আপন আলোয়(৭):‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়’: অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত্ ঘোষ
2021-03-12 17:28:54

শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের খবরাখবর, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভাবান-সৃষ্টিশীল তরুণদের জীবন ও কর্ম নিয়ে সাজানো আমাদের এ অনুষ্ঠান। খ্যাতিমানদের কৃতি মানুষ হয়ে ওঠার অনুপ্রেররণা, সৃষ্টিশীল তরুণদের স্বপ্ন, তাদের জীবনের আনন্দ-বেদনার গল্প নিয়েই ‘আপন আলোয়’।

আপন আলোয় আমাদের এবারের অতিথি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। অন্তরঙ্গ আলাপনে আমরা শুনবো জাতির বহুকাঙ্খিত এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার স্বপ্ন এবং সংগ্রামের গল্প।

 

**স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৯ ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠান

আপন আলোয়(৭):‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়’: অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত্ ঘোষ_fororder_wenhua1

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১’ পাচ্ছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে মরণোত্তর এ পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন আহসানউল্লাহ মাস্টার, আখতারুজ্জামান বাবু, এ কে এম বজলুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ। সাহিত্যে কবি মহাদেব সাহা, সংস্কৃতিতে চলচ্চিত্রকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও নাট্যজন আতাউর রহমান এ পুরস্কার পাচ্ছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী, সমাজসেবা বা জনসেবায় এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন। গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবার পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা পুরস্কার দিচ্ছে সরকার।

 

**চীনের দুই অধিবেশন যেন সংস্কৃতির মিলনমেলা

আপন আলোয়(৭):‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়’: অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত্ ঘোষ_fororder_wenhua2

আধুনিক পোশাকের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা পরেন নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক

গত বৃহস্পতিবার শেষ হলো চীনের দুই অধিবেশন। চীনের জাতীয় গণকংগ্রেস-এনপিসি এবং চীনা গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন-সিপিপিসিসি’র জাতীয় কমিটির বার্ষিক অধিবেশন দুটিকেই একত্রে বলা হয় ‘দুই অধিবেশন’। সিপিপিসিসি ক্ষমতাসীন দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি, অন্য ৮টি গণতান্ত্রিক পার্টি, বিভিন্ন গণসংস্থা, বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন পেশাদার গ্রুপ, হংকং, ম্যাকাও, তাইওয়ান ও বিদেশ ফেরত চীনাদের প্রতিনিধি এবং বিশেষভাবে আমন্ত্রিত ও নির্দলীয় ব্যক্তিবর্গ নিয়ে গঠিত।

এই দুই অধিবেশনে চীনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন জাতির গ্রুপ ও সমাজের বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা গণতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিনিময় ও পরামর্শ দেন। দুই অধিবেশনে যোগ দিতে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে আসেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। দুই অধিবেশন যেন পরিণত হয় চীনের ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর মিলনমেলায়। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা মিলিত হন একই সাথে। ফলে এই দুই অধিবেশনে যেন হয়ে ওঠে জমজমাট সংস্কৃতির মিলনমেলা।

চীনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয়গুলো ছাড়াও শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় চীনের দুই অধিবেশনকে। এই দুই অধিবেশন থেকেই চীনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও তাদের ভাষা-সংস্কৃতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 

চিরায়ত চীনা সাহিত্য: চেন জিয়াং

আপন আলোয়(৭):‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়’: অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত্ ঘোষ_fororder_wenhua3

চেন জিয়াং: যুদ্ধবিরোধী চীনা কবি

চীনের থাং রাজবংশের সময়কার বিখ্যাত কবি চেন জিয়াং তার ভিন্নমতের জন্য রাজ রোষানলে পড়েছিলেন। মৃত্যুবরণ করেছিলেন কারাগারে। কিন্তু তার সৃষ্টিকর্মকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।

চেন জিয়াংয়ের জন্ম আনুমানিক ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে সিচুয়ান প্রদেশের সেহং জেলায় এক ধনী পরিবারে। তিনি ছিলেন ধনীর দুলাল এবং অতি আদরে উচ্ছন্নে যাওয়া এক তরুণ। লেখাপড়ার ধারও ধারতেন না। সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে সারাদিন আমোদ-প্রমোদে মেতে থাকতেন। একদিন তিনি পাহাড়ে বেড়াতে যান। সেখানে সমবয়সী কিছু তরুণকে বই পড়তে দেখে তার ভালো লাগে। তিনি একজন পণ্ডিতের কাছে বিদ্যাশিক্ষা শুরু করেন। কবি সিমা শিয়াংলু এবং ইয়ং সিয়ংয়ের কবিতা পড়ে তিনি অনুপ্রাণিত হন।  একটি প্রবন্ধ লিখে তার শিক্ষককে দেখালে তিনি খুব আশ্চর্য হন এবং বলেন ‘তুমি অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন মানুষ এবং অনেক বড় সাহিত্য রচনা তোমার দ্বারা সম্ভব।’

চেন জিয়াং এরপর কবিতা লিখে দ্রুত নাম করেন। তিনি সরকারি চাকরিও পান। সেনাবাহিনীতেও পরিচালকের পদ লাভ করেন।

তিনি সম্রাজ্ঞী উ চেথিয়ানের পরামর্শদাতা ছিলেন। কবিতার পাশাপাশি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছিলেন যুদ্ধবিরোধী মানুষ। যুদ্ধের বিরুদ্ধে লেখার জন্য রাজরোষে পড়েন কবি। তাকে কারাগারে বন্দি করা হয়। বন্দি অবস্থাতেওে তার লেখনী থেমে থাকেনি। সে সময় প্রচুর কবিতা লেখেন যা আজও চীনা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। অসুস্থ হয়ে পড়ায় বন্দি অবস্থায়ই ৭০২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন কবি চেন জিয়াং। তখন তার বয়স মাত্র ৪২ বছর।

লিবাই, তুফুর মতো থাং রাজবংশের বিখ্যাত কবিরা তার সৃষ্টিকর্মে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বিশেষ করে লি বাই তার সৃষ্টিকে উচ্চ মূল্যায়ন করেন। চীনের সাহিত্যে কবি চেন জিয়াং অমরত্ব পেয়েছেন তার অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত কবিতাগুলোর জন্য।

 

চীনের চলচ্চিত্র: উলফ টোটেম

আপন আলোয়(৭):‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়’: অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত্ ঘোষ_fororder_wenhua4

উলফ টোটেম: পশুর প্রতি মানুষের মমতার চলচ্চিত্ররূপ

সময়কাল ১৯৬৭। আধুনিক বেইজিং থেকে বিদায় নিয়ে দুর্গম মঙ্গোলিয়ার ভিতরে যাচ্ছে গাড়ি।

লক্ষ্য গ্রামের উপজাতিদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছানো। বাস থেকে নেমে তারপর ঘোড়ার গাড়ি। পথে যেতে যেতে সবুজ মাঠ, দুর্গম বন, সোনালী-সাদা পাহাড়ের সাক্ষাৎ পান চ্যান। অপরূপ সুন্দর এই গ্রামটা ঘুরতে বের হন তিনি। বন্ধুকে নিয়ে কখন যে বনের গভীরে চলে আসেন তা টেরই পেলেননা তিনি। হঠাৎ দেখতে পান ঘোড়ার সামনে আক্রমণ চালাতে উদ্যত ক্ষুধার্ত নেকড়ে পাল।

মৃত্যুভয়ে ভীত চ্যান বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামনে দিয়ে চলে গেলো নেকড়ের দল। মানুষখেকো এই প্রাণীর দল কেন এমন করলো?

নেকড়েদের বিষয়ে আগ্রহী চ্যান আরো কৌতুহলী হয়ে উঠলেন। সাদা বরফের আড়ালে লুকিয়ে দেখতে শুরু করলেন তাদের পথচলা। খুঁজতে থাকেন তাদের বাসস্থান। নেকড়ের গুহা খুঁজে বের করে ঢুকে পড়লেন ভিতরে। কিন্তু একি! চারদিকে ছড়িয়ে আছে রক্ত। একটি নেকড়ে সাবক অনাহারে কাতরাচ্ছে। গহীন এই গুহায় দেখতে পান বিশাল ফাঁদ। কারা পাতলো নেকড়ে শিকার করার এই ফাঁদ?

নেকড়ে সাবককে নিয়ে আসেন বাড়িতে। যত্ন নেয়া শুরু হলো তার। এভাবেই এগিয়ে যায় সিনেমার গল্প। কিন্তু হঠাৎ এই গ্রামে দেখতে পান আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত কিছু আগন্তুকের। কেন তারা এই গ্রামে? নেকড়ের সাথে গ্রামবাসীর কি সম্পর্ক? এমন অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হলে আপনাকে দেখতে হবে পুরো সিনেমাটি। 

১৯৬৭ সালে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উপর ভিত্তি করে চীনের বিখ্যাত লেখক চিয়ান রংয়ের জনপ্রিয় উপন্যাস উলফ টোটেম নিয়েই নির্মিত এই সিনেমা।

এই উপন্যাসের উত্স নিয়ে চিয়ান রং বলেন, আমি যখন দুর্ঘটনাক্রমে নেকড়ে পালের মাঝে আটকা পড়ে যাই। তখন তারা আমাকে রেখে ঝিলের ওপারে ভেড়ার পালকে ধাওয়া করলো। তারপরে থেকে নেকড়ে নিয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। গ্রামবাসীর সাথে নেকড়ের সম্পর্ক আমাকে অবাক করে। এরপর আমি এই সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করি এবং এই উপন্যাস নিয়ে লেখা শুরু করি।

ফরাসী পরিচালক জেয়ান-জ্যাক অ্যানা পরিচালিত এই সিনেমা, চীন-ফ্রান্স যৌথ-প্রযোজনায় নির্মিত। এই উপন্যাসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নেকড়ের শুটিং করা। যেটা খুব দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন অ্যানা ।

হলিউডের একজন রিপোর্টার এই সিনেমা নিয়ে বলেন, ওল্ফ টোটেম ইউরোপের সাথে চীনের চলচ্চিত্র-সংস্কৃতি বিনিময়ের নতুন একটি দ্বার উন্মোচন করেছে । উল্ফ টোটেমকে বলা যায় ভয়ংকর প্রাণীদের নিয়ে দারুন একটি ভিজ্যুয়াল এক্সপেরিমেন্ট। যেটি চিয়ান রংয়ের এই উপন্যাসকে পর্দায় সার্থকভাবে প্রদর্শন করে।

চলচ্চিত্র সমালোচক ম্যাগি লি বলেন, ‘চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যায়ন এবং পশুর প্রতি মানুষের প্রেম প্রদর্শন সহ , উল্ফ টোটেম' এমন একটি প্যাকেজ, যেটি পরিবেশের ভারসাম্যকে দারুণভাবে ইঙ্গিত করে’।

আপনি চাইলে ইউটিউবে ইংরেজি সাবটাইটেলসহ উপভোগ করতে পারেন সিনেমাটি।

অন্তরঙ্গ আলাপনে অধ্যাপক ড. বিশ্বজি ঘোষ

আপন আলোয়(৭):‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়’: অধ্যাপক ড. বিশ্বজিত্ ঘোষ_fororder_wenhua5

সিএমজি বাংলা স্টুডিওতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

অধ্যাপক ড. বিশ্বজি ঘোষ

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বাজারমুখী শিক্ষায় নয়, গুরুত্ব দেয় শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতার বিকাশে। শিক্ষার্থীরা কত ভালো ফল করলো তা আমার বিবেচ্য নয়। আমি চাই রবীন্দ্রনাথের মানবিকবোধে উজ্জীবিত হয়ে, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ধারণ করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে শিক্ষার্থীরা। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বললেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ।

প্রিয় বন্ধুরা, আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ আমাদের সমৃদ্ধ করবে। চীন আন্তর্জাতিক বেতার-সিআরই বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla আপনার মন্তব্য করতে পারেন। সিএমজি বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla এবং ইউটিউব লিঙ্ক youtube.com/cmgbangla তে গিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্ক জানাতে পারেন আপনার মূল্যায়ন।

পরবর্তী অনুষ্ঠানে আমরা বাংলাদেশ-চীনের সংস্কৃতিক অঙ্গনের আরো কিছু খবর এবং গুণিজনের অন্তরঙ্গ আলাপন নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন।

 

প্রতিবেদন: তানজিদ বসুনিয়া, শান্তা মারিয়া, হোসনে মোবারক সৌরভ

ছবি ও অডিও সম্পাদনা: তানজিদ বসুনিয়া

সাক্ষাত্কার গ্রহণ, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম