শহরের সাধারণ শ্রমিকের গানে ‘বসন্ত’ আছে
2021-02-26 19:38:54

৩৭ বছর বয়সী সুই সিয়াও মেং হলেন সুচৌ শহরের ‘ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে শ্রমিক শিল্প দলের’ প্রধান। এই বিশেষ শিল্প দলটি গঠন করেছে চীনের সুচৌ ও শাংহাইসহ বিভিন্ন শহরের শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে দোকানের বিক্রেতা আছে, কারখানার কর্মী আছে। দিনের বেলা তারা কারখানায় ব্যস্ত সময় কাটায়, রাতের বেলা তারা গিটার চর্চা করে ও গান পরিবেশন করে।

 

চলতি বছর চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সবের সময় করোনাভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধের জন্য সুই সিয়াও মেং এবং শিল্প দলের সদস্যরা জন্মস্থানে ফিরে যান নি। এ সময় সংগীত তাদের প্রধান বিনোদনের উপকরণে পরিণত হয়। সুই সিয়াও মেং বলেন, আমরা বিশেষ করে জন্মস্থানের জীবন বর্ণনা করে একটি লোকসংগীত তৈরি করি। এই গান আমরা ‘স্থানীয়ভাবে বসন্ত উত্সব’ পালনকারী সব সাধারণ শ্রমিককে উপহার দিতে চাই। যা এক দিকে উষ্ণতা ছড়ায়, অন্যদিকে জন্মস্থানের প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে।

 

সুই সিয়াও মেং বলেন, জন্মস্থান ত্যাগ করে বড় শহরে গিয়ে কাজ করা থেকে শুরু করা পর্যন্ত, তিনি কখনই সংগীতের স্বপ্ন ছাড়েন নি। তাঁর কথায় ‘গানের মধ্যে আমাদের বসন্ত আছে’।

১৭ বছর আগে সুই সিয়াও মেং একাই মধ্য চীনের হ্যনান প্রদেশ থেকে সুচৌ শহরে গিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁর প্রথম চাকরি ছিল একটি ইলেকট্রিক কারখানায়। সুই সিয়াও মেং স্মরণ করে বলেন, তখন প্রতিদিন ভারী ইউনিফর্ম পড়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কারখানায় কাজ করতে হতো। তখন শহরের নতুন জীবনের ভারী বোঝা তাঁর কাঁধে ছিল।

 

শহরে একাকী জীবন খুব কষ্টের। তাই এমন মর্মাহত অনুভূতি দূর করার জন্য সুই সিয়াও মেং গান রচনা শুরু করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সংগীত খুব পছন্দ করতেন। এভাবে তিনি মনে কিছুটা সান্ত্বনা পেতেন। তিনি বলেন, শুরুতে শুধু নিজেকে আনন্দ দিতে চাইতাম। তবে আমি দেখেছি যে, অনেক লোক জন্মস্থানের হাজার মাইল দূরে থেকে কাজ করেছেন, তাদের একই রকম অনুভূতি। তাদের মনের ওপর চাপও অনেক বেশি। তাই আমি তাদের কিছুটা আনন্দ দিতে চাই।

 

২০০৭ সালে সুই সিয়াও মেং কারখানা থেকে চলে যান। তিনি কফি দোকানে কাজ শুরু করেন, পানশালায় গান পরিবেশন করেন, পরে তিনি একটি পর্যটন কোম্পানিতে যোগ দেন। কাজের জন্য তিনি পুরো সুচৌ শহর ঘুরে বেড়ান এবং তার মতো সংগীতপ্রেমী অনেক সাধারণ শ্রমিক বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হন।

 

২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে, সুই সিয়াও মেং এবং তার সংগীতপ্রেমী শ্রমিক বন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে শ্রমিক শিল্প দল’ গঠন করেন।

 

সুই সিয়াও মেং-এর দৃষ্টিতে শ্রমিক শিল্প দল ব্যাপক সাধারণ ও তৃণমূল পর্যায়ের শ্রমিকের জন্য একটি মঞ্চ উপহার দিতে পারে। শহরে তাদের একাকী অনুভূতি দূর করতে পারে। সেই সঙ্গে গানের মাধ্যমে শ্রমিকদের মনের কথাগুলো জানাতে পারে, সুন্দর জীবন সম্বন্ধে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বর্ণনা করতে পারে।  

 

২০১৩ সালে শ্রমিক শিল্প দলের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন তারা জানতে পারেন যে, সুচৌ শহরে একটি শিশু লিউকোমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং তার চিকিত্সার জন্য জরুরি আর্থিক সাহায্য দরকার। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, অ্যালবাম প্রকাশের অনুষ্ঠান থেকে তাদের যা আয় হবে, সব ওই শিশুটিকে দিয়ে দেবে। এর ফলে তারা যে ১০ হাজার ইউয়ান অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন, তা ওই শিশুর চিকিত্সায় দান করেন তারা।

 

সুই সিয়াও মেং বলেন, যদিও তা সামান্য সহযোগিতা, তারপরও অন্য প্রদেশের মানুষ, আমরা এই শহরে কাজ করি, জীবনযাপন করি, আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য করতে পারি—এমন সুখের অনুভূতি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের বিষয়।

 

সুই সিয়াও মেং আরো জানান, এখন সমাজের বিভিন্ন মহলের সমর্থনে শিল্প দলটি কারখানা, কৃষক ও শ্রমিকের শিশুদের স্কুলে ৬০টিরও বেশি গণকল্যাণ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

 

সুই সিয়াও মেং বলেন, আমরা এই শহরের উন্নয়ন, সুন্দর পরিবেশ ও জীবন উপভোগ করছি, সমাজের উন্নয়নের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করছি এবং আমরা এই শহরের সুষম উন্নয়নে নিজের অবদান রাখছি।

 

সুই সিয়াও মেং বলেন, শুরুর দিকে তিনি ‘কুদর্শন হাসি’, ‘বাইরে গিয়ে চেষ্টা করা’ নামে বিভিন্ন গান রচনা করেছেন, যাতে শ্রমিকের কঠিনতা এবং বিভিন্ন স্বপ্ন বর্ণনা করা যায়। তাঁর রচিত ‘৩৬৫টি দিন’ প্রধানত জন্মস্থানে ফিরে আসার পথের আনন্দ ও দুঃখের প্রতিফলন। তাঁর রচনা করা ‘শহর আমার বাসা’ গানটি শহরজীবনে শ্রমিকদের সত্যিকারে অনুভূতি তুলে ধরেছে। সুই সিয়াও মেং বলেন, এসব গান জীবন থেকে রচনা করা হয়েছে, তা শহরে সাধারণ শ্রমিকদের জীবনের পরিবর্তন তুলে ধরতে পারে। মধ্য চীনের হ্যনান প্রদেশ থেকে সুচৌ শহরে আসার পর, তিনি একা ছিলেন, এখন তাঁর পরিবার আছে। আগে তাঁর মাসিক বেতন ছিল মাত্র এক হাজার ইউয়ান, এখন তিনি সুচৌ শহরে বাড়ি কিনেছেন, স্ত্রী পেয়েছেন, তার সুন্দর একটি ছেলেও আছে। তার মতো শিল্প দলের অনেকেই শহরে নিজের পারিবারিক জীবন শুরু করেছে এবং সুখী জীবন কাটছেন।

 

বসন্ত উত্সব পালনের পর সুই সিয়াও মেং এখন নতুন অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যস্ত আছেন। তিনি ও শিল্প দলের সদস্যরা এই বসন্তে নানচিং শহরে একটি দাতব্য কনসার্ট আয়োজন করেত চান। শিল্প দলের এত বছরে স্বপ্ন বাস্তবায়নের গল্প সবাইকে গানের মাধ্যমে জানাতে চান তিনি। সুই সিয়াও মেং আশা করেন, শহরে সুন্দর জীবনের জন্য চেষ্টা করা শ্রমিকরা আমাদের গান থেকে কিছু শক্তি ও উষ্ণতা পাবেন। আশা করি, আমাদের গান তাদেরকে সুন্দর জীবন গঠনে উত্সাহ দিতে পারে।