হপ্তানামা: জাতিসংঘে মানবাধিকার পরিষদের ৪৬তম অধিবেশনে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি দেশের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা চীনের
2021-03-03 16:17:44

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সমগ্র চীনে দারিদ্র্যবিমোচন বিষয়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা করেন যে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) ও চীনা মানুষের যৌথ প্রচেষ্টায় সিপিসি প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকীতে চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের লড়াইয়ে সার্বিক জয় অর্জিত হয়েছে।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সিন চিন পিং তাঁর ভাষণে বলেন, চীনের দারিদ্র্যমুক্তির ক্ষেত্রে সার্বিক বিজয় অর্জনের বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত হয় যে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি হলো জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে নেওয়ার সবচেয় নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব।

 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর থেকে চীন দারিদ্র্যমুক্তিকে দেশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রেখেছে। আট বছরে প্রেসিডেন্ট সি ৫০ বার দারিদ্র্যবিমোচনের ইস্যুতে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। তিনি ১৪টি অতি দরিদ্র অঞ্চলে গিয়েছেন। চীনের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি প্রদেশের পার্টি ও সরকারের প্রধান দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচন-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।

 

দারিদ্র্যবিমোচনে জনগণকে সহায়তা দিতে ৩০ লাখেরও বেশি কর্মকর্তাকে বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আট বছরে প্রায় ১,৮০০ জনেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যবিমোচনের লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

 

গ্রাম পুনরুদ্ধার সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রামের পুনরুদ্ধার হল চীনা জাতির মহান পুনরুদ্ধার বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দারিদ্র্যমুক্তির সুফল বাস্তবায়ন করা এবং গ্রাম পুনরুদ্ধার ভালোভাবে করতে হয়, যাতে দারিদ্র্যমুক্তির ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়। এর সুফল দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হয়।

 

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, অব্যাহতভাবে শহর ও গ্রামের উন্নয়নের পার্থক্য কমিয়ে আনা এবং জনগণের ধনী হওয়ায় ক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। দরিদ্রতা সমাজতন্ত্র নয়। যদি কোনো অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে দরিদ্রতা থাকে, দরিদ্রতার ভাবমূর্তি পরিবর্তন না হয়, জনগণের জীবনমান উন্নত না-হয়, তাহলে চীনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুবিধা বোঝা যাবে না।

 

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ’র সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।

 

সি চিন পিং বলেন, দু’পক্ষের উচিত পারস্পরিক আস্থা গভীরতর করা, কার্যকরভাবে একে অপরের কেন্দ্রীয় স্বার্থ ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগকে সম্মান করা, এবং গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক চুক্তি কার্যকর করা।

 

তিনি বলেন, দুদেশেরই জ্বালানী, বিমান চলাচল ও কৃষি পণ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাস্তব সহযোগিতা অব্যাহতভাবে নতুন অগ্রগতি অর্জন করে চীন-ফ্রান্স সহযোগিতার নতুন চালিকাশক্তি তৈরি করা উচিত।

 

তিনি আরও বলেন, চীন ও ফ্রান্স জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ এবং দায়িত্বশীল বড় রাষ্ট্র। দু’দেশের উচিত অব্যাহতভাবে বহুপাক্ষিকতা অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক সমাজের ন্যায্যতা বিধানে কাজ করা।

 

এ দিনই সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দুকোর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।

 

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন-কলম্বিয়া সম্পর্ক স্থিতিশীল ও সুষ্ঠু উন্নয়ন বজায় রেখেছে। এ সময়ে বাস্তব সহযোগিতা সুবিন্যস্ত ও উন্নত হয়। কোভিড-১৯ মহামারীতে দু’পক্ষ একে অপরকে সহানুভূতি ও সমর্থন জানায়।

 

তিনি বলেন, চীন অব্যাহতভাবে কলম্বিয়ায় মহামারী প্রতিরোধ কাজে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি কলম্বিয়ার সঙ্গে টিকা সহযোগিতা চালাবে। চীন সরকার ও চীনা প্রতিষ্ঠানসমূহ কলম্বিয়ায় বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। পাশাপাশি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বহুপক্ষীয় কাঠামোয় কলম্বিয়ার সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করতে ইচ্ছুক চীন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৪৬তম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।

 

সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে ওয়াং ই বলেন, মানুষকেন্দ্রিক  মানবাধিকারের ধারণায় অবিচল থাকতে হবে। বিভিন্ন দেশের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই মানবাধিকারের ধারণাকে স্বীকার করে নিতে হবে। মানবাধিকারের পদ্ধতিগত উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। এবং সবাইকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংলাপ ও সহযোগিতায় অবিচল থাকতে হবে।

 

ওয়াং ই আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলার সময় চীন সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষা করা। চীন মানবাধিকারের অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

বৃটেনসহ বেশ কয়েকটি দেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের কর্মসভায় সিনচিয়াং, তিব্বত, ও হংকং নিয়ে যে ভুল মন্তব্য করেছে, তা খণ্ডন করেছেন জেনেভাস্থ চীনের প্রতিনিধি দলের মুখপাত্র লিউ ইয়ু ইন।

 

লিউ ইয়ু ইন বলেন, চীন বরাবরই সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সব পক্ষের মানবাধিকার বিষয়ক বৈঠক ও সহযোগিতা চালানোর উদ্যোগে অবচিলভাবে সহায়তা করে আসছে।

 

তিনি বলেন, মানবাধিকার নিয়ে রাজনীতি করা যায় না। মানবাধিকারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে অন্য দেশকে অপমান করা এবং তাদের উন্নয়নে বাধা দেওয়া যায় না।

 

তিনি বলেন, কোন রকম  মিথ্যাচার মানবাধিকার পরিষদে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে, এটি দুঃখজনক যে, বৃটেন, জার্মানি, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড মানবাধিকার পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের কর্মসভার প্ল্যাটফর্মকে তাদের মিথ্যা অপপ্রচারে ব্যবহার করে আসছে। দেশগুলো চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। চীন তার দৃঢ় বিরোধিতা করে এবং প্রতিবাদ জানায়।

 

চীনা মুখপাত্র আরও বলেন, সিনচিয়াং ও তিব্বতসহ সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হচ্ছে চীনের মানবাধিকার উন্নয়নের উজ্জল দৃষ্টান্ত। চীন জাতিগত সমতা, ঐক্য ও স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসন ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন জাতির অভিন্ন সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট নীতি মেনে চলে। বিভিন্ন জাতির মানুষ চীন জাতির সদস্য। বর্তমানে সিনচিয়াংয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জাতিগত ঐক্য এবং ধর্মীয় সহাবস্থান বজায় রয়েছে।

 

মুখপাত্র আরও বলেন, বৃটেনকে নিজের মানবাধিকারের দিকে তাকাতে হবে। দেশটিতে বর্তমানে ৪০লাখেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত এবং ১লাখ ২০হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বৃটেনের বাহিনী ইরাক ও আফগানিস্তানে নিরীহ মানুষকে হত্যা এবং নির্যাতন করে। তবে বৃটেন সরকার সে সব ব্যাপারে উদাসীন।

 

এনাম, মানবাধিকার নিয়ে আপনার মতামত কী?

(রুবি/এনাম/শিশির)