মার্চ ১১: ২০২১ সালের দুই অধিবেশনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ‘চীনের কূটনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক’ বিষয়ে দেশি-বিদেশি সংবাদদাতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এতে তিনি কোভিড-১৯ মহামারী ও এর টিকা নিয়েও কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যে চীনের দায়িত্বশীল বড় রাষ্ট্রের মনোভাব প্রতিফলিত হয়।
ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ওয়াং ই বলেন, গেল বছর বিদেশে চীনাদের জন্য সত্যিই একটি কঠিন সময় ছিল। হঠাৎই মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেকের বাড়ি ফিরে আসার পথে বাধা সৃষ্টি হয়। তবে, বিদেশে প্রত্যেক চীনার নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ছিল সচেতন। বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসসমূহ এবং কনসুলেটগুলো জরুরিভিত্তিতে এ জন্য কাজ করেছে এবং সকল কূটনীতিক দিনরাত ধরেই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন।
ওয়াং ই জানান, গত বছর শতাধিক দেশের ৫০ লাখেরও বেশি প্রবাসী চীনার মধ্যে ‘স্বাস্থ্য প্যাকেজ’ ও ‘বসন্ত উত্সব প্যাকেজ’ বিতরণ করা হয়েছে। তাদেরকে মধ্যে যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিত্সা দেওয়ার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। ১২৩০৮ নম্বর হটলাইন প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা চালু ছিল। আর প্রতিদিন দেশবাসীর সহায়তার জন্য প্রায় ৩ সহস্রাধিক ফোন-লাইন ব্যস্ত ছিল। এটি আগের বছরের তুলনায় ৩ গুণ বেশি। ওয়াং ই বলেন, ‘আমরা তখন বিদেশে চীনা বন্ধুদেরকে বলি, কূটনীতিকদের জনগণকে সেবা দিতে হবে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত কূটনীতিকরাও ছুটি পাবেন না।’
পাশাপাশি, বিদেশে চীনাদের টিকা দেওয়ার জন্য ‘স্প্রিং ব্রিজ অপারেশন’ ব্যবস্থা চালু করা হবে। এটি বিদেশে চীনা নাগরিকদের মহামারী মোকাবিলায় সহায়তা করবে। এই সম্পর্কে ওয়াং ই বলেন, “‘স্প্রিং ব্রিজ অপারেশন’ ব্যবস্থা চালুর উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদেশে চীনা নাগরিকদের চীনা টিকা নেওয়া বা বিদেশী টিকা নেওয়ায় সহায়তা দেওয়া। ৫০টিরও বেশি দেশ ধীরে ধীরে তাদের দেশের টিকাদান পরিকল্পনায় চীনা নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করছে এবং অনেক চীনা নাগরিক আইন অনুসারে চীনা টিকা গ্রহণ করছে। পরবর্তীতে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের তৈরী টিকা নেওয়ার কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “এ ছাড়া, আমরা একটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণ স্বাস্থ্যসনদ চালু করব। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং স্বাস্থ্য কোড সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ‘পারস্পরিক অনুমোদন’ ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেছেন। শিগগিরি আন্তর্জাতিক পর্যটনসংক্রান্ত স্বাস্থ্যসনদের চীনা ইলেক্ট্রোনিক সংস্করণ চালু হবে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা পুরোপুরি সুরক্ষার ভিত্তিতে, নিউক্লিক এসিড পরীক্ষা ও টিকা শরীরে নেওয়ার প্রমাণসসহ সকল তথ্য থাকবে এতে।”
প্রাণের নিরাপত্তা ও শরীরের সুস্থতা একজন মানুষের সুখী জীবনের ভিত্তি। এটি মানবজাতির সামষ্টিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের পূর্বশর্তও বটে। কোভিড-১৯ মহামারী থেকে আমাদের অভিজ্ঞতা এই যে, ভাইরাস দেশে দেশে পার্থক্য করে না, জাতিতে জাতিতে পার্থক্য করে না। তাই, মানবজাতির উচিত হাতে হাত রেখে যৌথ প্রচেষ্টা চালানো এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হবার চেষ্টা করা। মানবজাতির স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি যেন নুহ নবীর নৌকার মতো। এটা বর্তমান ও ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য খাতের হুমকি মোকাবিলা করতে ভূমিকা পালন করবে। চীন নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে এক দায়িত্বশীল বড় রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করে চলেছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ওয়েইমিং)