ব্যবসা-বাণিজ্য ০৩০৮
2021-03-09 11:30:15

২০২০ সালে চীনের জিডিপি ২.৩  শতাংশ বেড়েছ

গেল বছর চীনের জিডিপি বেড়েছে ২.৩ শতাংশ। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত ‘চীনের জাতীয় অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়ন পরিসংখ্যান, ২০২০’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

 

প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে চীনের জিডিপি ২.৩ শতাংশ বেড়ে ১০১ ট্রিলিয়ন ৫৯৮ বিলিয়ন ৬০০ মিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়ায়। এর মধ্যে প্রথম শিল্প মানে কৃষি খাতে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ট্রিলিয়ন ৭৭ বিলিয়ন ৫৪০ মিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছায়। দ্বিতীয় শিল্প বা শিল্প খাতে ২.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ ট্রিলিয়ন ৪২ বিলিয়ন ৫৫০ মিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছায়। এবং তৃতীয় শিল্প বা পরিষেবা খাত ২.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫ ট্রিলিয়ন ৩৯ বিলিয়ন ৭৭০ মিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছায়। জিডিপিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পের অবদান যথাক্রমে ৭.৭, ৩৭.৮ এবং ৫৪.৫ শতাংশ।

 

পরিসংখ্যান আরও বলছে, ২০২০ সালে ডিজিপির প্রবৃদ্ধিতে ভোগের অবদান ০.৫ শতাংশ কমেছে, বিনিয়োগের অবদান ২.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং পণ্য ও সেবা রপ্তানির অবদান ০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি ৬.৮ শতাংশ হ্রাস পায়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি ৩.২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি ৪.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এবং চতুর্থ প্রান্তিকে জিডিপি ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সারা বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু ডিজিপি ছিল ৭২হাজার ৪৪৭ইউয়ান করে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি।

 

পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালে প্রতি ১০হাজার ইউয়ান জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যয় আগের বছরের তুলনায় ০.১ শতাংশ কমেছে। সারা বছরে দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে  ১কোটি ১৮লাখ ৬০হাজার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬লাখ ৬০ হাজার কম। ২০২০ সালে সারা দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৫.২ শতাংশ।

 

এ ছাড়া, ২০২০ সালের শেষের দিকে জাতীয় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ট্রিলিয়ন ২১৬বিলিয়ন ৫০০মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে চীনের সকল গ্রামবাসী দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। 

 

চীনে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯৮কোটির বেশি

 

২০২০ সাল শেষে চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ কোটি ৯০ লাখে। এর মধ্যে মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৮ কোটি ৬০ লাখ।  চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

 

ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুসারে, চীনে ২০২০ সালে মোবাইল ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের পরিমাণ ছিল ১৬,৫৬০ কোটি গিগাবাইট (জিবি), যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩৫.৭ শতাংশ বেশি।

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে গোটা চীনে অধিবাসীদের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ২৭ হাজার ৫৪০ ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩.৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে শহরের অধিবাসীদের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ৪০হাজার ৩৭৮ইউয়ান, যা ২০১৯সালের তুলনায় ২.৯ শতাংশ বেশি। আর গ্রামের অধিবাসীদের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৫হাজার ২০৪ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বেশি।

 

প্রতিবেদন অনুসারে, গেল বছর গোটা চীনে অধিবাসীদের মাথাপিছু গড় ভোগের পরিমাণ ছিল ২১হাজার ২১০ ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১.৬ শতাংশ কম। তা ছাড়া, গোটা বছরে এক্সপ্রেস বিলির সংখ্যা ছিল ৮,৩৩৬ কোটি।

 

চীনে প্রথমবারের মতো ‘রাষ্ট্রীয় গ্রাম পুনরুদ্ধার ব্যুরো’ গঠিত

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চীনের ‘রাষ্ট্রীয় গ্রাম পুনরুদ্ধার ব্যুরো’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আগের ‘রাষ্ট্রীয় পরিষদের দারিদ্র্যবিমোচন ও উন্নয়ন গ্রুপ কার্যালয়ের’ দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো। নতুন এ ব্যুরোর আনুষ্ঠানিক গঠন সার্বিকভাবে গ্রামের পুনরুদ্ধার জোরদার প্রক্রিয়া উন্মোচিত হলো।

 

এ ব্যুরো চীনের ‘গ্রাম, কৃষি, কৃষক’ বিষয়ক কাজগুলো তত্ত্বাবধান করবে। দারিদ্র্যবিমোচন খাতে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জনের পর সার্বিকভাবে গ্রাম পুনরুদ্ধার জোরদার করা এবং দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য সুদৃঢ় করবে বিশেষ এই সংস্থা।

 

‘চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের’ জন্য গ্রামের পুনরুদ্ধার বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই চীনে প্রথমবারের মতো গ্রামীণ পুনরুদ্ধার ব্যুরো স্থাপন করা হলো। এটি চীনে সার্বিকভাবে গ্রামীণ পুনরুত্থান জোরদারে দৃঢ়তার প্রতিফলন।

 

অর্থের আন্তঃদেশীয় প্রবাহে আস্থাশীল চীনের ব্যাংক ও বীমা তত্ত্বাবধান কমিটি

সম্প্রতি চীনের ব্যাংক ও বীমা তত্ত্বাবধান কমিটির চেয়ারম্যান কুও সু ছিং রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-কার্যালয়ের এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, অর্থের আন্তঃদেশীয় প্রবাহে আস্থাশীল চীন। একে উত্সাহিত করা হবে।

 

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী শুরু থেকেই বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আসছে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ এ অবস্থা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় আর্থিক নীতি ও শিথিল মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। অর্থনীতির বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে অর্থের আন্তঃদেশীয় প্রবাহ বাড়ানো দরকার। চীনে বিদেশি অর্থের প্রবাহও বাড়ছে।

 

চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধি দেশটির শক্তিশালী অর্থনীতির প্রতিফলন: বিশ্লেষকের অভিমত

 

সম্প্রতি চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত ২০২০ সালের জাতীয় অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের জিডিপি ১০০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি, চীনে টানা দুই বছর মাথাপিছু জিডিপি ছিল ১০ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা বলছেন, জিডিপি সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যানে চীনের অর্থনীতির দৃঢ়তা ও স্থিতিস্থাপকতা প্রতিফলিত হয়েছে।  

 

চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক যোগাযোগ কেন্দ্রের উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ চাং ইয়ং জুন বলেন, জিডিপিতে একটি দেশের বহুমুখী শক্তির প্রতিফলন হয়। গত বছর গুরুতর মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পরও, চীনের জিডিপি ১০০ ট্রিলিয়ান ইউয়ানেরও বেশি ছিল, যা খুবই সন্তোষজনক। তা ছাড়া, বিশ্ব ব্যাংকের ২০২০ সালের মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় ১২,৫৩৫ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেলে দেশটিকে উচ্চ-আয়ের দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। চীন এর অনেকটা কাছে চলে এসেছে।

 

চাং আরও বলেন, ২০২০ সালে চীনা নাগরিকদের গড় মাথাপিছু নিষ্পত্তিযোগ্য আয় ছিল ৩২,১৮৯ হাজার ইউয়ানেরও বেশি। নাগরিকদের আয় অব্যাহতভাবে বৃদ্ধিও পাচ্ছে। এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, চীন সরকার নাগরিকদের আয় বৃদ্ধির উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে।

 

প্রেমা/এনাম