দেহঘড়ি পর্ব-৭
2021-03-05 20:18:17

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে রয়েছে স্বাস্থ্যখাতের একটি সুখবর, সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদসংকলন ‘স্বাস্থ্য বুলেটিন’, স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা ভুল ধারণা নিয়ে আয়োজন ‘ভুলের ভুবনে বাস’, প্রাকৃতিকভাবে রোগপ্রতিরোধ ও রোগমুক্তি নিয়ে কথন ‘ভাল থাকার আছে উপায়’, সাক্ষাত্কারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আয়োজন ‘কী খাবো কী খাবো না’।

দেহঘড়ি পর্ব-৭_fororder_0305-5

##সুখবর: টিকার সবচেয়ে বড় গুদাম আমিরাতে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের টিকা পাঠিয়েছে চীন বিশ্বব্যাপী এসব টিকার অনুমোদন বাড়তে থাকায় অনেক উন্নত দেশও চীনের টিকা আমদানি করতে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টিকা উত্পাদনে বিশেষ নজর দিয়েছে দেশটি টিকা সংরক্ষণ করতে প্রয়োজন হয় বিশেষ কাঠামোয় বানানো ওয়্যারহাউজ বা গুদামের চীনে যেমন বেশ কয়েকটি ওয়্যারহাউজ রয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশও বড় পরিসরে এটি নির্মাণ করছে

সবচেয়ে বড় ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত আন্তর্জাতিক মানের ওয়্যারহাউজের আয়তন ১৯ হাজার বর্গমিটার, যার রয়েছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ব্যবস্থা এখানে সংরক্ষণ করা যাবে টিকার কয়েক কোটি ডোজ

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এর অর্ধেক জায়গা জুড়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে টিকা পৌঁছে দেওয়ার মাস্টার প্লান রয়েছে দেশটির

মহামারি মোকাবিলায় সাফল্যের সাথে টিকাদান কার্যক্রম চলছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভবিষ্যতে চীনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা জানিয়েছে দেশটির সরকার

 

## হেল্ বুলেটিন: বাংলাদেশে টিকা নিলেন ৩৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষ

দেহঘড়ি পর্ব-৭_fororder_0305-6

PM Hasina receives her first shot of Covid-19 vaccine | Dhaka Tribuneবাংলাদেশে করোনাভাইরাসের গণটিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গেল ২২ দিনে টিকা নিয়েছেন ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ১৬৯ জন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুধু রাজধানী ঢাকাতেই এ পর্যন্ত টিকা গ্রহণ করেছেন ৫ লাখেরও বেশি মানুষ।

সবাইকে উত্সাহিত করতে প্রতিদিনই টিকা নিচ্ছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করোনার টিকা নিয়েছেন বৃহস্পতিবার। এর আগে টিকা নেন তাঁর বোন শেখ রেহানা।

টিকা নিতে এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ। সারাদেশে ১ হাজারেরও বেশি কেন্দ্রে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলছে এ কার্যক্রম। এতে কাজ করছেন প্রায় অর্ধ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী।

এদিকে ভারত থেকে আসা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৭৮৪ জনের জনের দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

 

বিশ্বে করোনা আক্রান্ত ১১ কোটি ৫৭ লাখ

বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১১ কোটি ৫৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪০৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৫ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৬ জনের এবং করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯ কোটি ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩১ জন।

প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে মহামারি ঘোষণা করে। এর আগে গতবছরের ২০ জানুয়ারি জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আক্রান্তের সংখ্যার তালিকায় দ্বিতীয় ও মৃতের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। আক্রান্ত দেশের তালিকায় তৃতীয় ও মৃতের তালিকায় দ্বিতীয়তে রয়েছে ব্রাজিল। এই তালিকায় ৩৩ নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

 

টিকা নিলেন ফুটবল কিংবদন্তি পেলে

দেহঘড়ি পর্ব-৭_fororder_0305-7

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। টিকা নেওয়ার মুহূর্তটিকে ‘স্মরণীয়’ উল্লেখ করে করোনার কাছে মানুষকে নতি স্বীকার না করার আহবান জানিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। নিজের টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে টিকা নেওয়ার একটি ছবিও পোস্ট করেছেন ‘কালো মানিক’ পেলে। তিনি লিখেছেন, ‘আজকের দিনটি কখনই ভোলার নয়। আমি টিকা নিলাম। মহামারি এখনো শেষ হয়ে যায়নি। জীবন বাঁচানোর তাগিদে আমাদের অবশ্যই নিয়ম মেনে চলতে হবে। কারণ এখনো অনেক মানুষ টিকে গ্রহণ করতে পারেনি।’

এ সময় করোনার সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন পেলে। পেলে আরও লিখেন, ‘আমরা যদি একে অপরের কথা চিন্তা করি ও একে অপরকে সহযোগিতা করি তবে এই মহামারি থেকে অচিরেই মুক্তি পাব।’ করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই সাও পাওলোতে নিজ বাড়িতে সেলফ আইসোলেশনে আছেন পেলে।

 

##ভুলের ভুবনে বাস : কত ভুল এইডস নিয়ে!

বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর স্বাস্থ্য-বিষয়ক সংকটগুলোর একটি এইচআইভি-এইডস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন কোটি মানুষ মারা গেছে। এছাড়া সারাবিশ্বে আরও তিন কোটি সত্তর লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত রয়েছে আর প্রতি বছর নতুন করে আরও ১৮ লাখের মতো মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে।

গত শতাব্দির আশির দশক থেকে প্রথম এই ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়াতে শুরু করে। প্রাণঘাতি এ রোগ সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে চলছে সচেতনতা কার্যক্রম। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি সম্পর্কে নানা ভুল ধারণা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখনও বিদ্যমান রয়েছে।

ছোঁয়াচে কিনা: এ বিষয়ে ব্যাপক ভুল ধারণা ছিল এবং এখনও খানিকটা রয়েছে। ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করতো যে, এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে বা তার ত্বক ও মুখের লালা দ্বারা যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এইচআইভি-এইডস কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয়। একই বাতাসে নিশ্বাস নিলে, জড়িয়ে ধরলে, চুমু খেলে, হাত মেলালে, একই পাত্রে খাবার বা পানি খেলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সামগ্রী ব্যবহার করলে কেউ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবে না।

দেহঘড়ি পর্ব-৭_fororder_0305-9

মশাবাহিত কিনা?: এক সময় বহু মানুষ বিশ্বাস করত মশা বা অন্য কোনও রক্তখেকো কীট কোনও আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়িয়ে তারপর সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে সুস্থ ব্যক্তিও এইচআইভি-তে আক্রান্ত হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যদিও রক্তের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায় কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে কীটের মাধমে এই রোগ ছড়া না। কারণ হলো কীট একজনের শরীর থেকে রক্ত খেয়ে রক্ত দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তির শরীরে সেই রক্ত আবার ঢুকিয়ে দিতে পারে না। তাছাড়া এসব কিটের শরীরে এই জীবাণু খুব সামান্য সময় বাঁচতে পারে।

মায়ের মাধ্যমে সংক্রমণ: এখনও পর্যন্ত ব্যাপকভাবে প্রচলিত ধারণা হলো আক্রান্ত নারী সন্তান জন্ম দিলে তার শিশুর শরীরেও এই জীবাণু চলে যাবে। কিন্তু চিকিত্সাবিজ্ঞান বলছে, সবসময় সেটি নাও হতে পারে। আক্রান্ত মায়ের শরীরে জীবাণুর মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে সন্তান জন্মদানের সময় সে শিশুকে আক্রান্ত নাও করতে পারে।

শারীরিক লক্ষণ: কারও কারও ধারণা কোনও শারীরিক লক্ষণ দেখা না দিলে সেটি এইচআইভি নয়। এটিও মারাত্মক ভুল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি চারজনের একজন জানেই না যে তিনি আক্রান্ত। কারণ এই জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার পরও কোনও ব্যক্তির শরীরে দীর্ঘ দিন কোনও রকমের লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে। তবে সাধারণত এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাব দেখা দেয়। এরপর হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীরে র্যা শ দেখা দেয়। অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দেয় যখন ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকলে কাশি, ডায়ারিয়া, লিম্ফ নোড বা চামড়ার নিচে ফুলে যাওয়া গোটার মতো দেখা দেয় এবং ওজন কমে যায়।

আক্রান্তরা অল্প বয়সে মারা যায়: সাধারণভাবে মনে করা হয়, এইচআইভিতে কেউ আক্রান্ত হলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে তিনি মারা যায়। কিন্তু বর্তমানে নানা ধরনের চিকিত্সার কারণে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিও দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করতে পারছে। জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক সংস্থার উপাত্ত বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৪৭ শতাংশের ক্ষেত্রে এইচআইভি জীবাণুর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে। এমনকি অনেক সময় রক্ত পরীক্ষায়ও জীবাণুটি ধরা পড়ে না। তবে চিকিত্সায় অবহেলা করলে এ জীবাণু শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।

নিরাময়: আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু দেশে অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে, কোনও পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কুমারী নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে এ ভাইরাস দূর হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি একেবারেই ভুল ধারণা।

 

##ভাল থাকার আছে উপায়: লিভারের বন্ধু-শত্রু

শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি লিভার বা যকৃত। লিভারকে বলা হয় কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি। সুস্থ থাকতে সময়মতো লিভারের প্রতি খেয়াল রাখা, প্রয়োজনীয় যত্ন নেওয়া এবং এ অঙ্গটির জন্য ক্ষতিকর বদ অভ্যাস ত্যাগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জানিয়ে দিচ্ছি লিভার সুস্থ রাখার কতগুলো নিয়ম।

১। উদ্ভিজ আমিষ: লিভার সুস্থ রাখতে সবচেয়ে বেশি জরুরি সঠিক খাবার বেছে নেওয়া। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ডাল, সবুজ শাক-সব্জি, বাদাম ও আঁশযুক্ত খাবার রাখুন। কারণ লিভারের জন্য প্রাণীজ আমিষের চেয়ে ভাল উদ্ভিজ আমিষ।

২। স্বাস্থ্যকর চর্বি: চর্বি বা ফ্যাট শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই লিভার সুস্থ রাখতে ডায়েট থেকে চর্বি একেবারে বাদ দিয়ে দিবেন না। বরং অলিভ ও ওয়ালনাটের মতো খাবার খান, যেগুলোতে স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে।

Health tips: 7 ways to prevent liver diseases | Lifestyle News,The Indian  Express৩। মদ: লিভারের রোগ থেকে বাঁচতে হলে অতিরিক্ত মদ পান এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত মদ্যপানে লিভারে চর্বি জমে, প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে লিভারের ক্ষত শুকিয়ে গুটি গুটি ফাইব্রোসিস এবং শেষ পর্যন্ত লিভার সিরোসিস হয়। পশ্চিমা জগতে লিভারের রোগসমূহের মধ্যে মদ্যপানজনিত লিভারের রোগই প্রধান।

৪। চিনি: চিনি শরীরের চর্বি বাড়িয়ে দেয়। তাই বেশি চিনি খেলে লিভারের রোগ তৈরি হতে পারে। চিনির গ্লুকোজ শরীর শোষণ করে নেয়। পরিশোধিত চিনিতে ফ্রুকটোজ বেশি পরিমাণে থাকে। ফ্রুকটোজকে পরিশোধিত করে একমাত্র লিভার। লিভারে গিয়ে এই ফ্রুকটোজ চর্বিতে পরিণত হয়। এতে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৫। তেল ও মশলা: অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত খাবার ফ্যাটি লিভার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কিংবা এ সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই লিভার সুস্থ্ রাখতে এ ধরনের খাদ্য যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিৎ।

৬। সাপ্লিমেন্ট: অনেকেই সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করেন। যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে, তারা সাপ্লিমেন্ট নির্বাচনের সময় সতর্ক থাকুন। এমন সাপ্লিমেন্ট বেছে নিন যা লিভারকে পরিস্কার করতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি এ ধরনের সাপ্লিমেন্ট। এছাড়া প্রোটিনের মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিডও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৭। কফি: লিভারের জন্য খুব উপকারী কফি। গবেষণার ফল বলছে, নিয়মিত কফি খেলে লিভারের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্তত ১৪ শতাংশ কমে যায়।

৮। উদ্ভিদমূল: বেশ কয়েকটি গাছের মূল লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এসব উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে ড্যানডেলিওন, মিল্ক থিসল ও হলুদ।

৯। এমএসজি: প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবারে সাধারণত গন্ধ বাড়াতে এমএসজি (মোনোসোডিয়াম গ্লুটেমেট) ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই রাসায়নিক পদার্থ লিভারকে ফ্যাটি করে তোলে এবং প্রদাহ তৈরি করে। এটি নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং লিভার ক্যানসার তৈরি করতে পারে।

১০। স্ট্রেস: স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থাকলে তখন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। হ্যঁ এমনই পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কারণ এই সময় হজম ঠিক মতো হয় না।

১১। ওষুধ: বেশ কিছু ওষুধ আছে, যেগুলো লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কয়েকটি পেইনকিলার বা ব্যাথানাশক ওষুধ, যেমন টাইলেনল বা কোলেস্টেরলের ওষুধ। এসব ওষুধ থেকে দূরে থাকতে হবে।

১২। টক্সিন: ত্বকে বিষক্রিয়া লিভারের উপর মারাত্মক খারাপ প্রভাব ফেলে। ত্বকের মাধ্যমে বিষ রক্তে শোষিত হয়। তাই স্প্রে, টক্সিন থেকে দূরে থাকুন।

 

 ## আপনার ডাক্তার: ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

দেহঘড়ি পর্ব-৭_fororder_0305-10

আজ আমরা কথা বলেছি অ্যাজমা বা হাঁপানি নিয়ে। বাংলাদেশে প্রতিদিন বাড়ছে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা। বাংলাদেশ অ্যাজমা এসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে ৮৫ লাখেরও বেশি মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত। জিনগত কারণের সাথে বায়ু দূষণ, এ্যলার্জেন, ঋতু, আবহাওয়া ও তাপমাত্রার পরিবর্তন, কিছু ওষুধ, শ্বাসনালীর সংক্রমণ ইত্যাদি এই রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক।

 

##কি খাবো, কি খাবো না: শেষ নেই বিটের গুণের

নানা কারণে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। তবে কিছু কিছু খাবার আছে যা নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরুদ্ধার হয়। বিটরুট বা বিট এমন একটি খাবার। পুষ্টিগুণে অনন্য বিটরুট। এতে আছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ক্লোরিন, আয়রন ও সোডিয়ামসহ নানা উপকারি উপাদান, যা ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে অ্যানিমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও থাইরয়েডের মত সমস্যার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারি। এক কাপ বিটরুটে থাকে ৪৩ ক্যালোরি, ৮৮ শতাংশ পানি, ১.৬ গ্রাম প্রোটিন, ৯.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬.৮ গ্রাম চিনি, ২.৮ গ্রাম ফাইবার ও ০.২ গ্রাম ফ্যাট। জানিয়ে দিচ্ছি নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে:

দেহঘড়ি পর্ব-৭_fororder_0305-11

রক্তসল্পতা: যারা রক্তসল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য বিট ভীষণ উপকারী। এতে থাকা আয়রন শরীরে প্রয়োজনীয় রক্তের যোগান দেয় এবং রক্তসল্পতা কমাতে সাহায্য করে। অনিয়মিত পিরিয়ড যাদের হয়, তাদের ক্ষেত্রেও উপকারি বিট। এছাড়া বিট শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চাঙ্গা রাখে দেহ ও মন।

উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়ছে প্রতিদিন। এই সমস্যা মোকাবিলায় ক্ষেত্রে ভীষণ কার্যকরী বিট। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বিট খেলে বা বিটের রস পান করলে, উচ্চ রক্তচাপ কমে। এটি ওষুধের চেয়ে ভালো কাজ করে। বিটে থাকা নাইট্রেট নামক উপাদান শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে; স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচায়।

লিভার: খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচার ও পরিবেশগত কারণে অনেক মানুষের লিভারের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। তবে নিয়মিত বিট খেলে এ সমস্যা থেকে অনেকাংশে বাঁচা যায়। লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এ সব্জি। এছাড়া বদহজম, পেটের অন্যান্য পীড়া যেমন জন্ডিস, ডায়রিয়া, প্রভৃতি রোগের ক্ষেত্রে খুব উপকারি বিট। এটি ফ্যাটি লিভারের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণ করে।

ক্যান্সার: নিয়মিত বিট খেলে ক্যান্সার থেকে বাঁচা যায়। বিটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।

মজবুত হাড়: শরীরে ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে বিট। হাড়ের নানাবিধ সমস্যা রোধ করতে পারে এ সব্জি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত হাড়ের যেসব সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলো মোকাবিলায় বিট খুব কার্যকরী। হাড়কে মজবুত রাখতে তাই নিয়মিত বিট খান ।

শক্তিবর্ধন: শরীরকে সুন্দর ও ফিট রাখার ক্ষেত্রে বিট অতুলনীয়। এটি পেশীর শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া খুব তাড়াতাড়ি শরীরে শক্তি আনতে বিট দারুণ কাজ করে। শারীরিক পরিশ্রমের পর খুব ক্লান্ত লাগলে খেয়ে নিন একগ্লাস বিটের রস; মুহূর্তে এনার্জি আসবে।

ত্বকের যত্ন: বিটে রয়েছে অ্যান্টি-এজিং উপাদান, যা ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। বিট ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ায়। এছাড়া এ সব্জি ব্রন ও বলিরেখা দূর করে। সুস্থ উজ্জ্বল ত্বক পেতে তাই নিয়মিত বিটের সরবত খান।

ডিপ্রেশন: ডিপ্রেশন বা হতাশা দূর করতে বিটের মতো উপকারি উপাদান খুব কমই আছে। এতে থাকা বিটেইন ও ট্রিপটোফোন নামক উপাদান মনকে চনমনে রাখে। মন ভালো রাখতে তাই নিয়মিত খান বিটের সরবত।

 

  • দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত।

 

  • তৈরি করেছেন অনুষ্ঠান:
  • রহমান, আজহার লিমন, হাবিবুর রহমান অভি, তানজিদ বসুনিয়া, রওজায়ে জাবিদা ওশী হোসনে মোবারক সৌরভ