ব্যবসাপাতি (১২): ‘করোনার মধ্যেও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন’
2021-03-11 21:00:03

বিশ্বব্যবস্থা সচল রাখতে অর্থনীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে অর্থনীতি। অর্থনীতি হয়ে উঠছে রাজনীতির হাতিয়ার, কূটনীতির মূলমন্ত্র আর স্বকিয়তার রক্ষাকবচ। অর্থনীতির নানা সমাচার নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাপ্তাহিক আয়োজন ব্যবসাপাতি। ব্যবসাপাতির ১২তম পর্বে সবাইকে স্বাগত।

ব্যবসাপাতির ১২তম পর্বে যা থাকছে:

# চীনের সদ্য সমাপ্ত দুই অধিবেশনের আদ্যপ্রান্ত

# চীনের সবচেয়ে বড় দুই অধিবেশনে নেয়া নানা সিদ্ধান্তের খবর

# সারা বিশ্বের জন্য দুই অধিবেশন কেন গুরুত্বপূর্ণ সেই বিশ্লেষণ

এ পর্বের সাক্ষাত্কার:

চীনের দুই অধিবেশন, এর উল্লেখযোগ্য দিক ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চীন আন্তর্জাতিক বেতার কথা বলেছে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ এর সঙ্গে।

‘অভ্যন্তরীণ ভোগ ও বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণের নীতির উপর ভিত্তি করে চীনের নেয়া পরিকল্পনা বিশ্ব বাণিজ্যে ভারসাম্য আনবে’ 

- মুন্সি ফয়েজ আহমদ, চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

ব্যবসাপাতি (১২): ‘করোনার মধ্যেও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন’_fororder_caijing1

শুরুতেই বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু খবর।

১। তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে চীন

তাইওয়ান প্রণালীতে অবস্থান করা মার্কিন যুদ্ধজাহাজের গতিবিধি নজরদারিতে রেখেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি -পিএলএ। বুধবার মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জন ফিন কে তাইওয়ান প্রণালীতে দেখা যায় বলে জানায় পিএলএ’র ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড।

পিএলএ’র ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র চাং চুনহুই জানিয়েছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার পায়তারা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করছে চীন।

২। দরিদ্র দেশগুলোতে করোনা টিকা দিতে দরকার আরো ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার –ইউনিসেফ

দরিদ্র দেশগুলোতে করোনভাইরাসের টিকা পৌছে দিতে দরকার আরো ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহযোগিতা। এ ব্যাপারে সহযোগিতা দিতে উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল –ইউনিসেফ।

বিশ্বের বৃহত্তম টিকা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মিলে এই টিকা বিতরণের কাজ করছে।

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত অনলাইন ওয়ার্ল্ড গভার্নমেন্ট সামিটে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিটা ফোরে বলেন, দরিদ্র দেশগুলোতো মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার এবং টিকা বিতরণে ব্যয় হবে এই তহবিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কোভেক্স কর্মসূচিতে, এ বছর বিশ্বে প্রায় ২ বিলিয়ন টিকা বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে দরিদ্র দেশগুলিতে বিতরন করা হবে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন টিকা।

টিকা উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে, স্থানীয়ভাবে টিকা তৈরি ও বিশেষ করে আফ্রিকার বাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করার জন্য একটি চুক্তিতে আসার অনুরোধ জানান ফোরে।

বিশেষ প্রতিবেদন: বিশ্বের বৃহত্তম পার্লামেন্ট চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস বা এনপিসি

চীনের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ‘দুই অধিবেশন’। এরই একটি বিশ্বের বৃহত্তম পার্লামেন্ট নামে পরিচিত জাতীয় গণ কংগ্রেস বা এনপিসি। প্রতিবছর একবার বসে এ অধিবেশন। কিন্তু কি সেই দুই অধিবেশন? কবে থেকে শুরু হলো এর কার্যক্রম? জানাচ্ছেন রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

ব্যবসাপাতি (১২): ‘করোনার মধ্যেও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন’_fororder_caijing2

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা জাতিয় গণ কংগ্রেস বা এনপিসি।

আইন প্রণয়ন, সংবিধান সংশোধনসহ প্রেসিডেন্টসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার অধিকার ক্ষমতা এনপিসি’র। চীনা সংবিধান অনুযায়ী, ১৯৫৪ সালে পার্লামেন্টের দায়িত্ব অর্পিত হয় জাতীয় গণকংগ্রেস-এনপিসি'র ওপর।

এনপিসি’র সদস্য সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। আইন অনুসারে এরা নির্বাচিত হন ৫ বছরের জন্য। চীনের বিভিন্ন প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলসমূহ, কেন্দ্রীয় সরকার শাসিত বিভিন্ন শহর, চীনা গণমুক্তি ফৌজ, হংকং ও তাইওয়ানের প্রতিনিধিরা থাকেন। বছরে একবার ‘বিশ্বের বৃহত্তম পার্লামেন্ট’ নামে পরিচিত এনপিসি’র অধিবেশন বসে।

অন্যদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, জাতীয় গ্রুপ ও সমাজের বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা গণতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিনিময় ও পরামর্শ দিতে পারেন যে ফোরামে তার নাম চীনা গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন বা সিপিপিসিসি।

সিপিপিসিসি'র সূচনা হয়েছিল ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে। পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি দেশের অন্যান্য দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিপিপিসিসি গড়ে তোলে। শুরুর দিকে ‘রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন’ বা পিসিসি নামে পরিচিতি পেলেও পরবর্তীতে চীনা নাম রাখা হয় গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন সিপিপিসিসি।

সমাজতান্ত্রিক দেশ চীনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না বা সিপিসি। মূলত সিপিসি দেশের সকল রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন গণসংগঠন, সংস্থা, পেশাদার গ্রুপ, সংখ্যালঘু জাতি, বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রুপ ও গুরুত্বপূর্ণ নির্দলীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে দেশ শাসনের নীতি মেনে চলে।

এ বছর দুই অধিবেশনে চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশেষ প্রতিবেদন: অর্থনীতির সব সূচকে চীনকে সবোর্চ্চ চূড়ায় নেয়ার তাগিদ চীনা প্রেসিডেন্টের

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষাসহ অর্থনীতির সব সূচকে চীনকে সবোর্চ্চ চূড়ায় নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। দুই অধিবেশনে দেয়া প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে উঠে আসে দারিদ্র্য বিমোচনের দারুণ সব পদক্ষেপের কথা। দেশকে এগিয়ে নিতে তুলে ধরেন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আর সম্ভাবনার চিত্র। শুনুন হাবিবুর রহমান অভির প্রতিবেদন।

চলতি মাসের ৪ ও ৫ তারিখে শুরু হয় চীনের শাসন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দুই অধিবেশন। এবারের অধিবেশনে জাতির উদ্দেশ্যে বেশ গুরত্বপূর্ণ কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বিশ্ব মানচিত্রে চীনের আসন আরও মজবুত করতে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

ব্যবসাপাতি (১২): ‘করোনার মধ্যেও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন’_fororder_caijing3


ত্রয়োদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের চতুর্থ অধিবেশনে আঞ্চলিক আইন প্রণেতাদের নিয়ে গঠিত ‘গে ছিংহাই’ এর প্রতিনিধি দলের পর্যালোচনায় অংশ নেন সি চিন পিং। পুরো জাতির কল্যাণ নিশ্চিত করতে সবাইকে আরো অগ্রগামী হওয়ার আহবান ছিলো প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে।
এসময় তিনি স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, দারিদ্র্য বিমোচন, ও জাতীয় ঐক্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
গেল ৮ বছরে ১০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে বের করে আনে দেশটির সরকার। সি বলেন, যেসব কারণে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়েছে তার অন্যতম কারণ হলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থাকে প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করা। ভবিষ্যতে আরও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষিখাতকে সংযুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন চীনের সরকার প্রধান।

প্রতিরক্ষা খাতেও বিশেষ নজর দিয়েছেন সি চিন পিং।
২০২১ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদে দেশের সামরিক ও প্রতিরক্ষাখাতকে তিন ধাপে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। গেল মঙ্গলবার পিপলস লিবারেশন আর্মি ও পিপলস আর্মড পুলিশ ফোর্সের এক অধিবেশনে সি বলেন, সামরিক বাহিনীকে গড়ে তোলা হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মিশেলে।
চীনের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, সামরিক নির্মাণ ও যুদ্ধ প্রস্তুতির সমন্বয় করা হবে পুরো বাহিনীতে।
 

ব্যবসাপাতি (১২): ‘করোনার মধ্যেও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন’_fororder_caijing4

জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উপর বিশেষ গুরত্ব দেন সি চিন পিং। তিনি বলেন, চীনের জনগণের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গণস্বাস্থ্যখাতকে আরও সমৃদ্ধ করা হবে।

বিশেষ করে তুলনামূলক কম অগ্রসর অঞ্চলের লোকজনকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে তাগিদ দেন চীনের সরকার প্রধান। দেশটির মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের কম উন্নত অঞ্চলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আরও গতি আনার নির্দেশনা দেন সি চিন পিং।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, মহামারীকালে চীনের শিক্ষকরা বিশ্বের বৃহত্তম আইনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছেন। জনগণের দক্ষতা বাড়াতে আরও কার্যকর কর্মসূচি হাতে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

চীনে বর্তমানে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। করোনা মহামারীর সময়ে ঝুঁকি নিয়ে জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের ধন্যবাদ জানান সি চিন পিং।

এসময় সরকারি হাসপাতালে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে সবাইকে দিক নিদের্শনা দেন তিনি।

জটিল রোগসমূহ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও উদ্যমী হওয়ার আহ্বান জানান সি।

এসব অধিবেশেনের আ লোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন অঞ্চলের আইনপ্রণেতাও। গ্রামাঞ্চলের আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে সবাইকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান চীনা প্রেসিডেন্ট।

আগামী এক দশক পরে চীনের আর্থসামাজিক ও সামরিক অবস্থান বিশ্ব মানচিত্রে কোন জায়গায় যেতে পারে তার একটি সম্ভাব্য চিত্র দেখতে পান দেশের সাধারণ মানুষ। সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরও অগ্রগামী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন চীনের নাগরিকরাও।  

 

বিশেষ প্রতিবেদন: ২০২১-এ ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য চীনের

করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে ১ বছর বিরতি দেওয়ার পর আবারও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলো চীন। চলতি অর্থবছরে কমপক্ষে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছে দেশটি। একই সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত দুই অধিবেশনে ঠিক করা হয়েছে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন রূপকল্প। নেওয়া হয়েছে ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। দুই অধিবেশের অর্থনীতির চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিবেদক আজহার লিমন।

করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে ১ বছর বিরতি দেওয়ার পর আবারও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলো চীন। চলতি অর্থবছরে কমপক্ষে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছে দেশটি। একই সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত দুই অধিবেশনে ঠিক করা হয়েছে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন রূপকল্প । নেওয়া হয়েছে ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। দুই অধিবেশের অর্থনীতির চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিবেদক আজহার লিমন।

ব্যবসাপাতি (১২): ‘করোনার মধ্যেও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন’_fororder_caijing5

২ হাজার রাজনৈতিক পরামর্শক আর ৩ হাজার আইনপ্রণেতা। আসর ভাঙলো চীন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘দুই অধিবেশনের’।

করোনা মহামারির প্রেক্ষাপট কিন্তু ২০২১ একইসঙ্গে, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী ও ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণের বছর। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না-সিপিসির প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপনের বছর। এমন নানা কারণে বিদেশি বিনোয়োগকারী, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ সব সহলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো এবারের দুই অধিবেশন।

শিল্পোন্নত যে দুইটি দেশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি করেছে, তাতে চীন অন্যতম। জল্পনা ছিলো চলতি বছরেই কি জিডিপি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে না? দুই অধিবেশনে সরকারের কর্মপরিকল্পনা পত্রে সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী লি খেছিয়াং। ২০২১ সালে কমপক্ষে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছে দেশটি।

এবারের দুই অধিবেশনেও গুরুত্ব পেয়েছে ক্ষুদ্র ও কম আয়ের উদ্যোক্তারা। ২০২০ এ অগ্রাধিকারমূলক কর প্রণোদনার আওতায় ৩৯৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের কর কমিয়েছে চীনা প্রশাসন। এবারে তা আরও কমানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করপ্রদানের বিক্রয় সীমা। কমানো হয়েছে আয়কর। সবমিলিয়ে বলা যায়, চলতি বছরেও চীন ক্ষুদ্র ও কম আয়ের উদ্যোক্তাদের স্বাভাবিক ধারায় ফেরানোর জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে বড় চমক এসেছে গবেষণা ও উন্নয়নখাতে। এখাতে প্রায় ৪ ভাগের ৩ ভাগ করই কমিয়েছে চীন সরকার।

চীনের ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও এসেছে নতুন মাত্রা। ২০২৫ সালের মধ্যে শহুরে বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। নতুন ধারার উন্মেষ ঘটাতে ২৫ সাল নাগাদ গবেষণায় ব্যয় ৭ শতাংশ বাড়ানোর ব্যাপারে সর্বাত্নক ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ আছে এই  পাঁচশালা পরিকল্পনায়। ঘোষণা আছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ জ্বালানি আর ১৮ শতাংশ কার্বন নি:সরণ কমানোর।

পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গুরুত্ব পেয়েছে স্বাস্থ্য ও চিকিত্সাখাত। বলা হচ্ছে চীন বেসরকারি মেডিকেল খাত ও অনলাইনভিত্তিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হবে। ব্যাপক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রি স্কুল ও কিন্ডাগার্টেন কার্যক্রমে।

সবমিলিয়ে বলা যায়, আগামী ৫ বছর স্থানীয় চাহিদা, সরবরাহশৃঙ্খল উন্নতিকরণ, প্রযুক্তি স্বনির্ভরতাকে কঠোরভাবে গুরুত্ব দেবে চীন। আর এর ফলে পরিবেশবান্ধব জ্বালানী, শিক্ষা আর হেলথকেয়ার খাতেগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচিত হলো উল্লেখযোগ্যভাবে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সামরিক বাহিনীর ব্যাপক আধুনিকায়ন ও দুই অংকের প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছে চীনা আইনপ্রণেতারা। অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দেশিয় দারিদ্র বিমোচন কিংবা বেল্ট এন্ড রোড ইনিসিয়েটিভের মত উদ্যোগকে। সব মিলিয়ে আলোচিত সংস্কার ও উন্নয়নের পথেই যে ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর মহাচীন এগিয়ে চলেছে তা বলাই যায়।

 

চীনের দারিদ্র্য বিমোচনের গল্প:

‘১০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য মুক্ত করা এক নতুন সূচনা’

দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচির মাধ্যমে চীনে ১০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য সীমার উপরে নিয়ে আসাকে এক নতুন সূচনা হিসেবে অভিহিত করেছেন গুইচৌও প্রদেশের ভাইস-গভর্নর হু কৌচেন। ‘চীনা গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন-সিপিপিসিসি’র গুরুত্বপূর্ণ এ সদস্য বলেন, নারীদের জন্য নানা ধরনের হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পে দক্ষতা অর্জনের মতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাদের কাজের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। দুই অধিবেশনের সাইডলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নাগরিকদের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন।

“অতি দারিদ্র্য দূর করাই শেষ কথা নয়, বরং এক নতুন জীবন ও নতুন সংগ্রামের সূচনা মাত্র। দারিদ্র্য দূর করার জন্য নাগরিকদের স্থানান্তর মানে কেবল তাদের ঘরবাড়ি স্থানান্তর নয়, উজ্জ্বলতম ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রা। যাদেরকে বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে তাদের জন্য বসবাস ও কাজের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ওয়ার্কশপ, সাংস্কৃতিক পর্যটন, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে এসব কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছি।“

ব্যবসাপাতি (১২): ‘করোনার মধ্যেও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন’_fororder_caijing6

হু কৌচেন, সদস্য, সিপিপিসিসি

আপনার পরামর্শ আমাদের সমৃদ্ধ করবে। আপনার যে কোন পরামর্শ পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। চীন আন্তর্জাতিক বেতার –সিআরআই বাংলা’র ফেসবুক পাতায় আপনার মন্তব্য করতে পারেন। আরো যুক্ত থাকতে পারেন সিএমজি বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla এবং ও ইউটিউব লিঙ্ক youtube.com/cmgbangla তে গিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে আবারো কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সুস্থ্য থাকুন, শুভকামনা সবাইকে।