‘বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশে প্রকট হবে বেকারত্ব’
2021-03-04 20:15:44

মানব ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে দারিদ্র্য বিমোচন করে দেখিয়েছে চীন

বিশ্বব্যবস্থা সচল রাখতে অর্থনীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে অর্থনীতি। অর্থনীতি হয়ে উঠছে রাজনীতির হাতিয়ার, কূটনীতির মূলমন্ত্র আর স্বকিয়তার রক্ষাকবচ। এই অর্থনীতির নানা সমাচার নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাপ্তাহিক আয়োজন ব্যবসাপাতি। ব্যবসাপাতির ১১তম পর্বে সবাইকে স্বাগত।

ব্যবসাপাতির ১১তম পর্বে যা থাকছে:

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন; দারিদ্র্য বিমোচনে চীনের অসাধারণ সাফল্যের গল্প; অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় চীনের নেয়া স্থায়ী ব্যবস্থার খবর; এই অনুষ্ঠান আপনারা শুনতে পাবেন ঢাকায় এফএম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফএম ৯০ মেগাহার্টজ-এ; সাক্ষাত্কার: ড. আহসান এইচ. মনসুর; ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ: পুনর্বিন্যাস করতে হতে পারে কোভিডের আলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য।’

‘বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশে প্রকট হবে_fororder_0304-6

শুরুতেই বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু খবর

১। অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থায়ী ব্যবস্থা নিলো চীন

অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমাতে স্থায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে চীন। গেল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা চায়না ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান কুয়ো সুকিং এমন খবর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, "অর্থনৈতিক ঝুঁকি প্রশমন ও প্রতিরোধে গৃহিত এ ব্যবস্থা একটি দৃঢ় ও স্থায়ী অর্জন। এর মাধ্যমে অর্থ ব্যবস্থাপনা ঝুঁকি শূন্যের কোটায় নেমে এলো।"

কুয়ো যোগ করেন, এরই মধ্যে ঋণ নিয়ে চীনের বিনিয়োগের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। অদৃশ্য অর্থ সম্প্রসারণের পরিবর্তে প্রকৃত  সম্পদ একীভূত করার প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়েছে।

কুয়ো সুকিংয়ের এ সংবাদ সম্মেলন ছিলো মূলত ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স খাতের উচ্চমানের অগ্রগতি নিয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে ২০০৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চীনের বার্ষিক উন্নয়নের বিভিন্ন তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। বলা হয় ২০১৭ সালে ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স খাতে সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা যেখানে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ ছিলো সেখানে ২০২০ সালে এ প্রবণতা ১১ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্যাংকিং খাতের এ অগ্রগতি ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের গড় বার্ষিক উন্নয়নের প্রায় অর্ধেক।

চীন গেল বছরগুলো ৮ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান পরিমাণ মন্দ ঋণের পরিমাণ কমিয়েছে।

 

 

এসএমই খাত নিয়ে চীনের মহাপরিকল্পনা 

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প –এসএমই খাত নিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে চীন। চীনের ১৪ তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে। এই মহাপরিকল্পনা চীনের উন্নয়নকে তরান্বিত করবে বলে জানিয়েছেন শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রণালয়।  

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী সিয়াও ইয়াছিং বলেন, এসএমই খাতে নতুন উদ্ভাবনে সহায়তা করবে এ পরিকল্পনা।

চীনের ৮০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসার ৯৫ শতাংশই এসএমই। এই এসএমই উদ্যোগকে তাই চীনের বাজার ও কর্মসংস্থান স্থিতিশীল রাখার প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেনচা করা হয়।

 

বিশেষ প্রতিবেদন: বছরে পাল্টে গেছে চীনের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল

দারিদ্র্য বিমোচনে চীনের সৃজনশীল পদ্ধতি প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। মাত্র ৮ বছরেই পাল্টে গেছে দেশটির দারিদ্র্যপীড়িত সব অঞ্চল। গ্রামীণ কৃষির সঙ্গে শিল্পায়ন যুক্ত হয়ে সহজ হয়েছে চাষীদের কার্যক্রম। কিভাবে এত কম সময়ে দারিদ্র্য বিমোচনে সফল হলো চীন? জানাচ্ছেন হাবিবুর রহমান অভি।

গেল বছরের একদম শেষ দিকে এসে নিজেদের দারিদ্র্যমুক্ত ঘোষণা করে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছে ১৪০ কোটি মানুষের দেশ চীন।

৮ বছরে দশ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে বের করে এনেছে চীন। সে হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৫০০ মানুষ দারিদ্র্য মুক্ত হয়েছেন। সিনচিয়ান, ইউনান, নিংশিয়া, সিচুয়ান, কুয়াংসি ও কানসু প্রদেশ নিজেদের সব জেলাকে দারিদ্র্যমুক্ত ঘোষণা করেছে।

এ সাফল্য অর্জন করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে দেশটি। নিয়েছে সৃজনশীল পরিকল্পনা আর দুর্দান্ত সব কৌশল।

গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থাকে শিল্পায়নের সঙ্গে যুক্ত করে বড় সাফল্য পেয়েছে দেশটি। বীজ বপন থেকে শুরু করে জমিতে পানি দেয়া, সব কাজ চলছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

ক্যামেরা ও সেন্সর ব্যবহার করে তদারকি করা হয় ফসলের মাঠ। চাষীদের দিকনির্দেশনা দিতে রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একদল চৌকষ দল।

কিউয়ি ফলের চাষ, সবজি চাষ, ফুলের চাষ, মৌমাছি পালন, গবাদি পশু পালনের খামার, হস্তশিল্পের প্রসারসহ, স্থানীয়ভাবে জন্মায় এমন বিশেষ ধরনের কোন ফল বা সবজিকে আলাদা গুরত্ব দেয়া গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছ।

চীনের কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ৮৩২টি দারিদ্রপীড়িত জেলায় নেয়া হয়েছে দশ লাখেও বেশি শিল্পায়ন প্রকল্প। প্রত্যেক জেলায় রয়েছে ২-৩টি বিশাল আকারের শিল্প কারখানা যা ৯৮ শতাংশ মানুষের ভাগ্যে এনেছে বড় পরিবর্তন।

চীনে রয়েছে ৫৬টি জাতিগোষ্ঠি। এদের মধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক জাতি রয়েছে যারা নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছে। এর একটি উদাহরণ হলো ‘মিয়াও’ জাতির সাফল্য।

এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপীড়িত ২০টি জেলার অন্যতম রুংশুই। এখানে ২৮ শতাংশ মানুষের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। এখানে রয়েছে ১৩টি এথনিক গ্রুপের মানুষ। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

মিয়াও জাতির এমব্রয়ডারি খুবই আকর্ষনীয় এবং ঐতিহ্যবাহী। পর্যটকদের মাঝে তাদের বানানো বিভিন্ন সামগ্রীর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা ।

ডং জাতি গোষ্ঠীর নবান্ন উত্সবও বেশি বিখ্যাত। সসময় এখানে প্রচুর পর্যটক আসেন এখানে। এই উত্সবকে কেন্দ্র করে এখানে পর্যটন এলাকাও গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে। 

স্বায়ত্বশাসিত এসব অঞ্চলের দারিদ্র্যমুক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করেছে পর্যটন শিল্পের বিকাশ। দেশি ও বিদেশি লাখো পর্যটক প্রতিবছর চীন সফর করেন। বৈদেশিক পর্যটকের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের জন্য নানা রকম ট্যুর প্যাকেজের আয়োজন করেছে স্থানীয় সরকার। এভাবেই এসব এলাকার অর্থনীতিতে এসেছে নতুন গতি।

বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার একটি প্রতিবেদন বলছে, করোনা মহামারির ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও এর মধ্যেও চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি শি চিন পিং এর পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির সাফল্য বিশ্বকে করেছে অভিভূত ।

চীনের দারিদ্র্য বিমোচনে সৃজনশীল এসব পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘের একসময়ের জনপ্রিয় মহাসচিব বান কি মুন।

তিনি বলেন, “একটি সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণের মাধ্যমে  কিভাবে মানুষের জীবনমান পাল্টে দিতে পারে তার ভালো উদাহরণ  চীন।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার নির্ধারিত সময়ের আগেই চীনের এই সাফল্য বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে  অন্যান্য দেশগুলোও এগিয়ে যেতে পারে দারিদ্র্যমুক্তির পথে।

 

বিশেষ প্রতিবেদন: যে কারণে বাংলাদেশে প্রজন্মান্তরে দারিদ্র্য সঞ্চারিত হচ্ছে

আজহার লিমন, ঢাকা: মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ মোরের দিন মজুরের বাজারে অন্যান্য অনেক শ্রমিকের সঙ্গে কাজের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছেন জাহানারা বেগম। বৃহস্পতিবার ভোরে তার সঙ্গে কথা হয়। জাহানারা বেগম জানালেন, প্রতি দিন কাজ করে মোটামুটি ৫০০ টাকা রোজকার হয়। তবে করোনার সময়ে কাজের জন্য অপেক্ষার হারটা বেড়ে গেছে। গেল দশ বছর ধরে পঞ্চাশোর্ধ এ বৃদ্ধা দিনমজুর হিসেবে মাটি বহনের কাজ করেন। এ এক দশকে তার উন্নতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বেশি কিছু অর্জন করতে পারেন নি তিনি। তার সন্তানদেরও কেউই তার থেকে ভালো পেশায় নেই।

‘বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশে প্রকট হবে_fororder_0304-7

জাহানারা বেগম

জাহানারা বেগম থাকেন কাছেরই একটি বস্তিতে। এবং তার মত নিম্ন আয়ের এমন লক্ষ লক্ষ মানুষের আবাস নগরীর বস্তিগুলোতে। এমনই একটি বস্তিতে আমার কথা হয় প্রায় ২০ বছর আগে নদী ভাঙনে সব হারানো ভোলার ঝিনুক মালার সঙ্গে। বস্তির ঘুপচি কক্ষে বিবাহিত ৫ ছেলে মেয়ের সঙ্গেই তাদের দিন অতিবাহিত করতে হয়। জানতে চাইলে ঝিনুক বলেন, “শোয়ার কষ্ট থাকায় তার বৃদ্ধ স্বামী সদস্যরা নাইট গার্ডের কাজ নিয়েছেন।”

 

‘বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশে প্রকট হবে_fororder_0304-8

ঝিনুক মালা

স্বপ্ন বা ভবিষতের ব্যাপারে ঝিনুক বলেন, “গরীবের আবার লেখাপড়া। ৭ হাজার দিয়ে সংসার চালাবো না পড়াশোনা করাবো”

জাহানারা বেগম কিংবা ঝিনুক মালার মত এমন অবস্থা দেশের প্রতিটি বস্তির প্রতিটি বাসিন্দার। শিক্ষা কিংবা স্বাস্থ্য সুবিধার মত সামাজিক সুরক্ষার বিষয়গুলো  এখানে শুধুই শুধুই দুরাশা। তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না, সব মেনে নেওয়া এসব বঞ্চিত মানুষেরা। ফলশ্রুতিতে মানবিক মর্যাদার বদলে এসব বস্তিবাসীর কপালে অবধারিত হয়ে গেছে অবহেলা আর অবজ্ঞা, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব বস্তিতে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে অভাবে পড়া বা কাজের খোজেঁ আসা গরীব মানুষের সংখ্যা। অপরদিকে সরকারি হিসেব বলছে, গেল দুই দশক ধরে দেশের হত দরিদ্রের কমছে এক তৃতাংশ, দারিদ্র্য কমেছে প্রায় অর্ধেক। আর এর জন্য আছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। তবে বাস্তব চিত্র আর হিসেবের এই দ্বন্দ্ব কেন? এমন প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ড. শফিক উজ জামান চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে বলেন, “বাংলাদেশে দারিদ্র বিমোচন হয়েছে এটা ঠিক তবে প্রযুক্তি নানা কারণে যে উন্নতিটা গ্রামীন কৃষিতে হয়েছে তাতে কর্মসংস্থান বাড়েনি উল্টো পৌত্রিক সূত্রে পাওয়া কৃষিজ জমিগুলো নানাভাগে ভাগ হয়ে দারিদ্র্য বাড়ছে তারাই আবার কর্মসংস্থানের জন্য শহরের বস্তিগুলোতে ভীড় করছে এছাড়া নদীভাঙন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই

‘বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশে প্রকট হবে_fororder_0304-9

. শফিক উজ জামান, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই শিক্ষকের মতে, তৈরি পোশাক, প্রবাসী রেমিটেন্সের মত অস্থায়ী কিছু খাত দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে  বড় ভূমিকা রাখলেও, নেওয়া হয় নি টেকসই কোন দারিদ্র্য নির্মূল কর্মসূচি। সমাজের বঞ্চিত শ্রেণিকে টেনে তুলতে চলমান সরকারি-বেসরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি যথার্থ ও পর্যাপ্ত নয় বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, কৃষিতে উন্নতি হলেও তা কাজে লাগিয়ে সার্বিক শিল্প বিপ্লব হয়নি আমাদের অকৃষিজ খাতে কর্মসংস্থান বলতে শুধু তৈরি পোশাক খাত তবে গেল বছরগুলোতে তাতেও কর্মসংস্থান কমেছে যতদিন না টেকসই কর্মসংস্থানের বহুমুখি উপায় সৃষ্টি করা না যাবে ততদিন সমস্যার সমাধান হবে না

আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, গেল দশকে সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী বা ধনী লোকের সংখ্যা বেড়েছে বাংলাদেশে। দ্রুত গতিতে বাড়ছে আয় ও সম্পদ বন্টনের বৈষম্য। অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম মনে করেন, রাতারাতি ধনী লোকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া দেশে দারিদ্র্য বাড়ার মূল সূত্র হিসেবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে এটা ঠিক কিন্তু এসব প্রবৃদ্ধির সুফল গিয়ে পড়ছে দেশের কয়েক হাজার ধনীর লোকের কাছে আয় বৈষম্যের বিষয়টি রেখে দারিদ্র্য কমানো যাবে না ঋণখেলাপী বাড়ার কারণে বাংলাদেশ নিজস্ব বিনিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাতে অনেক কর্মসংস্থান বাড়তে পারতো

‘বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশে প্রকট হবে_fororder_0304-10

অর্থনীতিবিদ . মইনুল ইসলাম

সরকারি হিসেবে বর্তমানে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। তবে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেমের নামে বেসরকারি এক গবেষণা সংস্থা বলছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্রের হার ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এসব হিসেবের বিপরীতে যেভাবে পাল্লা দিয়ে আয় বৈষম্য বাড়ছে তাতে দারিদ্র্য দূর করতে টেকসই ব্যবস্থা না নিয়ে এসডিজির মত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন যে যারপরনাই চ্যালেঞ্জের সেটা স্পষ্ট করেই বলছেন, অর্থনীতিবিদরা।

 

চীনের দারিদ্র্য বিমোচনের গল্প: স্থানীয় সংস্কৃতি ভাগ্য ফিরিয়েছে চীনের অসচ্ছল মানুষের

সাজিদ রাজু, ঢাকা: স্থানীয় সংস্কৃতি ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার করে পর্যটনের বিকাশও হতে পারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অর্জনের হাতিয়ার। এমনই উদাহরণ তৈরি হয়েছে চীনের হুবেই প্রদেশে। কাজের খোঁজে গ্রাম না ছেড়ে তরুণরা থাকছেন স্বজনদের সঙ্গে। বয়স্করা পাচ্ছেন পুরনো স্মৃতি রোমন্থনের অপার্থিব সুখ।

বয়োজ্যেষ্ঠদের দেয়া এক সংকেতের মাধ্যমে শুরু হয় হুবেই প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী অপেরা। স্থানীয় শিল্পীদের অসাধারণ পরিবেশনা মাতিয়ে রাখে দর্শকদের।

অথচ কিছুদিন আগেও এ গ্রামের স্থানীয় সংস্কৃতির অস্তিত্ব ছিলো না। এখন আবারো নতুন করে জেগে উঠেছে এ গ্রাম। প্রবীণরা একযোগে উপস্থিত সাংস্কৃতিক উদযাপনে। নবীনদের অসাধারণ নৈপুন্য পুরো আয়োজনে এনেছে নতুন মাত্রা।

চীনা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের নেতা নি শাওমিং বলছিলেন, সংস্কৃতির শেকড় থেকে আর বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় নেই এখন। 

একটা সময় ছিলো যখন আমাদের ঐতিহ্যবাহী অপেরায় অংশগ্রহণের মতো লোক ছিলো না শেখাও খুব কঠিন ছিলো এখন স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও শেখানো হচ্ছে

 

‘বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশে প্রকট হবে_fororder_0304-11

নি শাওমিং, নেতা, চীনা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র

হারানো সংস্কৃতি শুধু নয়, গ্রামের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকেও সাজানো হয় নতুন সাজে। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই বদলে যায় পুরো এলাকার চিত্র। গ্রামে পর্যটকের আনাগোনা শুরু হয়। পরিবর্তনের শুরুটাও এখান থেকেই।

এখনকারই হানশি ট্যুরিজম ইনভেস্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট গ্রুপে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন ইভা। তার মতে সংস্কৃতির বিকাশের সঙ্গে ফিরতে শুরু করেছে গ্রামের প্রাচীন বৈশিষ্ট্যও।

এক সময় গ্রামটি জনশূন্য ছিলো, খা খা করতো এখন আবারো প্রাণ ফিরে পেয়েছে মানুষ নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে গ্রামকে ঘিরেই সবচেয়ে বড় ব্যাপার, আধুনিক জীবন যাপনের উপযোগী সব ধরনের ব্যবস্থাই এখন এখানে আছে

- ইভা, ডিজাইনার, হানশি ট্যুরিজম ইনভেস্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ

‘বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশে প্রকট হবে_fororder_0304-12

ইভা, ডিজাইনার, হানশি ট্যুরিজম ইনভেস্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ

 

পাহাড়ের চা বাগানগুলো সেজেছে নতুন রূপে। অথচ এই চুসি কাউন্টির পুরোটা এলাকা এক সময় ছিলো অনুর্বর। ছিলো না বসবাসের উপযোগী পরিবেশ। সে সময় জীবিকার তাগিদে মানুষ গ্রাম ছাড়লেও এখন অনেকে ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে ফিরতে শুরু করেছেন। এমনই একজন ইংচুন চা বাগানের মালিক ইয়াং ইয়ংলং। তার বিশ্বাস, গ্রামের ফেরার মাধ্যমে নিজ এলাকার উন্নয়নেও অবদান রাখা সহজ হয়েছে।

অনেক দূরে চাকরি করতাম এক সময় মাকে দেখতে যখন ঘরে ফিরতাম তখন দেখলাম, আমাদের নিজেদের চায়ের মান বেশ ভালো বন্ধু স্বজনদের উপহার দেয়ার পর তারাও প্রশংসা করেছে সে সময় আমার নিজের গ্রামে কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেই

‘বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশে প্রকট হবে_fororder_0304-13

ইয়াং ইয়ংলং, চা বাগান মালিক

চা বাগানের মতো স্থানীয় আরো শিল্প গড়ে তোলায় তৈরি হয়েছে বিপুল কাজের সুযোগ। পর্যটন ও সংস্কৃতি বিকাশের মাধ্যমে এ এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের উদাহরণ তৈরি হয়েছে এখানে।

এই ছিলো এবারের আয়োজনে।

আপনার পরামর্শ আমাদের সমৃদ্ধ করবে। আপনার যে কোন পরামর্শ পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। চীন আন্তর্জাতিক বেতার –সিআরআই বাংলা’র ফেসবুক পাতায় আপনার মন্তব্য করতে পারেন। আরো যুক্ত থাকতে পারেন সিএমজি বাংলা’র ফেসবুক পাতা facebook.com/cmgbangla এবং ও ইউটিউব লিঙ্ক youtube.com/cmgbangla তে গিয়েও আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে আবারো কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সুস্থ্য থাকুন, শুভকামনা সবাইকে।