আকাশ ছুঁতে চাই --- পর্ব ১০
2021-02-24 19:44:42

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।

আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি সেইসব নারীর সঙ্গে যারা তাদের জীবনে সাফল্য অর্জন করেছেন, অথবা সাফল্য পেতে চান।

 

বিশেষ প্রতিবেদন: নিংশিয়ার উদ্যমী নারী ওয়াং হাংতি

আকাশ ছুঁতে চাই  --- পর্ব ১০_fororder_1614166501(1)

লাল বেরি ফল, সরকারি উদ্যোগ আর নিজের পরিশ্রমে জীবনের গতি পালটে ফেলেন নিংশিয়ার নারী ওয়াং হাংতি। উত্তর পশ্চিম চীনের হুই মুসলিম স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল নিংশিয়া। অঞ্চলটি ছিল দারিদ্র্যপীড়িত। ২০২০সালে এই অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়। নিংশিয়ার উচোং শহরের হোংসিবু এলাকার নারী ওয়াং হাংতি। তিনি একজন উদ্যোক্তা। তিনি সরকারের দারিদ্র্যদূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত হন।

ওয়াং হাংতি বলেন, ‘আমি যখন এখানে আসি   তখন আমার কাছে এক ইউয়ানও ছিল না। কিন্তু গত বছর আমি হাজার হাজার ইউয়ান উপার্জন করেছি।’

নিংশিয়ার বিখ্যাত ফল হলো লাল বেরি। ওয়াং হাংতি একজন কৃষক ও বিক্রেতা। তিনি লাল বেরি ফলের চাষ করেন সরকারি সহায়তা নিয়ে। হোংসিবু এলাকার অনেক নারী একই সঙ্গে লালবেরি ফলের খামার গড়ে তোলেন। সরকার থেকে তাকে খামার শুরু করার অর্থ দেয়া হয়। তিনি দশ হাজার ইউয়ান সরকারি ভর্তুকি পান। নারীদের তিন বছরের জন্য সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘আগে আমি প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। এতে খুব বেশি আয় হতো না। কিন্তু যখন খামার শুরু করি তখন ভাগ্য বদলে যেতে থাকে।’

শুধু খামার গড়ে তোলা নয়। তিনি খামার থেকে সরাসরি তার পণ্য বিক্রি করার ব্যবসা শুরু করেন। পণ্য প্রসেস করার জন্যও একই সঙ্গে সুদমুক্ত সরকারি ঋণ নিয়ে প্রসেসিং কারখানা গড়ে তোলেন। সেই পণ্য তিনি বিক্রি শুরু করেন। এটি হয় আধুনিক ইন্টারনেটের সুবাদে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন খামারিদের পণ্য কিনে সেটি বাজারে বিক্রি করারও স্থানীয় সরকারি উদ্যোগ রয়েছে।

 তিনি তার এলাকার নারীদেরও এই খামারে চাকরি দেন। অনেকে নিজস্ব খামারও গড়ে তুলেছে। এজন্য তাকে সম্মাননাও দেয়া হয়েছে।

ওয়াং বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রীয় সম্মানও পেয়েছি। আমি অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছি যাতে তারা দারিদ্র্য দূর করতে পারে।’ এই ভাবে উদ্যমী নারী ওয়াং হাংতি নিজের ও অন্য অনেক নারীর জীবনে বয়ে এনেছেন সাফল্যের সোনালি ভুবন।

 

 

বিশেষ সাক্ষাত্কার: জাহিদা বেগম

আমাদের আজকের অতিথি জাহিদা বেগম। তিনি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে কর্মরত আছেন। তিনি ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের হেড অব দা ডিপার্টমেন্ট ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন।

আকাশ ছুঁতে চাই  --- পর্ব ১০_fororder_nv3

আকাশ ছুঁতে চাই  --- পর্ব ১০_fororder_nv2

জাহিদা বেগম নিজে একজন দক্ষ শেফ এবং তিনি কাজ করছেন বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠানে। তিনি শেফ প্রশিক্ষক হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন। তিনি মনোবিজ্ঞানে লেখাপড়া করেন। পর্যটন কর্পোরেশনে প্রথমে তিনি ট্যুর অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তিতে খাদ্য তৈরিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ফুড ও বেভারেজ বিভাগে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে অনেক তরুণ তরুণীকে দক্ষ শেফ হিসেবে তৈরি করেছেন। তিনি ফুড হাইজিন অর্থাত্ স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের উপরে গুরুত্ব দেন। তিনি চায়নিজ কুইজিন বানাতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘চায়নিজ কুইজিনকে আমরা অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমাদের চায়নিজ শিক্ষক আছেন। আমরা চীনা ভাষাও শিখছি।’ তিনি মনে করেন চায়নিজ পর্যটকরা যদি আরও বেশি পরিমাণে বাংলাদেশে আসেন তাহলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের আরও উন্নয়ন হবে।

তার ভবিষ্যত ইচ্ছা একটি ফুড মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন,‘বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন রকম খাদ্য রয়েছে। সেগুলো নিয়ে যদি ফুড মিউজিয়াম তৈরি করা যায় তাহলে অনেকেই এই খাদ্য আস্বাদনের সুযোগ পাবেন’।

তিনি তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি করে শেফ পেশায় আসতে উত্সাহ দেন। এই পেশায় ভবিষ্যত্ খুব উজ্জ্বল। আত্ম কর্মসংস্থানেরও সুযোগ রয়েছে। 

 

 

চীনের বিখ্যাত নারীফার্স্ট লেডি জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফাং লিইউয়ান

আকাশ ছুঁতে চাই  --- পর্ব ১০_fororder_nv4

ফাং লিইউয়ানের অনেক পরিচয়। তিনি চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের স্ত্রী এবং চায়নিজ ফার্স্টলেডি। কিন্তু সেটি তার প্রধান পরিচয় নয়। তিনি একজন প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী। বিশেষ করে চীনের লোকসংগীতশিল্পী হিসেবে তিনি বিশেষ বিখ্যাত। তিনি পিপলস লিবারেশন আর্মি একাডেমি অব আর্টের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি অল চায়না ইয়ুথ ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন দক্ষ সৈনিক এবং রাজনীতির সক্রিয় নেতাও।

ফাং লিইউয়ানের জন্ম ১৯৬২ সালের ২০ নভেম্বর শানতুং প্রদেশে। ১৯৮০ সালে ১৮ বছর বয়সে পিপলস লিবারেশন আর্মিতে যোগ দিয়ে সাধারণ সৈনিক হিসেবে জীবন শুরু করেন। কিন্তু নিজের সংগীত প্রতিভার জন্য তিনি দ্রুত পরিচিতি পান। ১৯৮২ সালে সিসিটিভির নিউইয়ার গালা অনুষ্ঠানে তিনি প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে সংগীত পরিবেশন করে দর্শকদের মন জয় করে নেন।

তিনি জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংগীত প্রতিয়োগিতায় অংশ নিয়ে অনেক পুরস্কার জয় করেন। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাদের গ্রামের মানুষ’, চোমোলাংগমা’ ‘আশার ক্ষেত্রইত্যাদি। তিনি অনেক জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালের থিম সং গেয়েছেন। তিনি মিউজিক্যাল প্রোডাকশনে অভিনয় করেন। সাদা চুলের মেয়ে প্রোডাকশনে শীর্ষভূমিকায় অভিনয়ের জন্য ১৯৮৬ সালে চীনের সর্বোচ্চ থিয়েট্রিকাল পুরস্কার পাম ব্লোজোম অ্যাওয়ার্ড জয় করেন। ১৯৮০র দশকে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং ১৯৮৭ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পরও নিজের ক্যারিয়ারে ব্যস্ত সময় কাটান ফং। রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয়।চায়নিজ পিপলস পলিটিকাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের ১১তম ন্যাশনাল কমিটির সদস্য ফং। যক্ষা ও এইচআইভি/এইডস বিষয়ক সচেতনতামূলক কাজে ২০১১ সাল থেকে জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও কাজ করছেন।

ফাং লিইউয়ান একজন বিখ্যাত ও প্রতিভাবান নারী হিসেবে চীনে দারুণ জনপ্রিয়।

 

 

ইতিহাসের পাতায় বিশিষ্ট বাঙালি নারীজননী সাহসিকা সুফিয়া কামাল

আকাশ ছুঁতে চাই  --- পর্ব ১০_fororder_nv5

 

বেগম সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি, লেখক, নারীবাদী ও নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত্ হিসেবে অতি পরিচিত ব্যক্তিত্ব। বরিশালের শায়েস্তাগঞ্জে ১৯১১ সালের ২০শে জুন জন্ম নেওয়া সুফিয়া নামের মেয়েটি দেশের মানুষের কাছে ‘জননী সাহসিকা’ হিসেবে পরিচিতি পেলেও তাঁর রয়েছে বহুবিধ বৈচিত্রপূর্ণ ইতিহাস। সুফিয়া কামালের জন্ম যে সময়ে তখন বাঙালি মুসলিম নারীদের কাটাতে হত গৃহবন্দি জীবন। স্কুল কলেজে পড়ার কোনও সুযোগ তাদের ছিল না। ওই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। তিনি পারিবারিক নানা উত্থান পতনের মধ্যে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। ১৯১৮ সালে কলকাতায় গিয়েছিলেন সুফিয়া কামাল। সেখানে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি নিজে সক্রিয় ভাবে অংশ নেন এবং এতে অংশ নেওয়ার জন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ আর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারফিউ উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়ে অগ্রণী সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ‘সৈনিক বধূ’ গল্প দিয়ে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত, ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থটি। সুফিয়া কামাল ‘একালে আমাদের কাল’ নামে একটি আত্মজীবনী রচনা করেছেন। সাহিত্যচর্চার জন্য সুফিয়া কামাল অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৭৬ সালে একুশে পদক, ১৯৯৫ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, ১৯৯৬ সালে বেগম রোকেয়া পদক এবং ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতা পদকসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন এ গুনী নারী। ১৯৯৯ সালের ২০শে নভেম্বর ঢাকায় সুফিয়া কামাল মৃত্যুবরণ করেন।

 

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফ এম ১০২ এবং চট্টগ্রামে এফ এম ৯০ মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবংআমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এ পর্যন্তই। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

 

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

শামসুন্নাহার মাহমুদ বিষয়ে লিখেছেন রওজায়ে জাবিদা ঐশী

ছবি ও অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ