২০২১ সালে চীনের উন্নয়নের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা
2021-03-10 14:22:49

২০২১ সালে চীনের উন্নয়নের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা_fororder_02fa64144b54922d66095a13ee492a81

২০২১ সাল চীনের চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার সূচনা বছর। সম্প্রতি দুই অধিবেশনে যে সরকারি কার্যবিবরণী পেশ করা হয়েছে, সেখানে নতুন বছরের নতুন উদ্দেশ্য ও ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে চীনের উন্নয়নের ৬টি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। সেগুলো হল:

 

১.  এক বছর পর চীন আবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন লক্ষ্য নির্ধারন করেছে। ২০২০ সালের সরকারি কার্যবিবরণীতে অর্থনীতির উন্নয়নে কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ছিল না। তবে, চলতি বছরে ৬শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। তার মানে চীনের অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে।

 

২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় কম প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। তবে, তখন থেকে পরবর্তী প্রতি প্রান্তিকের উপাত্ত ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখে। এবং ২০২০ সালে চীনের জিডিপি ২.৩শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

 

সরকারি বিবরণীতে সামষ্টিক সমন্বয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এতে শহরে বেকার হার ৫.৫ শতাংশ, ভোক্তা মূল্য ৩ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক ব্যয় ও আয় ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্য স্থির করা হয়।

 

চীনের সংস্কার ও উন্নয়ন কমিশনের মহাপরিচালক হ্য লি ফেং বলেন, বর্তমানে পরিষেবা খাত বেশ সমস্যার সম্মুখীণ। মাঝারি ও ছোট শিল্প্রতিষ্ঠানসমূহ কষ্টকর অবস্থা পার করছে। তবে, চলতি বছরের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তাবয়নের মতো যথেষ্ট আস্থা ও দক্ষতা আছে চীনের।

 

২. বাজারের প্রাণশক্তি জোরদার করা

গত বছরের সরকারি বিবরণীতে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হয়। যেমন, শুল্ক, সাধারণ ব্যবসার বিদ্যুতের দাম, মাঝারি ও ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট খরচ কমানো হয়। ফলে ২.৮ ট্রিলিয়ান ইউয়ান কেন্দ্রীয় প্রবৃদ্ধিতে যোগ হয়। চলতি বছরের ক্ষুদ্র করদাতাদের মূল্যসংযোজন করের সীমা ১ লাখ থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখে নির্ধারন করা হয়। এতে ছোট ব্যবসায়ীদের কম শুল্ক জমা দিতে হবে। ছোট ও ক্ষুদ্র কোম্পানির জন্য বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়।

 

২০২০ সালে মহামারির আঘাতে ধারাবাহিক শুল্ক হ্রাস ব্যবস্থার সাহায্যে কোম্পানিগুলো ১০ কোটি ইউয়ানের বেশি কর সাশ্রয় করেছে এবং চলতি বছরের সরকারি বিবরণীতে আবারও সাহায্য দেওয়ার কথা শুনে কোম্পানিগুলো সস্তিতে রয়েছে।

 

৩. কর্মসংস্থানের প্রাধান্য জোরদরা এবং জীবিকা উন্নয়ন করা

কর্মসংস্থান হল জীবিকার বৃহত্তম বিষয়। চলতি বছরে আরও ১.১কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে সরকার। তা গেল বছরের তুলনায় ২০ লাখেরও বেশি। ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলো মহামারির আঘাত পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারে নি এবং নতুন করে ৯০ লাখ ৯০ হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ও কৃষকদের কর্মসংস্থান অগ্রাধিকার পাবে চলতি বছর। মহামারি চলাকালে ইয়াং চৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাউড কর্মসংস্থান ব্যবস্থা স্নাতকদের শধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তা অনলাইনে শিক্ষকদের চাহিদা ও অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি কোম্পানির কাছে নিজেদের ছাত্রছাত্রীদের পরিচয় তুলে ধরছে। এভাবে স্নাতকদের জন্য কর্মের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

 

তাছাড়া, মাথাপিছু চিকিত্সা ভাতা আরও ৩০ ইউয়ান বৃদ্ধি, বড় শহরের আবাসন সমস্যা সমাধান, পরিবেশ সংরক্ষণ জোরদার করাসহ সাধারণ মানুষের জীবিকা সম্পর্কিত সব বিষয় নিয়ে সরকারি পরিকল্পনা রয়েছে। বাধ্যতামূলক শিক্ষার ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও শহর এবং গ্রামের শিক্ষার মানের একীকরণের কথাও উল্লেখ করা হয় চলতি বছরের পরিকল্পনায়।

 

৪. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন বাস্তব অর্থনীতিতে কাজে লাগানো

এ বছরের পরিকল্পনায় মৌলিক গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের মৌলিক গবেষণা ব্যয় ১০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মৌলিক গবেষণা বেশ সময় সাপেক্ষ এবং যারা গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন, তাদের জন্য সুবিধা সৃষ্টি করতে হয়। মহমারির সম্মুখীণ প্যানেল নির্মাতা কোম্পানি টিসিএলের গেল বছরে নিট মুনাফা ছিল ২০১৯ সালের তুলনায় ১৪০ শতাংশ বেশি। কোম্পানির সিইও মনে করেন, স্থিতিশীল শিল্প চেইন ও টেকসই উদ্ভাবনের সাহায্যে এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। নতুন বছরে কোম্পানির গবেষণা ও উদ্ভাবনে সরকার আরও শুল্ক সুবিধা দেওয়ার কথা শুনে তিনি খুব খুশি। তিনি বলেন, কোম্পানি গবেষণায় আরও বিনিয়োগ করবে এবং গুণগত মানের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবে।

 

৫. ভোগে উত্সাহ জোগানো

অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রসারিত করা গুরুত্বপূর্ণ। নানাভাবে নাগরিকের আয় বৃদ্ধি করা, গাড়ি ও গৃহস্থালী যন্ত্রপাতিসহ বড় আকারের ভোগ বৃদ্ধি করা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, পর্যটন ও ক্রীড়াসহ পরিষেবার  ভোগ উন্নয়ন করাসহ নানা পদক্ষেপ নিবে সরকার।

 

মানুষের পকেটে পয়সা বেশি হলে তারা ভোগ করতে পারবে। পাশাপাশি সরকারি অর্থের বেশির ভাগই জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। যেমন: ১৯৯৫ সালে নির্মিত নান চিং শহরের একটি কমিউনিটি চলতি বছরে ১০৮টি পুরাতন কমিউনিটি পুর্ননির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। চলতি বছরে সারা চীনে ৫৩ হাজার পুরাতন কমিউনিটি সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

 

৬. কোটি কোটি কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা

জাতির পুনরুত্থান চাইলে গ্রামের পুনরুত্থান বাস্তবায়ন করতে হবে। চীনে সার্বিকভাবে চরম দারিদ্র্যমুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে এবং তারপর শুরু হয়েছে গ্রামের পুনরুত্থান কাজ। দ্রুত বা বড় আকারে এ কাজ করা সমীচিন নয়, বরং দারিদ্র্যমুক্তির সফলতাকে সুসংহত করার পাশাপাশি ধাপে ধাপে গ্রামের পুনরুদ্ধার কাজ করতে হবে।

 

সরকারি বিবরণীতে খাদ্য উত্পাদন পরিমাণ ৬৫ কোটি টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গুনগত মানের বীজ সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রসারিত করা খাদ্য নিরাপত্তার মূল বিষয়। গ্রামের অবকাঠামো ও গণসেবা জোরদার করা এবং গ্রামীণ শিল্প উন্নয়ন করার মাধ্যমে চলতি বছরে কোটি কোটি কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করবে চীন।( শিশির/এনাম/রুবি)