২০২১ সালের বসন্ত উত্সব শেষে চীনের ষাঁড় বর্ষ শুরু হয়েছে। চীনা জাতি এক সময় ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজের দেশ ছিল। গবাদি পশু কেবল একটি সাধারণ প্রাণীই নয় বরং, কৃষি সভ্যতা বিকাশের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও বটে। এভাবে, পৃথিবীর অপর প্রান্তে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে, এমন একটি দেশ আছে যারা গবাদি পশু সম্পর্কে জানে, গবাদি পশুকে মূল্য দেয় এবং গবাদি পশু নিয়ে গর্ব করে। দেশটির নাম উরুগুয়ে। উরুগুয়ের কাছে গবাদি পশুর গুরুত্ব কেমন? গবাদি পশু এবং এটি সম্পর্কে চীন ও উরুগুয়ের মধ্যে কোন ধরনের সহযোগিতা গড়ে উঠেছে?
উপরের বিষয়গুলি নিয়ে আমাদের প্রতিবেদক উরুগুয়ের "ইস্টার্ন থট নেটওয়ার্ক"-এর প্রতিষ্ঠাতা পাবলো রোভিটার সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন এবং গবাদি পশুর মাধ্যমে চীন ও উরুগুয়ের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তিনি আমাদের জানিয়েছেন।
চীনের সঙ্গে রোভিটার পরিবারের সম্পর্কের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। ১৯৬০ এর দশকে, পাবলোর পিতা ভিসেন্টে রোভিটা লাতিন আমেরিকায় চীনা বই ও সাময়িকী প্রবর্তনের জন্য উরুগুয়েতে ‘নেটিভ বুকস্টোর’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাবলো কিশোর বয়সে তার বাবার সঙ্গে চীনে এসে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাও করেছিলেন। গত দুই দশকে চীনে তাঁর অভিজ্ঞতা চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে তার গভীর উপলব্ধি সৃষ্টি করেছে। তার দৃষ্টিতে, ষাঁড় বর্ষ ‘পরিশ্রমী’ শব্দের সমার্থক। তিনি বলেন,
‘আমি যখন চীনে গিয়েছিলাম, আমি প্রায়শই লোকদের বলতে শুনেছি যে, ষাঁড় বর্ষে জন্ম নেওয়া ভালো। আমার বোধগম্য বিষয় হল- ‘ষাঁড় বর্ষ’ ‘কষ্ট সহ্য করা ও কঠোর পরিশ্রমের’ সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। কারণ, ‘গবাদি পশু’ চীনা কৃষির জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।"
একইভাবে, তার জন্মভূমি উরুগুয়েতে গবাদি পশু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। যে কোনও দিক থেকে উরুগুয়ে হলো ‘গবাদি পশু বেড়ে ওঠার দেশ’। পাবলো বলেছিলেন যে, উরুগুয়ে তার পশুপালনের জন্য সুপরিচিত। সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সাহিত্য বা শৈল্পিক কাজ- যাই হোক না কেন, "ষাঁড়" একটি প্রয়োজনীয় উপাদান, এমনকি এটি উরুগুয়ের জাতীয় প্রতীক! তিনি একটি গল্প তুলে ধরেন।
"আমি যখন বহু বছর আগে অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম, তখন জানতে পারি যে, উরুগুয়েতে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ আছে এবং প্রতিটি ব্যক্তি গড়ে ৪টি গবাদি পশু রাখতো। সম্প্রতি, আমি আবারও উরুগুয়ের মিডিয়াতে ‘উরুগুয়ে মাথাপিছু সর্বাধিক সংখ্যক গবাদি পশুর দেশ’ সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ দেখি। বর্তমানে সঠিক তথ্যটি হলো, গড়ে উরুগুয়ের প্রতিটি মানুষের ৩.৭টি গবাদি পশু রয়েছে।"
রোভিটা বলেন, চীন ও উরুগুয়ের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে চীন ও উরুগুয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব ইতিবাচক ও অবিচলভাবে গড়ে উঠেছে। আর সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এটি দ্রুত ও সুস্থভাবে বিকশিত হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে বিনিময়, বিশেষত বাণিজ্যিক বিনিময়, ‘গবাদি পশু’ ও এর পণ্যগুলো সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
‘কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে উরুগুয়ে ও চীনের সম্পর্ক সুষ্ঠু রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন উরুগুয়ের গরুর মাংস রফতানির বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে; একই সাথে উরুগুয়ে চীনে প্রচুর পরিমাণ গুঁড়া দুধ রফতানি করে। এগুলো উরুগুয়ে থেকে চীনে রফতানি করা আইকনিক পণ্য হয়ে উঠেছে।"
চীন ও উরুগুয়ের মধ্যে পশুপালন পণ্য আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য, বিশেষত গরুর গোশতের বাণিজ্য গত কয়েক বছরে যথেষ্ট অগ্রগতি করেছে। গত বছর মহামারীর প্রভাব সত্ত্বেও চীন ও উরুগুয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় চীন ২০২০ সালে উরুগুয়ের রফতানি বাজারে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং উরুগুয়ের বৃহত্তম গরুর মাংস রফতানির বাজার হিসাবে অব্যাহত থাকবে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, উরুগুয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এবং গরুর মাংস শিল্পের বেসরকারি খাত যৌথভাবে ২০২০-২০২৫ এর জন্য একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং চীনে গরুর মাংসের পণ্য রফতানি জোরদার করার পরিকল্পনা নিয়ে একটি সভা আয়োজন করে।
পাবলো রোভিটা বিশ্বাস করেন যে, ষাঁড় বর্ষে চীন-উরুগুয়ের বাণিজ্য ও সহযোগিতা কল্যাণকর হবে। তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, চীন ও উরুগুয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও অগ্রসর হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, ষাঁড় বর্ষে চীন ও উরুগুয়ের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুষ্ঠু বিকাশ হবে।’
(জিনিয়া/তৌহিদ)