গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, চীনা চলচ্চিত্রের বসন্ত উত্সবের বাজারে আয় হয়েছে ৮ বিলিয়ন ইউয়ান, যা বিশ্বে নতুন রেকর্ড। এর মধ্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারি তথা চীনা নববর্ষের প্রথমদিনে গোটা চীনে ৩ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি চীনা দর্শক হলে গিয়ে সিনেমা উপভোগ করেছেন। এতে টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ১.৭ বিলিয়ন ইউয়ান, যা চীনা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড।
পাশাপাশি, চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত ১১ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, চীনের ৩১টি প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্রশাসিত মহানগরে কোভিড-১৯ রোগে নতুন করে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছি মাত্র একজন।
বসন্ত উত্সব চীনাদের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উত্সব। এবারের বসন্ত উত্সবের ছুটিতে, মহামারীর প্রভাবে অনেক লোক ভ্রমণ এবং বাড়িতে ফেরার পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক হিসাব অনুসারে, বসন্ত উত্সব চলাকালে, গোটা চীনের ৩৬টি বড় ও মাঝারি শহরে লোকেরা ‘যে যেখানে আছেন, সে সেখানে বসন্ত উত্সব কাটান’ মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের আহ্বান মেনে চলেন। এ আহ্বানে সাড়া দেওয়া মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৮০ লাখের বেশি। গোটা চীনে ১০ কোটিরও বেশি চীনা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বসন্ত উত্সব কাটিয়েছেন।
চীনের জনসংখ্যা বিশাল। এর রয়েছে বিশাল ভোক্তা। ভোগ মানে শুধু খাওয়া, পান করা ও খেলা নয়। এবারের বসন্ত উত্সবে সিনেমা-বাজার ছিল রমরমা। মহামারীর কারণে চলচ্চিত্রজগত গত বছর মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। বসন্ত উত্সব ছুটির সময়ও সিনেমা হলগুলোর আসনসংখ্যা সীমিত রাখার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরও সব সিনেমাহলের সব টিকিট বিক্রি হয়েছে। সুতরাং, সিনেমার টিকিট বিক্রি থেকে আয় নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত ১১ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, জাতীয় খুচরা বিক্রেতা ও কেটারিং সংস্থাগুলোর সেবা ও পণ্য বিক্রির পরিমাণ হয় ৮২১ বিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮.৭ শতাংশ বেশি। অনলাইনে খুচরা বিক্রয়ের ছিল একই সময়ে ১২০ বিলিয়ন ইউয়ান। এসময় প্রায় ৪৮ কোটি প্যাকেজ লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তিন গুণ।
স্থানীয়ভাবে ভ্রমণের সংখ্যাও ছিল এবারের উত্সবের সময় অনেক বেশি। সিটিআরপি টিকিটের ডেটা থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের বসন্ত উত্সবের তুলনায় স্থানীয় অর্ডার ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। সিটিআরপি’র তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালের বসন্ত উত্সবের তুলনায় স্থানীয়ভাবে গাড়ি ভাড়ার অর্ডার ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবার।
এই বছর চীনা পঞ্জিকা অনুযায়ী ‘ষাঁড়বর্ষ’। চায়নিজ ‘রাশিচক্র’ অনুসারে, ষাঁড় হচ্ছে অধ্যবসায়, শক্তি ও সাহসের প্রতীক। শেয়ার বাজার চাঙ্গা হলে তাই বলা হয় ‘ষাঁড়ের বাজার’। নতুন বছরে চীনা অর্থনীতি উন্নয়নের সুস্পষ্ট প্রবণতা দেখাচ্ছে। গত বছরেই চীনের অর্থনীতি মহামারী মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ায় এবং বড় দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র চীনই জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। চলতি বছরও চীনা অর্থনীতিতে ৮ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আইএমএফ বলছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)