২২তম শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব চলাকালে পর্তুগালের চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক লিওনেল ভিয়েরা আমন্ত্রিত হয়ে ‘গোল্ডেন গোবলেট অ্যাওয়ার্ড’ আন্তর্জাতিক শর্ট ফিল্ম ইউনিটের পর্যালোচকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের (সিআরআই) সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে চীনের তরুণ প্রজন্মের চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের প্রতি তার সুন্দর শুভ কামনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন।
লিওনেল ভিয়েরা হচ্ছেন পর্তুগালের সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজকের মধ্যে অন্যতম একজন। তাঁর নির্মিত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র পর্তুগালের চলচ্চিত্র উপভোগের প্রথম দশটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। শুধু তাই নয়, তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি শতাধিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নেন এবং ২০টিরও বেশি পুরস্কারও পান। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ত হওয়া হঠাত্ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়, বরং মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করার ফলাফল।
তিনি বলেন, ‘আমার চলচ্চিত্র পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন ১৫ বছর বয়সে শুরু হয়। আমার বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগে ভবিষ্যত নিয়ে আমার কোনো ধারণা ছিলো না। কি ধরনের পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবো এ প্রশ্ন নিয়ে আমার কোনো উত্তর ছিলো না। ১৫ বছর বয়সে গ্রীষ্মকালে রোগের কারণে আমি কোইমব্রার হাসপাতালে কয়েক মাস চিকিত্সা গ্রহণ করি। সেই সময় আমি অনেক বই পড়তাম এবং বেশ চিন্তা করতাম। এসময় আমি নিজের আগ্রহ বা ইচ্ছাও আবিষ্কার করি। চলচ্চিত্রের প্রতি আমার গভীর আগ্রহ আছে। শুধু চলচ্চিত্র উপভোগ করা, তা নয়, বরং আমি একটি চলচ্চিত্র তৈরি হওয়ার পিছনের গল্পও দেখতে চাই। চলচ্চিত্র নির্মাণের পিছনের সেই লোকদের সঙ্গে পরিচিত হতে চাই এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া সম্পর্কেও আমি জানতে চাই। তাই তখন থেকে একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তি হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই আমি।’
ভিয়েরা স্বীকার করেন, স্বপ্ন পূরণে কেবল স্বপ্ন ও প্রতিজ্ঞাই যথেষ্ট নয়। এ জন্য দরকার পদক্ষেপ নেওয়া। পদক্ষেপ গ্রহণ হলো জীবন পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমি কখনও নিজের চলচ্চিত্র স্বপ্ন পরিত্যাগ করি নি। আমি ছবি আঁকতে পছন্দ করতাম বলে একটি আর্ট স্কুলে ৪ বছর লেখাপড়া করি। তারপর নিজের চলচ্চিত্র স্বপ্নের জন্য আমি মাদ্রিদ যাই। সেখানে আমি একটি চলচ্চিত্র স্কুলের সেরা শিক্ষার্থী হয়ে উঠি। স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর আমি নিজের প্রথম পাণ্ডুলিপি রচনা করি। তারপর এই পাণ্ডুলিপিকে বেছে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এক বছর পর চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। ২০ বছর বয়সে আমি নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। এরপর একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে কাজ করা শুরু করি এবং আমার প্রথম দীর্ঘ চলচ্চিত্র শুটিং করি।’
আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামকরা একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তি হিসেবে সফল হওয়ার গোপন তথ্য নিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত প্রতিভা ও পেশাগত দক্ষতা ছাড়াও একটি ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে পুরো দলের মেধা, পরিশ্রম ও সহযোগিতা দরকার।
তিনি বলেন, ‘আমার চলচ্চিত্র জীবনে কিছু সফলতা অর্জিত হলেও আমার চলচ্চিত্র শিল্প আসলে সুষ্ঠু নয়। আমার বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ভালো বক্স অফিস অর্জন করে নি। তাই চলচ্চিত্রের সফল হওয়ার নিয়ম ও গোপন তথ্য আমি সত্যিই জানি না। তবে আমি মনে করি, একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তির প্রতিভা থাকতেই হবে। এটা হলো ভিত্তি ও পূর্বশর্ত। তারপর আপনাকে পেশাগত জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সুগভীর শৈল্পিক দক্ষতা অধিকার করতে হবে। এভাবে আপনি নিজের চিন্তা ধারণা বড় পর্দায় প্রদর্শন করতে পারেন। ছবি আঁকার চেয়ে চলচ্চিত্র ভিন্ন রকম। ছবি আঁকতে নিজের চিন্তাই যথেষ্ট। তবে একটি চলচ্চিত্র সম্পন্ন করতে দলের সকল সদস্যের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন।’
সাক্ষাত্কারে ভিয়েরা স্বপ্নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা, নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং নিজের ভবিষ্যত সৃষ্টি করতে চীনের তরুণ চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের উত্সাহ দেন। তিনি বলেন, ‘নিজের স্বপ্নকে বিশ্বাস করুন, সহজে স্বপ্ন পরিত্যাগ করবেন না। একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে এই পথ দেখা খুব কঠিন, তা সত্ত্বেও এর বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও আছে। আমার মতো সকল চলচ্চিত্র পরিচালকের সফল হওয়ার একমাত্র গোপন কারণ হলো স্বপ্ন পরিত্যাগ না করা। নিজের স্বপ্নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া অবশ্যই আরো গুরুত্বপূর্ণ।’
(লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)