দেহঘড়ি --- পর্ব ৬
2021-02-26 19:30:09

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে রয়েছে স্বাস্থ্যখাতের একটি সুখবর, সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদসংকলন ‘স্বাস্থ্য বুলেটিন’, স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা ভুল ধারণা নিয়ে আয়োজন ‘ভুলের ভুবনে বাস’, প্রাকৃতিকভাবে রোগপ্রতিরোধ ও রোগমুক্তি নিয়ে কথন ‘ভাল থাকার আছে উপায়’, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আয়োজন ‘কী খাবো কী খাবো না’।

** সুখবর: দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে নতুন পদ্ধতি আবিস্কার

দৃষ্টিহীন মানুষেরা চোখের আলো ফিরে পেতে পারেন – এমন একটি সুসংবাদ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। এমন এক ধরনের পদ্ধতি তারা আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে বয়সের কারণে সৃষ্ট ক্ষীণদৃষ্টি দূর করে পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারেন দৃষ্টিহীনরা।

দেহঘড়ি --- পর্ব ৬_fororder_1

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের সেন্টার ফর রেটিনা ইনোভেশনের গবেষকেরা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে যুগান্তকারী এ আবিষ্কার করেছেন।

গবেষণায় প্রতিবেদনে বলা হয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে। একটা পর্যায়ে গিয়ে পুরোপুরি দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন অনেকে। নতুন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে ক্ষীণদৃষ্টি ও দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা আবারো দেখতে পারবেন নতুন করে।

গবেষকেরা এরইমধ্যে তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন। ১৪টি অন্ধ ইঁদুর ফিরে পেয়েছে চোখের জ্যোতি। গবেষকদের প্রত্যাশা, শিগগিরই এ পদ্ধতি মানুষের উপর প্রয়োগ করা হবে, এতে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারেন বিশ্বের কয়েক লাখ দৃষ্টিহীন মানুষ।

গবেষকদের দাবি, যে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে, তা ক্ষীণদৃষ্টি সমস্যা দূর করে চক্ষুবিজ্ঞানে বড় পরিবর্তন আনবে। এ প্রক্রিয়াটি হবে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী। তবে এই উদ্ভাবন মানুষের জন্য কতটা কাজে লাগবে তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত দুই থেকে তিন বছর ।

 

**হেল্ বুলেটিন

বাংলাদেশে এলো আরও ২০ লাখ টিকা

দেহঘড়ি --- পর্ব ৬_fororder_2

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে দ্বিতীয় চালানে করোনাভাইরাসের ২০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে বাংলাদেশে। গেল মঙ্গলবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টিকার এ চালান পৌঁছায়। টিকাগুলো রাখা হয়েছে টঙ্গীতে বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে। এ নিয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার মোট ৯০ লাখ ডোজ করোনার টিকা বাংলাদেশে এসেছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ তৈরি করছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। এই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গেল বছর নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। এ চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের।

করোনায় বিশ্বে মৃত্যু ২৫ লাখ ছাড়ালো

দেশে দেশে করোনা টিকা দেওয়া শুরু হলেও থামেনি মৃত্যুর মিছিল। এরই মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৫ লাখ; রোগী শনাক্ত হয়েছেন সোয়া ১১ কোটিরও বেশি।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ৮৪ হাজার ৮৫২ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২৫ লাখ ৭ হাজার ৭৬৮ জনের। তবে করোনা মহামারি থেকে সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৯ কোটি মানুষ।

দেশের হিসেবে এ পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। আর এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।

 

** ভুলের ভুবনে বাস: ডায়াবিটিস নিয়ে যত ভুল ধারণা!

ডায়াবিটিস সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের জন্যও একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য-সমস্যা। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) এক জরিপ বলছে, দেশে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৪ কোটির বেশি মানুষ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। আশংকা করা হচ্ছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১২ কোটি ৩০ লাখে। এমন ভয়াবহ যখন ডায়াবিটিসের বাস্তব পরিস্থিতি, তখন এ রোগে আক্রান্ত জনসংখ্যার অর্ধেকই এখনও জানেন না যে তারা আক্রান্ত। সেই সাথে রয়েছে এ রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব এবং সমাজে প্রচলিত অসংখ্য ভুল ধারণা। এর ফলে জনসংখ্যার বিপুল অংশ রয়েছে মারাত্বক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। চলুন জানা যাক ডায়াবিটিস সম্পর্কে প্রচলিত কতগুলো ভুল ধারণা সম্পর্কে।

দেহঘড়ি --- পর্ব ৬

কারা কোন টাইপের ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হয়:

অনেকের ধারণা, টাইপ ১ ডায়াবিটিস কেবলমাত্র অল্পবয়সীদেরই হয় আর টাইপ ২ হয় বয়স্কদের। এই ধারণার কোনও বৈজ্ঞানিক ও বাস্তবিক ভিত্তি নেই। এ দুই ধরনের যে কোনও ডায়াবিটিসে যে কোনও বয়সী মানুষই আক্রান্ত হতে পারেন। আবার অনেকেই মনে করেন টাইপ ২ ডায়াবিটিসে কখনই ইনসুলিন গ্রহণের প্রয়োজন হয়না, যেমনটি প্রয়োজন হয় টাইপ ১-এর ক্ষেত্রে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, কখনও কখনও টাইপ ২ ডায়াবিটিসেও ইনসুলিনের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াই ডায়াবিটিসের প্রধান কারণ:

ডায়াবিটিস সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা হলো, এ রোগটির প্রধান কারণ বেশি পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া, যদিও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সাথে মিষ্টি খাবারের কোনও সম্পর্কই নেই। টাইপ ১ ডায়াবিটিসের কোনও নির্দিষ্ট কারণ এখনও পর্যন্ত জানা না গেলেও টাইপ ২ ডায়াবিটিসের জন্য তিনটি বিষয়কে দায়ী করা হয়। এগুলো হলো বংশগত কারণ, পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং স্থুলতা। তবে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে সুগার টলারেন্স থাকে না বলে তখন অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাও মানা। কারণ এ সময় অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।

কৃশকায় মানুষের ডায়াবিটিস হয় না:

অনেকের ধারণা শরীর কৃশকায় হলে ডায়াবিটিসের আশংকা নেই। কিন্তু আসলে তা নয়। যদি বংশে কারও ডায়াবিটিসের ইতিহাস থাকে, তাহলে অবশ্যই উচিৎ রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়মিত পরীক্ষা করা। গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ ২ ডায়াবিটিসে মৃত্যুবরণকারীর হার স্থুল মানুষের তুলনায় কৃশকায় মানুষেই বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই কৃষকায় মানুষেরা জানেনই না যে তিনি ডায়াবিটিসে আক্রান্ত।

ডায়াবিটিস একটি অপ্রতিরোধ্য রোগ:

বেশিরভাগ মানুষের ধারণা ডায়াবিটিস একটি অপ্রতিরোধ্য রোগ। কিন্তু এটি সঠিক নয়। লাগামহীন জীবনযাপনের রাশ টেনে ধরা এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায় এ মরণঘাতী রোগটিকে।

ডায়াবিটিস থাকলে গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ:

ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হলে অনেকেই গর্ভধারণে ভয় পান। চিকিৎসাব্যবস্থা যখন অনুন্নত ছিল তখন এই ভয় অমূলক ছিল না; কিন্তু বর্তমানে অনেকেই ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়া স্বত্তেও খুব স্বাভাবিক এবং সুস্থভাবেই সন্তান জন্ম জন্ম দিতে পারছেন। তবে অনেকের পূর্বে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলেও গর্ভাবস্থায় হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। এটি আসলে গেসটেশনাল বা গর্ভাবস্থার ডায়াবিটিস যা গর্ভপরবর্তী অবস্থায় সাধারণত থাকে না।

 

** ভাল থাকার আছে উপায়: অ্যাসিডিটি কমান প্রাকৃতিক উপায়ে

পেটে অ্যাসিডিটি বা অম্বলের সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বিশ্বজুড়ে। পাকিস্থলির গ্যাস্ট্রিক গ্ল্যান্ড থেকে অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণের ফলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। সাধারণত খাবার খাওয়ায় দীর্ঘ বিরতি, খালি পেটে থাকা বা অতিরিক্ত চা, অ্যালকোহল বা কফি পানের কারণে পেটে অ্যাসিডিটি হয়। এছাড়া মশলাদার বা ভাজা-পোড়া খাবার, খাওয়ায় অনিয়ম, স্ট্রেস, ধুমপান, রাতে ঘুামনোর সময় খাবার খাওয়া, খাবার খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া প্রভৃতি কারণেও পেটে অ্যাসিডিটি হতে পারে। অম্বল বা গ্যাসের কারণে পেট ফুলে যায়, বুকে জ্বালা-পোড়া করে এবং অম্ল ঢেকুর ওঠে। তবে কতগুলো ঘরোয়া ওষুধ রয়েছে যেগুলো অম্বলের সমস্যা থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি দিতে পারে। জানিয়ে দিচ্ছি এমন কতগুলো ওষুধ:

দেহঘড়ি --- পর্ব ৬_fororder_4

কলা: প্রতিদিন একটি করে কলা খান। আপনার আর কখনো গ্যাস-অম্বলের সমস্যা হবে না। কারণ কলায় আছে প্রচুর পটাশিয়াম ও প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড যা এসিড রিফ্লাক্স বা পশ্চাৎপ্রবাহের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

তুলসি পাতা: গ্যাসের সমস্যা হলে ৫-৬টি তুলসি পাতা চিবিয়ে খান কিংবা ৩-৪টি তুলসি পাতা সেদ্ধ করে পানিটুকু মধু দিয়ে পান করুন। তুলসি পাতা পাকস্থলিতে শ্লেষ্মার মতো পদার্থ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। এর রয়েছে শীতলীকরণ এবং বায়ুনাশক উপাদান, যা গ্যাস্ট্রিক এসিডের কার্যকারিতা কমায়।

আদা: গ্যাস-অম্বল নিয়ন্ত্রণে আদা খুবই উপকারি। ২০০৮ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ গ্যাসট্রোএনটেরেলজি এন্ড হেপ্যাটোলজিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, আদা খাওয়ার ফলে হজম খুব তাড়াতাড়ি হয়। মশলাদার বা ভারী কোনও খাবার খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে এক কুঁচি আদা খেয়ে নিন; আর কোনও সমস্যাই থাকবে না।

দারুচিনি: বেশিরভাগ হজমজনতি সমস্যার একটা মহৌষধ দারুচিনি। এতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় এবং শোষণক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। অম্বল সমস্যা দূর করতে তাই আধা চা চামচ দারুচিনি গুড়ো এক কাপ পানিতে মিশিয়ে সেদ্ধ করে পান করুন। প্রতিদিন এভাবে তিনবার পান করুন।

ঘোল: তাৎক্ষণিকভাবে অম্বল কমিয়ে স্বস্তি এনে দিতে পারে ঘোল। এতে থাকা ক্যালসিয়াম পাকস্থলিতে এসিড জমা হওয়া প্রতিরোধ করে। এর সঙ্গে গোল মরিচ যোগ করলে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়।

ডাবের পানি: নিয়মিত ডাবের পানি পান করুন। ডাবের পানি পাকস্থলিতে শ্লেষ্মা উৎপাদনে সহায়ক, যা অতিরিক্ত গ্যাস সৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পেটকে রক্ষা করে। ফলে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দূর হয়।

লবঙ্গ: পাকিস্থলিতে গ্যাস উৎপাদন প্রতিরোধ করে লবঙ্গ। প্রতিদিন দুটি লবঙ্গ চিবিয়ে খান; অম্বলের সমস্যা থেকে চিরতরে থেকে মুক্তি পাবেন।

এলাচ: এলাচ হজম ক্ষমতা বাড়াতে এবং পাকস্থলির খিঁচুনি দূর করতে সহায়ক। এটি অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণের কুপ্রভাব দূর করে। দুটি এলাচ গুড়ো করে পানিতে সেদ্ধ করে পানিটুক পান করে নিন।

 

## আপনার ডাক্তারডা. তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী

দেহঘড়ি --- পর্ব ৬_fororder_5

এ পর্বে আজ আমরা কথা বলেছি প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা Lower Urinary Tract Symptoms নিয়ে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয় প্রধানত ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের কারণে। আর পুরুষের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্রন্থির বিভিন্ন সমস্যার জন্যও এটি হতে পারে। এ ছাড়া কিডনিতে পাথর হওয়া, কিডনিতে সংক্রমণ হওয়া, যৌনবাহিত রোগ, যৌনাঙ্গে সংক্রমণ, পানিশূন্যতা — এগুলোর কারণেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী। ডাক্তার তাজকেরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক।

 

** কি খাবো, কি খাবো না

সয়াদুধ: প্রাণিজ দুধের সেরা বিকল্প

সয়াবিন ভোজ্য তেলের উৎস হিসেবে দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হলেও, নানা গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা একে একটি পুষ্টিকর খাদ্য-উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলছেন এই দুধ হৃদরোগ, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং বার্ধক্যজনিত হাড়ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সক্ষম। মস্তিষ্কের ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সয়াবিনের ভূমিকা খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। সয়াদুধকে প্রাণিজ দুধের অন্যতম বিকল্প হিসেবে রায় দিয়েছেন তাদের অনেকে।

চলুন জেনে নেই সয়াদুধের কতগুলো উপকারিতা:

প্রাণিজ দুধের বিকল্প: যাদের প্রাণিজ দুগ্ধজাত পণ্যের অর্থাৎ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা রয়েছে, তাদের জন্য সয়া দুধ একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে। এই দুধ খেলে কোনও ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয় না কিন্তু দুধের সব উপকারিতা পাওয়া যায়।

দেহঘড়ি --- পর্ব ৬_fororder_6

কোলেস্টেরল, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়: ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সয়া প্রোটিনের ভূমিকাকে বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত দিয়েছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, শরীরের জন্যে ক্ষতিকর অতিরিক্ত এলডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে যে কোনো প্রাণিজ প্রোটিনের চেয়ে সয়া প্রোটিন বেশ কার্যকরী। অন্যদিকে এটি হিতকরী কোলেস্টেরল এইচডিএলের পরিমাণ বাড়ায়। এভাবে করোনারি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সয়াবিন সাহায্য করে বলে মত গবেষকদের।

ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে: এশিয়ায় মহিলাদের স্তন ক্যান্সার ও পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের হার তুলনামূলক কম। গবেষণা বলছে, এর সাথে সয়াবিনের যোগসূত্র রয়েছে। চীনে ১৪শ স্তন ক্যান্সার রোগীর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, বয়ঃসন্ধিকালে যারা সপ্তাহে অন্তত একবার সয়াজাত দুধ খেয়েছেন, পরবর্তীতে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে গেছে। এছাড়া, ১৯৭৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পরিচালিত ১৮টি গবেষণার ফলের ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, পূর্ণবয়স্কদের মধ্যেও যারা সয়াজাত খাবারে অভ্যস্ত তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে ৪৭ শতাংশ। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, জাপানে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্তের হার অন্যা ধনী দেশগুলোর তুলনায় বিস্ময়করভাবে কম কেবলমাত্র সয়াদুধ গ্রহণের কারণে।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: সয়াদুধ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। লন্ডন কিংস কলেজের সেন্টার ফর নিউরোসায়েন্সে ছাত্রদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এর প্রমাণ পেয়েছেন।

হাড়ক্ষয় রোধ করে: অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় সমস্যা সমাধানে সয়াদুধ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৪০ গ্রাম সয়া প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার হাড়ক্ষয় প্রতিরোধের পাশাপাশি কোমরের হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত এক গবেষণা দেখা যায়, খাবারে সয়া প্রোটিনের পরিমাণ যত বেড়েছে, কোমর ও উরুর হাড়ক্ষয় তত কমেছে।

শিশুখাদ্য: জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশুর একমাত্র খাবার মায়ের দুধ। কিন্তু মায়ের অসুস্থতা কিংবা চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো কারণে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প কোনো শিশুখাদ্যের প্রয়োজন হলে সয়াবিন থেকে উৎপাদিত শিশুখাদ্যকে নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন মায়েরা। একাধিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শিশুর শারীরিক গঠনে মায়ের দুধের কাছাকাছি বিকল্প হতে পারে সয়াদুধ। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সব খাদ্য-উপাদানই রয়েছে এতে।

 

  • দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত।

 

  • তৈরি করেছেন অনুষ্ঠান:
  • রহমান, আজহার লিমন, হাবিবুর রহমান অভি, তানজিদ বসুনিয়া, রওজায়ে জাবিদা ঐশী হোসনে মোবারক সৌরভ