রোববারের আলাপন-210307
2021-03-07 20:38:55

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি এনাম এবং আকাশ।

এনাম ভাই, পিং পাং ছিউ তথা টেবিল টেনিস খেলা আপনি পছন্দ করেন কি?

এনাম:....
আকাশ: আমি চীনে থাকার সময় তা খুব কম খেলি, কিন্তু বাংলাদেশে বসবাসের সময় অনেক খেলেছি। তখন আমার একজন খুব ভাল চীনা বন্ধু ছিল। উনি তা অনেক পছন্দ করেন। কিছু কিছু সময় রাতের খাবার শেষ করে তিনি এবং আমি একসাথে খেলতাম। প্রায় এক বা দেড় ঘন্টা খেলার পর সারা শরীর ঘেমে যেত। তখন অনেক আনন্দ পেতাম।

এনাম:...

আকাশ: বন্ধুরা, আজকে তাহলে টেবিল টেনিস সম্পর্কে একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব, কেমন?

ইয়ান হং চুন হচ্ছেন চীনের হ্য পেই প্রদেশের হান তানের লোক। ২০০২ সাল থেকে তিনি কাতারের জাতীয় টেবিল টেনিস দলের কোচের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত ১৯ বছর ধরে তিনি কাতারের দলকে উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি শক্তিশালী দলে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। তিনি টেবিল টেনিস প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দু’দেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের দূতের মত কাজ করছেন। 

গত ১১ ফেব্রুয়ারি চীনের চন্দ্র পঞ্জিকার ‘সান সি’ মানে চীনা নববর্ষ তথা ষাঁড় বর্ষের আগের দিন। চীনে পরিবারের সবাই একত্র হয়ে একসাথে ‘চিও চি’ তৈরি করে খান সে দিন। এবং সিএমজির বসন্ত উতসবের গালা উপভোগ করেন। কাতারের রাজধানী দোহাতে গোধুলি লগ্নে ইয়ান হং চুন কাতার টেবিল টেনিস দলের খেলোয়ারদেরকে আগের মতো প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন।  কাতারে থাকার ১৯ বছরে বসন্ত উতসবসহ চীনের কোন উতসবেই তিনি একদিনও বিশ্রাম নেন নি।
 
তিনি বলেন, “২০০২ সাল থেকে কাতারে আসার পর, প্রতি বছরের বসন্ত উতসবে আমরা প্রশিক্ষণ বা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ব্যস্ত থাতাম। কখনও চীনে ফিরে আত্বীয় স্বজনদের সাথে বসন্ত উতসব কাটাই নি। আমার বাবা-মাকে মনে পড়লে আমি সবচেয়ে দুঃখ পাই। বাবা-মা চলে যাওয়ার মহূর্তেও আমি তাঁদের পাশে ছিলাম না।”

ছাপ্পান্ন বছর বয়সী ওয়াং হং চুন আগে চীনের জাতীয় টেবিল টেনিস দলের একজন খেলোয়ার ছিলেন। জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার পর , তিনি বাহরাইনে গিয়ে সেদেশের টেবিল টেনিস জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। সেখানে তিনি ১০ বছর ধরে কাজ করেন। ২০০২ সাল থেকে তিনি কাতারে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। 

তাঁর স্ত্রী, মাদাম সু লি, চীনের সান শি প্রদেশের টেবিল টেনিস দলের খেলোয়ার ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি কাতারে এসে সেদেশের জাতীয় নারী দলের কোচের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। তখন থেকে এ দম্পতির প্রচেষ্টায় কাতারের টেবিল টেনিস খেলার মান আরব অঞ্চলের শীর্ষ স্থানে পৌঁছেছে। 

ইয়ান হং চুন বলেন, “কাতারের জাতীয় দলের সবাই হলেন সখের খেলোয়ার। তাঁদের প্রশিক্ষণের সময় ও পরিমাণ পেশাদার খেলোয়ারদের চেয়ে অনেক কম। এ জন্য তাদের বৈশিষ্ট অনুসারে আমরা তাঁদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।” 

কাতারের জাতীয় দলের প্রধান দীর্ঘমেয়াদে ইয়ান হং চুনের সাথে কাজ করে আসছেন। তিনি তাঁর অনেক প্রসংশা করেন। তিনি বলেন, “ইয়ান হং চুন হচ্ছেন একজন অসাধারণ কোচ। তিনি প্রযুক্তিতে বেশ দক্ষ। তারঁ অভিজ্ঞতাও অনেক। তিনি খেলোয়ার প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় অনেক ভাল। আমার জন্য তিনি হলেন একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি অনেক আন্তরিক, আমার একজন বড় ভাইয়ের মতো। আমি তাঁর কাছ থেকে অনেক শিখেছি।”

জাতীয় দলের মান উন্নত হওয়ায় সেদেশের অনেকে তরুণ-তরুণী টেবিল টেনিসের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। সেদেশের অনেক পার্কে টেবিল টেনিসের টেবিল স্থাপন করা হয়েছে। এতে জনগণ এ খেলা বেশি করে খেলতে পারছে। 

ইয়ান হং চুন কাতার সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছেন শপিং মলের ভেতরেও টেবিল টেনিসের টেবিল স্থাপন করার জন্য। যাতে আরও বেশি কাতারি জনগণ টেবিল টেনিস খেলার সুযোগ পেতে পারেন।

ইয়ান হং চুন তরুণ-তরুনীদের প্রশিক্ষণে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর দুজন তরুণ খেলোয়ার জানান, তাঁরা তাঁকে অনেক পছন্দ করেন। তাঁরা বলেন, “তিনি একজন খুব ভাল কোচ। যদি তুমি শিখতে চাও, তিনি তাঁর সব জ্ঞাণ ও প্রযুক্তি তোমাকে শিখাবেন। তিনি সব সময়ই অনেক ধৈর্য্য নিয়ে আমাদের প্রযুক্তিগত বিষয় শিখাতে থাকেন।”
 
ইয়ান হং চুন বলেন, কাতারে তাঁর স্বীকৃতি ও প্রসংশা তাঁর নিজের প্রচেষ্টার কারণে এবং চীনের টেবিল টেনিসের সুষ্ঠু উন্নয়নের কারণে অর্জিত হয়।
 
তিনি বলেন, “বিদেশে অনেক বছর ধরে কাজ করছি, যেখানেই থাকি, আমি চীরকালই একজন চীনা। তা কখনও পরিবর্তন হবে না। আমি চীনের খেলাধুলার একজন দূত। মাতৃভূমি আমাকে বড় করেছে এবং উন্নত করেছে। মাতৃভূমি সব সময় আমার মনে থাকে। আমি আমার প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও বেশি কাতারিদের এ খেলা পছন্দ করাব। পাশাপাশি, আমি একটি ছোট জানালার মত, তার মাধ্যমে আমার আশেপাশের বিদেশি বন্ধুগণ চীনকে জানতে পারেন।” 
 
এনাম ভাই, এ গল্প শুনার পর আপনার কেমন লেগেছে?
এনাম:...