সুইজারল্যান্ডের বার্নে চীনা সংস্কৃতি প্রচার করছেন চাইনিজ স্কুলের চ্যান্সেলার
2021-03-09 14:04:02

সুইজারল্যান্ডের বার্নে চীনা সংস্কৃতি প্রচার করছেন চাইনিজ স্কুলের চ্যান্সেলার_fororder_3)瑞士伯尔尼华夏中文学校的孩子们。

২৬ ফেব্রুয়ারি চন্দ্র মাসের পনেরো তারিখে সুইজারল্যান্ডের বার্নে চাইনিজ স্কুল ‘নতুন বছর, ল্যান্টন ফেস্টিভাল, ল্যান্টন রিডাল গেসিং-ই নেট লাভ পার্টি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে উত্সব উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করে। নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া মহামারীর কারণে, সুইজারল্যান্ডের অনেক চীনা ও প্রবাসী চীনা মানুষ ২০২১ সালের বসন্ত উত্সব চলাকালীন "নিজ স্থানে নতুন বছর উদযাপন করেন"। এই চীনা বিদ্যালয়ের চ্যান্সেলার ইয়াং পিং তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের প্রতিবেদককে একান্ত সাক্ষাত্কারে বলেন, বিশ্বের মহামারী পরিস্থিতি ভালো হলে আমরা চীনে ফিরে যাব।

 

ইয়াং পিংয়ের স্বামী হলেন সুইস এবং তাঁর দুটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের স্কুলের বয়স হলে পুরো পরিবার সুইজারল্যান্ডে চলে যায়। এখন পর্যন্ত ১২ বছর হয়ে গেছে। ইয়াং পিং পড়াতে পছন্দ করেন। চিরাচরিত চীনা সংস্কৃতি তিনি ভালোবাসেন। তাই তিনি সাত বছর আগে একটি অলাভজনক চীনা স্কুল চালু করেছিলেন। এটি সুইজারল্যান্ডের বার্নের চাইনিজ স্কুল। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল- তার মেয়েরা বিদেশে বসেও চীনা ও চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুক। ধীরে ধীরে স্থানীয় চীনা ও প্রবাসী চীনাদের বাচ্চারা, স্থানীয় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ ও অঞ্চল থেকে চীনা বংশোদ্ভূত শিশু ও সুইস শিশুরা এতে ভর্তি হয়।

 

বর্তমানে স্কুলে ১৪০জনেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তিন বা চার বছরের শিশু থেকে ৪০/৫০ বছর বয়সের লোক আছে। ইয়াং পিং আরও বেশি লোককে চীনা ভাষা শেখা এবং চীনা সংস্কৃতি শেখাতে পেরে গর্বিত। তার স্বামীও তাকে দৃঢ় সমর্থন দেয়।

 

চীনা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে, স্প্রিং ফেস্টিভাল বিদেশি চীনাদের প্রত্যাশিত বিষয়। ইয়াং পিং শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনা প্রথা চালু করেছেন। প্রতি বছর বসন্ত উত্সব চলাকালীন, বিদ্যালয়ে প্রায় এক মাস ধরে চীনা নববর্ষকে ঘিরে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কারণ, ইয়াং পিংয়ের দৃষ্টিতে বিদেশে চীনা শেখানো মানে- শুধু স্বাক্ষরতা ও পাঠদান নয়, বরং এটি সংস্কৃতিগত উপাদানের ব্যাখ্যা এবং এটি চীনা সংস্কৃতি শেখানোর সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন,

 

“লাবা দিন (দ্বাদশ চান্দ্রমাসের অষ্টম দিন) থেকে, আমার হৃদয় উষ্ণ হয়ে ওঠে। এই মাসে আমরা চাইনিজ নববর্ষ ঘিরে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করি, আমার ছাত্ররা ও আমি লাবার পোরিজ তৈরি করি, নতুন বছরের ছবি ঝুলাই। স্প্রিং ফেস্টিভালের দ্বি-চরণবিশিষ্ট শ্লোক সেঁটে দেই, ফু বা সৌভাগ্য লেখা অক্ষরগুলি ঝুলাই, নতুন বছরের কিংবদন্তি সম্পর্কে কথা বলি এবং বিভিন্ন আকারের ডাম্প্লিং তৈরি করি। শিশুদের প্রতিবছর চীনা নববর্ষ ও চাইনিজ সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর বোঝার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য স্প্রিং ফেস্টিভাল গালাও স্কুলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।”

 

নভেল করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া মহামারী শুরু হলে সুইস স্কুলের ক্লাস অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে ইয়াং পিং অনলাইনে স্কুল চালু রাখেন। তিনি প্রথমে শয়নকক্ষকে অফিসে পরিণত করেন। তবে, শিক্ষার্থীদের কথা ভালোভাবে বলা ও শোনার জন্য তিনি তার অফিস বেসমেন্টে নিয়ে যান।

 

সম্প্রতি ক্লাস চলাকালীন, একটি মেয়ে বলেছিল: "শিক্ষক, আমার মা বলেছেন যে, তিনি নতুন বছর চীনে ফিরে যেতে চান এবং আমার নানীকে দেখতে চান।" ইয়াং পিং মেয়েটিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,

 

“তুমি তোমার মাকে বলো, আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে। সুইজারল্যান্ডের চাইনিজরা তোমার মায়ের সঙ্গে রয়েছে। আমরা সবাই এখানে আছি। মহামারী ভালো হলে আমরা দ্রুত ফিরে যাব। আমিও ফিরে যেতে চাই, তবে এই অবস্থায় আমি ফিরে যেতে পারব না। কারণ, আমাদের দেশে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এখন সেখানে প্রতিটি বিষয় সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা নিশ্চিন্তভাবে এখানে বাস করছি। বিশ্বে যখন মহামারী পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভালো হবে, তখন সবাই খুব আনন্দের সঙ্গে চীনে ফিরে যাবো।”

 

ইয়াং পিং বলেন, তিনি বিশ্বের যেখানেই যান-না-কেন, তিনি তাঁর দেশ, শহর ও মাতৃভূমির কথা মনে রাখেন। ইয়াং পিং বলেন,

‘আমি সাধারণত কাজ করি, পড়াশোনা করি ও স্থানীয়দের মতো বাস করি। তবে যখন চীনা নববর্ষ আসে তখন আমি মাতৃভূমিকে খুব মিস করি।

 

আসলে, আমি সম্প্রতি পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে ভিডিও কল দেওয়ার সাহস পাইনি। আপনি যখন আপনার প্রিয়জনকে 'বিদায়' বলেন, সেটি খুব কঠিন কাজ, আপনি জানেন যে আপনি দীর্ঘদিন একে অপরকে দেখতে পাবেন না।”

 

ইয়াং পিং বলেন, মহামারীর কারণে তিনি প্রায় এক বছর ধরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। আপনার যখন কিছু করার দরকার হয়, যেমন পিতামাতার কাছে বই পাঠানো, আপনি তুলনামূলক খোলা জায়গায় গিয়ে কল দেবেন। প্রত্যেকে মুখোশ পরে থাকে, দেখা-সাক্ষাত করে, কিছু কথা বলে এবং তারপরে তড়িঘড়ি করে বাড়িতে ফিরে যায়।

 

তিনি তাঁর বন্ধুদের দেখেছিলেন যে, তারা জার্মানির বেশ কয়েকটি স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে চীনা ভাষায় ‘মহামারী পরে’ গানটি গেয়েছিলেন। ইয়াং পিং বলেন, যে গানটি দীর্ঘকাল ধরে তাদের মনে থাকবে।

 

ইয়াং পিং বলেন,

“যখন আমি এই গানটি প্রথমবার শুনি, আমি তা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনেছি এবং এর (ভিডিও) দেখেছি। আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। কারণ এতে এমন একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে, যা আমরা দীর্ঘকাল ধরে চাপা দিয়ে রেখেছি এবং তারা এটি গানের মাধ্যমে প্রকাশ করে দিয়েছে। গানের প্রথম কয়েকটি কথা এরকম: ‘মহামারী শেষ হয়ে গেলে আমি বেড়াতে যেতে পারি, পাহাড় দেখতে, সাগর দেখতে, ফুল দেখতে, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে দেখতে যেতে পারি। কয়েকটি পারিবারিক ছবি তুলতে চাই। নীল মুখোশটি খুলে হাসতে চাই।’ আমি যখন এটি শুনেছি, আমি ভেবেছিলাম, আমরা আশা করি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুখোশগুলি সরিয়ে ফেলব।”

 

ইয়াং পিং বলেন, বিদেশে বসবাসরত চীনারা মহামারীর সময় মাতৃভূমি সম্পর্কে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। তারা ছাত্রদের সংগঠন বা অন্যান্য দলের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শুনেছেন এবং শিখেছেন যে, মাতৃভূমিতে মহামারী ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এবং তারা ছিল মাতৃভূমির জন্য গর্বিত। এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডের প্রায় সব চীনারা দূতাবাসের দেওয়া মুখোশ, গ্লাভস ও অন্যান্য এন্টি-মহামারী সামগ্রী পেয়েছে।

 

স্থানীয় চীনা ও প্রবাসী চীনারাও একত্রিত হয়েছে, প্রবীণদের জন্য শাকসবজি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে সহায়তা করেছে। ইয়াং পিং বলেন,

‘মহামারীটি এতটাই পরিবর্তন করে দিয়েছে যে কিছু জিনিস আর কখনও আগের মতো হবে না। তবে, আমরা একে অপরকে আন্তরিকতা দিয়ে উষ্ণতর বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি। আমি আশা করি যে ষাঁড় বর্ষ আমার প্রিয় মাতৃভূমি ও বিশ্ববাসীর জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে। আমি আশা করি যে, আমার মাতৃভূমি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে। আসুন আমরা আমাদের পুরানো জীবন আবার শুরু করি।’