প্রথমে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গত এক সপ্তাহের কর্ম তত্পরতা তুলে ধরছি...
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, চীনের প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং শাংহাই শহরের নতুন চতুর্থ সেনা ইতিহাস গবেষণা সমিতির শত বছর বয়ষী প্রবীণদের একটি চিঠির উত্তর দিয়েছেন। এতে তিনি তাঁদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানান।
প্রেসিডেন্ট সি বলেন, “আপনারা তরুণ বয়সে বিপ্লবে নিজেদের একান্তভাবে নিয়োজিত করেছিলেন। সিপিসি ও জনগণের জন্য নিরলস প্রয়াস চালিয়েছিলেন। এখন আপনারা সিপিসির ইতিহাস প্রচারের জন্যও নিজেদেরকে উত্সর্গ করছেন। সিপিসির প্রতি আপনাদের ভালবাসা সত্যি প্রশংসনীয়।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সিপিসির সদস্যদের জন্য চীনা বিপ্লবের ইতিহাস হচ্ছে সবচেয়ে ভাল পাঠ্যবই। সিপিসি তার সদস্যদের পার্টির ইতিহাস শিখানোর কার্যক্রম শুরু করবে। আশা করি, পুরাতন কমরেডগণ নিজেদের বিপ্লবী অভিজ্ঞতা সংযোগ করে সিপিসির গৌরবান্বিত ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মকে জানাবেন । যাতে তারা নতুন যুগে সার্বিকভাবে আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ নির্মাণের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে পারে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতা কার্যক্রম বিষয়ক বিধিতে সই করেছেন। এ বিধি আগামী ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
‘আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতা কার্যক্রম বিষয়ক বিধি’তে চীনের প্রেসিডেন্ট উত্থাপিত নতুন যুগে চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্রের চেতনায় শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সবাই উপকৃত হওয়ার জন্য নতুন যুগে আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার কথা এতে উল্লেখ রয়েছে।
এ বিধিতে রয়েছে ৮টি অধ্যায় এবং ৪৮টি ধারা। এটি হবে চীনের সশস্ত্র বাহিনীর আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম চালানোর মূল নীতি।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ে গণ-মহাভবনে চীনের চাঁদ অনুসন্ধান অভিযান—ছাংএ্য ৫-- প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় চাঁদ থেকে আনা নমুনা ও চাঁদ অনুসন্ধান প্রকল্পও পরিদর্শন করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেছেন, চাঁদ অনুসন্ধানের চেতনা প্রচার করতে হবে, নতুন ধরনের ব্যবস্থাগত সুবিধা কাজে লাগাতে হবে, বিজ্ঞান খাতে আরও বেশি সুনাম অর্জন করতে হবে, দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে, অব্যাহতভাবে চীনের মহাকাশ চেতনার উদ্ভাবন ও উন্নয়ন জোরদার করতে হবে এবং মানবজাতির শান্তিপূর্ণ মহাকাশ ব্যবহারে নতুন ও বড় অবদান রাখতে হবে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাতাহ আল সিসির সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।
ফোনালাপে সি চিন পিং বলেন, আরব দেশসমূহের মধ্যে মিশর সর্বাগ্রে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। চীন বরাবরই মিশরকে চীনের কূটনীতিতে অগ্রাধিকারে দিচ্ছে। চীন মিশরের নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও অংশীদার। মিশরের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভূখন্ডের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে চীন।
তিনি আরও বলেন, চীন মিশরের সঙ্গে রাজনৈতিক আস্থা জোরদার, একে অপরকে সমর্থন জোরালো এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ব্যাপারে সমন্বয় জোরদার করতে ইচ্ছুক। পাশাপাশি মিশরের সঙ্গে ভ্যাকসিন সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক সমাজের মহামারি প্রতিরোধকাজ সমর্থন এবং মানব জাতির স্বাস্থ্যের অভিন্ন কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করতে চায় চীন।
এ দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট সাদির জাপারোভের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।
ফোনালাপে সি চিন পিং বলেন, চীন-কিরগিজস্তান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ২৯বছর হয়েছে। এ সময়ে দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রবণতা বজায় রেখেছে।
তিনি বলেন, দুদেশ পারস্পরিক কেন্দ্রীয় স্বার্থ রক্ষা করতে একে অপরকে সমর্থন দিয়েছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় যৌথ নির্মাণকাজও ফলপ্রসূ হয়েছে। কিরগিজস্তানের স্থিতিশীল উন্নয়ন প্রত্যাশা করে চীন।
দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রাখা এবং চীন-কিরগিজস্তানের সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত করতে ইচ্ছুক চীন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রুনেইয়ের ৩৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সে দেশের সুলতান হাজি হাসানাল বোলকিয়াহকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
অভিনন্দনবার্তায় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন ও ব্রুনেই ভালো প্রতিবেশী। দু’দেশ যৌথভাবে করোনাভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধ করেছে, যা দু’দেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কের প্রতিফলন। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৩০ বছর এবং চীন-আসিয়ান সংলাপ-সম্পর্ক স্থাপনের ৩০ বছরের সুযোগে নতুন অগ্রগতি অর্জন এবং দু’দেশের জনগণের কল্যাণ অর্জনে চেষ্টা করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন সি চিন পিং।
২. বেশ কয়েকটি দেশের নেতাদের টিকা গ্রহণ চীনা টিকার উপর তাঁদের আস্থার প্রতিফলন
বর্তমানে সেশেলস, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পেরু, চিলি ও নিরক্ষীয় গিনিসহ বেশ কয়েকটি দেশের নেতৃবৃন্দ চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেছেন। এতে চীনের টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার প্রতি তাদের আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে।
চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা বলেছেন, চীনের টিকা নিরাপদ ও কার্যকর এবং এটি মহামারীর প্রতিরোধে সক্ষম। টিকা হলো জীবন স্বাভাবিক করে তোলার আশা।
নিরক্ষীয় গিনির প্রেসিডেন্ট তেওদোরো মাসোগো বলেন, আপাতত যারা চীনের টিকা গ্রহণ করেছেন তাদের কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি। চীনের টিকা উন্নত মানের বলে উল্লেখ করেন তিনি।