চীনে ‘দুই অধিবেশন’ শুরু হয়েছে আজ (৪ঠা মার্চ)। দুই অধিবেশন চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঘটনা। চলতি বছর হচ্ছে ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার’ প্রথম বছর। এ বছরই চীনা সরকার দেশকে, সার্বিকভাবে হতদারিদ্র্যমুক্ত করার পর, একটি সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ জোরেশোরে শুরু করেছে। এবার জাতীয় গণকংগ্রেস জাতীয় অর্থনীতি, ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ এবং ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকালীন পরকল্পনার খসড়া পর্যালোচনা করবে ও গ্রহণ করবে। রয়টার্স একে ইতিবাচক মনে করছে।
মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চীনা সরকারের দেশ-শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ২০২০ সালের মধ্যে চীন পুরোপুরি ‘ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করেছে। এর আওতায় ৯ কোটি ৮০ লাখ গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। চরম দারিদ্র্য চীনে ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। ব্রিটিশ ‘ইকোনোমিস্ট’ ম্যাগাজিন বলছে, চীন সরকার মানুষের জীবিকা তথা কর্মসংস্থানের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় অর্জিত দারিদ্র্যমুক্তিকে টেকসই করতে বিভিন্ন উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার’ সুপারিশ অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে চীন দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমে অর্জিত সুফল ধরে রাখবে এবং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন ও কৃষির উন্নয়নের ওপর জোর দেবে। কিছুদিন আগে, বেইজিংয়ের ছাইয়াং জেলা নং -১১ থাইইয়াংকুং উত্তর স্ট্রিটে, ‘রাষ্ট্রীয় পরিষদের দারিদ্র্যবিমোচন ও উন্নয়ন বিষয়ক নেতৃত্ব গ্রুপ’ লেখা ব্যানার তুলে দিয়ে সেখানে ‘জাতীয় গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন ব্যুরো’-র ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এটা হচ্ছে চীনে উন্নয়ন-কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতার প্রতীক। এই বিষয়ে ব্লুমবার্গ বলেছে, চীনের গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন কৌশলটি নগর-পল্লী ব্যবধানকে সংকুচিত করবে এবং অর্থনীতিতে একটি নতুন চালিকাশক্তি যোগ করবে।
এর আগে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্টের অ্যাশ সেন্টার ফর ডেমোক্র্যাটিক গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনোভেশন-এর চীন প্রোগ্রামের পরিচালক এডওয়ার্ড কানিংহাম বলেছিলেন, চীনে টেকসই ও দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশের পাশাপাশি চাকুরি, শিক্ষা এবং চিকিত্সা খাতে প্রয়োজনীয় গ্যারান্টি আছে। চীনা মানুষ তাই সন্তুষ্ট। উন্নত জীবনের জন্য জনগণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা চীনা সরকারের অদম্য লক্ষ্য। মিডিয়াগুলো সাধারণত বিশ্বাস করে যে, ‘মাঝারি উন্নত দেশের’ মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। বর্তমানে, টানা দুই বছর ধরে চীনের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ১০ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এর অর্থ হ'ল আগামী ১৫ বছরের মধ্যে চীন তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করবে।
এ ছাড়া, নেদারল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে একটি প্রতিবেদনে বলেছিল, চীনের ‘দুই অধিবেশন’ কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের জন্য একটি পরিষ্কার ‘রোড ম্যাপ’ প্রণয়ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার’ সুপারিশ অনুসারে চীন সবুজ উন্নতি করবে, মানুষ ও প্রকৃতির সুরেলা সহাবস্থানকে উত্সাহিত করবে। চীন বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ২০৩০ সালের পর কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে দেশ কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করবে। এর মধ্যে প্রযুক্তিগত নবত্যাপ্রবর্তন বেশি ভূমিকা পালন করবে।
২০২১ সাল হচ্ছে সিপিসি প্রতিষ্ঠার ১০০তম বার্ষিকী। এটিও ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন এবং সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গড়ে তোলার প্রথম বছর। এ বছরের দুই অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সিপিপিসিসি’র সদস্যদের কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তা-ও এখন দেখার বিষয়। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ওয়েইমিং)