বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে চীনের দুই অধিবেশন
2021-03-07 20:33:56

চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন- সিপিপিসিসি ও জাতীয় গণ কংগ্রেস-এনপিসির অধিবেশন চলছে রাজধানী বেইজিংয়ের মহাগণভবনে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ চীনা কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি ও দেশের শীর্ষ নেতারা দুই অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। ৪ মার্চ শুরু হয় সিপিপিসিসির অধিবেশন। এতে ২ হাজার ১০০ জনের বেশি সদস্য চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে আলোচনায় অংশ নেবেন। ৫ মার্চ ১৩তম এনপিসির চতুর্থ অধিবেশন শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, সিপিসির শীর্ষ নেতাসহ প্রায় তিন হাজার প্রতিনিধি যোগ দেন এতে। 
চীনের আগামী পাঁচ বছরের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষাসহ সকল পরিকল্পনা গৃহীত হবে এ দুই অধিবেশনে। তাই চীনের কাছে এ দুই অধিবেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গতকারণে গোটা বিশ্বও চীনের এ দুই অধিবেশনকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। একইভাবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও চীনের দুই অধিবেশনের খবরাখবর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার ও প্রকাশ করে থাকে।
চীনের দুই অধিবেশন বিশেষ করে এনপিসির অধিবেশন শুরুর খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিশেষ করে জাতীয় সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে গুরুত্ব পেয়েছে। জাতীয় দৈনিক যুগান্তর তাদের আন্তর্জাতিক খবরে শিরোনাম করেছে ‘চীনে এবার ঐতিহাসিক বাজেট’। কালেরকণ্ঠ তাদের দেশেদেশে পাতায় শীর্ষ খবরে শিরোনাম করেছে- হংকংয়ে ক্ষমতায় থাকবে স্রেফ দেশ প্রেমিকরা’। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার তাদের আন্তর্জাতিক পাতায় খবরটিকে প্রধান শিরোনাম করেছে। খবরটির শিরোনাম এরকম- চায়না মুভস টু ইলিমিনেট হংকং অপোজিশন’। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি ও দেশ টিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে তাদের নিউজ বুলেটিন এবং অনলাইনে খবরটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ ও সম্প্রচার করেছে। 
যুগান্তর তাদের প্রতিবেদনে চীনের এবারের বাজেটকে ঐতিহাসিক বাজেট হিসেবে অভিহিত করেছে। যুগান্তর লিখেছে ‘করোনাকালে এ সংকটময় অর্থনীতির মধ্যেই ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা বাজেট ঘোষণা দিল চীন। শুধু সেনা খাতেই খরচ করবে ২০৮ বিলিয়ন ডলার বা ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। যা ভারতের চেয়ে তিন গুণ বড়’।
জাতীয় গণ কংগ্রেসের অধিবেশনে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের ২০২১ সালের প্রতিবেদন পাঠের কথা তুলে ধরে যুগান্তর আরও লিখেছে, ‘চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ অর্জনরে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। অর্থাৎ মহামারির ধাক্কা দ্রুত সামলে উঠছে বেইজিং’।
চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে যুগান্তর লিখেছে, ‘দেশের সুরুক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে লালফৌজের আধুনিককরণের বিষয়টিও আমরা যথেষ্ট গুরুত্বে সঙ্গে দেখছি। এই বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে আগামীতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার হাত ধরেই চীনের সামগ্রিক অর্থব্যবস্থাও উন্নতির দিকে এগোবে’।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভির অনলাইন সংস্করণে এনপিসির বৈঠক সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে চীন সরকার। অঞ্চলটির ক্ষমতায় ‘দেশপ্রেমিকদের’ অবস্থান শক্ত করতেই এই সংস্কারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। 
অন্য টিভি চ্যানেল দেশ টিভি লিখেছে, এনপিসি বৈঠকে চীনের অর্থনীতিকে আরও বেগবান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং। চলতি বছরে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি ও পরিবহন এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনা হবে। 
সার্বিকভাবে বেশিরভাগ সংবাদ মাধ্যম চীনের দুই অধিবেশনের ইতিবাচক খবর দিয়েছে। তবে কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির মতো বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থায় চীনের ঘোষিত সংস্কারকে প্রধান করে তোলে। পশ্চিমা সংবাদ সংস্থা পরিবেশিত খবরগুলোই মূলত হুবহু ছেপেছে তারা। 
এ বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং ৫ মার্চ এনপিসিতে তার বক্তব্যে স্পষ্ট জানিয়েছেন, হংকংয়ের বিষয়ে বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ বরদাশত করবে না চীন। রোববার এনপিসির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এ বিষয়টি আরও পরিষ্কার করেছেন। তিনি জানান, মাতৃভূমির সাথে পুনরায় সংযুক্তির গত ২৪ বছরে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার হংকংয়ের গণতন্ত্রের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এবং আশা করছে হংকংয়ের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। ওয়াং ই আরও বলেন, আমাদের সংকল্প হচ্ছে এক দেশ দুই ব্যবস্থা, হংকংবাসীদের দ্বারা হংকংয়ের প্রশাসন পরিচালনা এবং সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখা। হংকংয়ের জন্য আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে বলেও জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।