা হবে।

 

বার্ষিক কার্য প্রণালীতে সুস্পষ্ট করে বলা হয়- এ বছর বিদেশিদের জন্য চীনে বিনিয়োগ-প্রক্রিয়া সহজতর করা হবে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিবেশও আরও আকর্ষণীয় করা হবে। দেখে গেছে, ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত চীনে বিদেশি বিনিয়োগের শর্তাবলী ধাপে ধাপে শিথিল করা হয়েছে। এ কারণে, বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও ২০২০ সালে চীনে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়। স্বভাবতই ২০২১ সালে চীন এক্ষেত্রে আরও উন্মুক্ত হবে।

চলতি বছরের প্রধান কাজের মধ্যে আরও রয়েছে- বাজেট-ঘাটতি ৩.২ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা; বার্ষিক করযোগ্য আয় এক লাখ ইউয়ান থেকে দেড় লাখ ইউয়ানে উন্নীত করা; মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের খরচ ১০ শতাংশ কমানো; গাড়ি ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির বিক্রি বাড়ানো; সময় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সাফল্য অর্জন করা; দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য ধরে রাখা ও গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন বাস্তবায়ন করা। পাশাপাশি, আরসিইপি চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা এবং চীন-ইউরোপ বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করা; দেশের উত্তরাঞ্চলের সবুজায়ন ৭০ শতাংশে উন্নীত করা; শিক্ষা খাতে আরও অগ্রগতি অর্জন করা; নাগরিকদের চিকিত্সা-বীমা ও মৌলিক গণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ে মাথাপিছু সরকারি ভাতা বাড়ানো; মহানগরে বাবস্থান সমস্যা সমাধান করা; দীর্ঘকালীন বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করা; বাসা ভাড়া কমানো; বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস ও প্রতিবন্ধী গেমসের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া; এবং হংকং, ম্যাকাও, ও তাইওয়ান বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের ব্যবস্থা সংবিধান ও মৌলিক আইনের সঙ্গে সঙ্গীতপূর্ণ করা।

 

চলতি বছর চীন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদ্যাগত প্রকল্প এবং সৃজনশীল কেন্দ্রের নির্মাণ এগিয়ে নেবে। চীন ‘বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সৃজনশীলতা ২০৩০ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প’ জোরদার করবে। পাশাপাশি মৌলিক গবেষণায় ব্যাপক বরাদ্দ বাড়াবে। উল্লেখ্য, ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার’ আলোকে চীন দ্রুততার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পরীক্ষাগারের নেতৃত্বে কৌশলগত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মৌলিক প্রযুক্তিগত সমস্যা মোকাবিলা-ব্যবস্থা জোরদার করবে। পাশাপাশি, মৌলিক গবেষণার ১০ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা কার্যকর করবে, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত ও সৃজনশীল দক্ষতা উন্নত করবে, সৃজনশীল মেধাশক্তি জোরদার করবে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সৃজনশীল ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ করবে এবং সামাজিক গবেষণায় বার্ষিক সাত শতাংশেরও বেশি বাড়ানো হবে।

চীন অব্যাহতভাবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কূটনীতি চালু করবে, সক্রিয়ভাবে বিশ্বের অংশীদারি সম্পর্ক উন্নত করবে, নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করবে বলে ঘোষণা করেছে।

 

চীনের এসব পরিকল্পনা দেশ ও বিদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তাই এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন গোটা পৃথিবীর জন্য কল্যাণ ডেকে আনবে বলে আশা করা যায়।