মার্চ ১১: এবারের দুই অধিবেশনে সরকারি কার্যবিবরণীতে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নকাজ এগিয়ে নেওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়। এক্ষেত্রে উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন কাজ, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা জোরদার, ভবিষ্যতের বিভিন্ন সুযোগ নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে চীনের ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেস (এনপিসি) এবং চীনের ত্রয়োদশ গণ-রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন (সিপিপিসিসি)-র চতুর্থ অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা বিভিন্ন প্রস্তাব দাখিল করেনস।
গত বছরের ডিসেম্বরে, চীনের উদ্যোগে নির্মিত পাকিস্তানের পেশোয়ার-করাচি এক্সপ্রেসওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এই প্রকল্প চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের বৃহত্তম পরিবহন অবকাঠামো প্রকল্প, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এটি মধ্য-পাকিস্তানের উত্তর-দক্ষিণে পরিবহন-ধমনীকে উন্মুক্ত করেছে। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণের ধনী হওয়ার পথে পরিণত হয়েছে এটি।
সিপিপিসিসি’র সদস্য ও চীন স্থাপত্য গ্রুপ লিমিটেড কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক চৌ ইয়ুং মনে করেন, যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নকাজ এগিয়ে নেওয়ার অর্থ কোনো নির্দিষ্ট প্রকল্প বাস্তাবয়ন নয়, বরং বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ের দূরত্ব দূর করা। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,
“ইউরেশিয়ান মহাদেশ থেকে আফ্রিকা, আমেরিকা ও ওশেনিয়া পর্যন্ত যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নকাজ এগিয়ে নেওয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক নতুন সূচনা। এটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার একটি নতুন প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছে। সকলের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সমর্থক ও অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এটি বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে বিনিময়ও বাড়িয়ে চলেছে।”
‘ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নকালে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নকাজে কেন্দ্রীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ৩৪০০টিরও বেশি। এই প্রক্রিয়ায় মোম্বাসা-নাইরোবি রেলপথ, হাঙ্গেরি-সার্বিয়া রেলপথ, ব্রাজিলের মিরার মতো অনেকগুলো ল্যান্ডমার্ক প্রকল্প তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলার প্রেক্ষাপটে, কেন্দ্রীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নকাজে কোনো ‘বিরতি বোতাম’ টেপেনি।
এবারের সরকারি কার্যবিবরণীতে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নকাজ এগিয়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সিপিপিসিসি’র সদস্য ও চীনের প্রবাসী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ গবেষণালয়ের স্থায়ী ভাইস-প্রধান চু ই লুং মনে করেন, উচ্চ গুণগত মানের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রতিষ্ঠাকাজকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে চীনের সার্বিক বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ ও উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নের একটি অনিবার্য শর্ত।
এনপিসি’র সদস্য ও চীনের ‘তা থাং সি শি’ গোষ্ঠীর মহাব্যবস্থাপক ল্যুই চিয়ান চুং বলেন, কেন্দ্রীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া, বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত যৌথভাবে উচ্চ গুণগত মানের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বাস্তবায়নকাজে ভূমিকা রাখা। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গোটা চীনে ৫০০ শক্তিশালী বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রতিষ্ঠাকাজে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ২০০টির কাছাকাছি। আগামী তিন বছরে এই সংখ্যাটি প্রায় ৩০০ হবে বলে জানান তিনি।
চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি বলেছেন, মহামারী বিশ্বকে গভীরভাবে পরিবর্তন করেছে। তবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের গুরুত্ব কমে যায়নি। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ়প্রতিজ্ঞায়ও ভাটা পড়েনি। নতুন উন্নয়ন-পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে, যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বাস্তবায়নকাজ এগিয়ে নেয়ায় আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে চীন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ওয়েইমিং)