চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।
দুই অধিবেশনে নারীর অংশগ্রহণ
চীনের ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের নির্বাচিত ডেপুটিদের মধ্যে ২৪.৯ শতাংশ হলেন নারী। চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
১৯৫৪ সালে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের অধিবেশনে ১৪৭জন নির্বাচিত ডেপুটি ছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন শেন চিলান নামে একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় নারী রাজনীতিবিদ। তিনি ১৩টি টার্মে ডেপুটি হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। ২০২০ সালে ৯১ বছর বয়সে এই বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ভূমিকা পালনকারী কংগ্রেস পারসন।
বর্তমানে চীনের আইনসভার একজন সদস্য বা ডেপুটি হলেন ফাং লান। তিনি শাংসি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর। তিনি ইউরোপে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তিনি যোগ্যতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করছেন।
ফাং লান
তিনি বলেন, ‘আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্যই আমার পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে ভূমিকা পালনে আমাকে সহায়তা করছে।’
তু মিংইয়ান আইনসভার একজন সদস্য। তিনি চীনের স্বায়ত্বশাসিত প্রদেশ ইনার মঙ্গেলিয়ার চালানথুন শহরের ডেপুটি মেয়র। তিনিও উচ্চশিক্ষিত নারী। তিনিও যোগ্যতার সঙ্গে আইনসভায় ভূমিকা পালন করছেন।
‘শিক্ষা আমাকে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।’
ফাং ইয়ান আরেকজন আইন প্রণেতা। পেশাগতভাবে তিনি একজন আইনজীবী। তিনি জেন্ডার সমতা বিষয়ে বলেন, ‘জেন্ডার সমতা হলো মৌলিক নীতি। নারীর অবস্থান অবশ্যই আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হয়েছে।’
চীনে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ দিনে দিনে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন এথনিক গ্রুপ থেকে অনেক নারী আইনসভায় সদস্য হয়েছেন। আরও বেশি সংখ্যক নারীকে রাজনীতিতে এগিয়ে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করছে সরকার।
সদস্য সংখ্যার দিক থেকে চীনের পার্লামেন্ট হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড়। ৩ হাজার সদস্যের এই আইনসভার ২৪.৯ শতাংশ সদস্য নারী যেখানে এশিয়াতে এর গড় হার ২০.১ শতাংশ।
চীনে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নারীর অংশ গ্রহণ বাড়ছে এবং এক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা ভালোভাবেই প্রমাণ করছেন তারা।
সাক্ষাত্কার: মঞ্চকর্মী কাজী লায়লা বিলকিস
বাংলাদেশে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। মঞ্চনাটকেও নারীর রয়েছে সক্রিয় অংশগ্রহণ। নারীরা মঞ্চকর্মী হিসেবে প্রমাণ করেছেন নিজেদের যোগ্যতা।
আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমাদের অতিথি বিশিষ্ট মঞ্চকর্মী ও অভিনয়শিল্পী কাজী লায়লা বিলকিস।
কাজী লায়লা বিলকিস তার কিশোরবেলা থেকেই মঞ্চের সঙ্গে জড়িত।এক সংস্কৃতিবান পরিবারে তার জন্ম। তার পরিবারে অনেকেই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন বলে, বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল তাকে মেডিকেল পড়ানোর। কিন্তু তিনি আকৃষ্ট হন অভিনয়ের প্রতি। ঢাকায় দেশ নাটকের মঞ্চকর্মী হিসেবে অনেক বছর পার করেছেন। বললেন, ‘মঞ্চ আমার ভালোবাসার জায়গা। মঞ্চে আমি কাজ করতে পারছি, আমার অভিনয় মানুষ ভালোবাসে সেটাই বড় প্রাপ্তি।’
কাজী লায়লা বিলকিস অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। কখনও কেন্দ্রীয় চরিত্রে, কখনও পার্শ্বচরিত্রে।
২৬মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মঞ্চস্থিত হবে দেশ নাটকের নতুন নাটক। সেখানে বিখ্যাত ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর তরুণ বয়সের চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। একজন যুদ্ধাহত নারীর এই চরিত্র তাকে আপ্লুত করেছে।
কাজী লায়লা বিলকিস চলচ্চিত্রেও অভিনয় করছেন অনেক বছর ধরে। বিয়ের পর সন্তান ও সংসারের কারণে সিনেমায় অভিনয়ে কিছুটা ছেদ পড়লেও গত পাঁচ-সাত বছর ধরে চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় করছেন। অভিনয় করেছেন সাঁওতাল নারীসহ অনেক ব্যতিক্রমী চরিত্রে। নারীরা অভিনয়ে অনেক এগিয়ে এসেছে তবে সমাজ এখনও নারীদের মঞ্চে অভিনয়কে খুব সুনজরে দেখে না।
বললেন, ‘নারীর মঞ্চে কাজ করার ক্ষেত্রে এখনও অনেক বাধা রয়েছে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী এখনও অনুকূল নয়।’
জীবনের সবক্ষেত্রে নারীর প্রতি সব বাধা দূর হবে এই সুন্দর ভবিষ্যত তার কাম্য।
জুতাশিল্পে নারী শ্রমিক
বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নারী শ্রমিকরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তারা জীবন সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করছেন। জুতাশিল্পে নিয়োজিত রয়েছেন অনেক নারী শ্রমিক।
নারীরা জনগোষ্ঠির অর্ধেক অংশ এবং কঠোর পরিশ্রম তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। সীমু আক্তার, কাজ করেন পান্ডা সুজ কারখানায়। যিনি এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। হাতে তুলে নিয়েছেন পরিবারের দায়িত্ব। তার মতো এমন অসংখ্য নারী রয়েছেন যারা এ কারখানায় কাজ করে সংসারের হাল ধরেছেন। এখানে যোগ দেয়ার আগে অনেকেরই নিত্য দিনের খরচ জোটানো কঠিন ছিলো। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ কারখানায় সুযোগ সুবিধা এবং কর্ম পরিবেশ ভালো পাওয়ায় শ্রমিকরা কাজ করে সন্তুষ্ট।
চীনের এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। জুতা শিল্পভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানে ২০০০ শ্রমিক কাজ করে থাকেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই নারী।
চীনের বিশিষ্ট নারী পরিচিতি: চাং হাইতি
চাং হাইতি একজন বিখ্যাত লেখক, অনুবাদক এবং মোটিভেশনাল স্পিকার। তিনি জাতীয় প্যারালিমপিকে চায়না অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব স্পোর্টস ফর পারসনস উইথ ডিসঅ্যাবিলিটিজ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ক্রীড়ার চেয়ারওমেন। তাকে বলা হয় চীনের হেলেন কেলার এবং পাভেল করচাগিন। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অনুপ্রেরণার উত্স।
চাং হাইতির জন্ম ১৯৫৫ সালে শাংতুং প্রদেশের চিনানে। পাঁচ বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ছয়টি গুরুতর অস্ত্রপচার সহ্য করতে হয়। ধীরে ধীরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন তিনি। তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান। ইংরেজি, জাপানি, জার্মান এবং এসপ্যারেনটো ভাষায় তিনি পারদর্শী। চিলিন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করে। ২০১৩ সালে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টোরেট ডিগ্রি দেয়। তিনি অনেক বই লিখেছেন। তার বই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি ও পুরস্কার পেয়েছে। তিনি চীনের পরামর্শ সভা বা চায়নিজ পিপলস পলিটিকাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের সদস্য হিসেবে অনেকবার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি চায়না ডিজঅ্যাবেলড পারসনস ফেডারেশনের চেয়ারপারসনের দায়িত্বও পালন করেছেন।
প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাত্কারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.
আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
জুতা শিল্পে নারী শ্রমিক রিপোর্ট: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
ছবি: হোসনে মোবারক সৌরভ
অডিও সম্পাদনা: তানজিদ বসুনিয়া